ই-পেপার শনিবার ১৮ মে ২০২৪
শনিবার ১৮ মে ২০২৪

মেট্রোরেল স্টেশনের নামে ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে গুজব
প্রকাশ: শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:২০ পিএম  (ভিজিট : ৮০০)
রাজধানীতে মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থার নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। জাতি যখন এই আনন্দে মাতোয়ারা। তখনই হঠাৎ জামায়াত-বিএনপি পরিচালিত বেশ কিছু পেজ ও প্রোফাইল থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় স্টেশনের এক ভুয়া ছবি।

যেখানে দেখা যায়, স্টেশনের গন্তব্যের ডিসপ্লেতে গন্তব্যের নাম বসানো হয়েছে ‘হিন্দি’ ও ‘ইংরেজি’ ভাষায়। এছাড়া পোস্টের সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয় উস্কানিমূলক বার্তা। 

কিছু পোস্টে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশের স্টেশনে গন্তব্যের নাম লেখা হয়েছে ইংরেজি-হিন্দিতে। কিন্তু বাংলা নেই।’

তবে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, দুইদিন আগে চালু হওয়া মেট্রোরেলের স্টেশনে ডিসপ্লেতে গন্তব্যের নাম লেখা হয়েছে ‘বাংলা’ ও ‘ইংরেজিতে’।

গুজব ছড়ানো পেজ ও প্রোফাইলগুলো ঘেঁটে দেখা যায়, এসব পেজগুলো বিভিন্নভাবে জামায়াত-বিএনপির নানা গুজব ও প্রচার প্রচারণা ছড়ানো হয়ে থাকে।

এর আগেও স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়েও নানা গুজব ছড়ানো হয়েছিল জামায়াত-বিএনপি পরিচালিত পেজ ও প্রোফাইল থেকে।

শুরুতে ছড়ায় সেতু নির্মাণে শিশুর মাথা লাগবে এমন গুজব। শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে একলাখ মানুষের মাথা লাগবে বলেও গুজব ছড়ানো হয়। গুজবে কান দিয়ে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ২১ জন গণপিটুনির শিকার হন। নিহত হয় পাঁচজন। এর মধ্যে রাজধানী বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনু (৪০) নামে এক নারীকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। নেত্রকোনায় এক শিশুকে গলা কেটে হত্যা করে ব্যাগে ভরে মাথা নিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহভাজন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। এ ছাড়া মোহাম্মাপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরেও ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে।

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘পদ্মা সেতু এই আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। জোড়াতালি দিয়ে বানানো সেতুতে কেউ উঠবেও না।’ এরপর একের পর এক পদ্মা সেতু বিরোধী মন্তব্য আসতে থাকে বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে। পাল্লা দিয়ে চলে গুজব রটনা। এসবের জেরে অর্থদাতারা প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যায়। এ সংক্রান্ত মামলায় ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় কানাডার আদালত। রায়ে বলা হয়, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ গালগপ্প ছাড়া কিছুই নয়।

নির্মাণকাজের একেবারে শেষ পর্যায়েও সেতুতে ফেরি ও লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযানের ধাক্কা নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ বছরের ২৫ জুন যাত্রা শুরু করে পদ্মা সেতু।

সেতু চালুর পরেও গুজব ছড়ায় একই চক্র। সেতু চালুর একদিন পরে (২৬ জুন) শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের রেলিংয়ের একটি নাট খুলে ফেলেন পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক কর্মী বায়েজিদ তালহা। পরে সেটি ভিডিও করে টিকটক অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাকে ঢাকার পল্টন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

ফ্যাক্ট চেকিং নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশে হরহামেশাই ছড়িয়ে পড়া গুজবের পেছনে সংঘবদ্ধ একটি গোষ্ঠী ভূমিকা রাখছে। এদের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ইন্ধন। এরমধ্যে বেশিরভাগ গুজব প্রচারের চ্যানেলের নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা ভূমিকা রাখছে।

সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, গুজব ভিত্তিক চ্যানেলগুলোর পেছনে কয়েক ধরণের লোকজন কাজ করছে। একটি সরাসরি বিএনপি জামায়াতের লোকজনেরা। আরেকটি হলো এদেরই সমর্থকগোষ্ঠী। যারা সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য দিয়ে ক্লিক বিট করে। বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখলে সকল মানুষই সেটায় ক্লিক করে তবে ভেতরে কিছুই থাকে না।

প্রতিবেদন বলছে, এসব গুজব প্রচারকারীরা বিএনপি জামাতের যারা ফটোশপ/ভিডিও এডিটিং এর কাজ সামান্য একটু জানে, সেসব নেতাকর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এ ধরণের কাজ করে।

এসব গুজব প্রচারের অন্যতম টার্গেট থাকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তারা ধর্মীয় ইমোশনকে ব্যবহার করে একদল মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। অনেকসময় তারা ইতিহাস বা সাম্প্রতিক খবরকে বিকৃত করে গুজব ছড়ায়। অনেক সময় সরাসরি মিথ্যাচার করে গুজব ছড়ায়। অনেক সময় দেখা যায় অনেক আগের কোনো ছবিকে বর্তমান সময়ে ছবি বলে চালিয়ে দেয়।

“একটা গুজব খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আর এই পোষ্টগুলো এমনভাবেই করা হয় যাতে অনেক তাড়াতাড়ি ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেটি সরানো হয় ৫/৬ ঘন্টা পর। ততক্ষণে যার ক্ষতি হওয়ার সেটা হয়েই যায়।”

এসব অপপ্রচারের একটা অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সরকারকে বিপাকে ফেলা। এর মূলে রয়েছে ধর্মীয় মৌলবাদী এজেন্ডা প্রচারের চেষ্টা। যা বাস্তবায়নে তারা পাবলিক বাসে আগুন জ্বালিয়ে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার মতো কাণ্ড করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখন তাদের অন্যতম বড় আশ্রয় গুজব। ফলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের এসব গুজব দমন ও ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ এসব গুজব শুধু সরকারের ক্ষতি করে না বরং সাধারণ মানুষের জানমালের জন্যও এটা বড় হুমকি।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close