ই-পেপার রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪
রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪

শয়তানের প্রভাবমুক্ত থাকার উপায়
প্রকাশ: শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২০ এএম  (ভিজিট : ২৯৮৮)
মানুষের ঈমান-আমল নষ্ট করার জন্য শয়তান সদা তৎপর। শয়তান নিজে যেমন চিরকালের জন্য অভিশপ্ত ও জাহান্নামি, তেমনি মানুষকেও অভিশপ্ত ও জাহান্নামে তার সঙ্গী বানানোর পাঁয়তারায় ব্যস্ত। মানুষকে আল্লাহর অবাধ্য বানানোর জন্য যত প্রকার শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রয়োজন সে আল্লাহর কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে। তাই ঈমান-আমল যেন নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং শয়তানের হামলা থেকে বাঁচার আমল শিখিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনি বলুন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি শয়তানদের সব অমঙ্গল ও অনিষ্টতা থেকে’ (সুরা মুমিনুন : ৯৭)। নবীজি (সা.) সাহাবাদের বিভিন্ন আমল শিখিয়েছেন। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো।

সুরা বাকারা পাঠ : ঘরে প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াতের আমল করা। বিশেষ করে সুরা বাকারা ও আয়াতুল কুরসি শয়তানের হামলা থেকে ঘর রক্ষা করার অন্যতম রক্ষাকবচ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের ঘরবাড়িগুলো (আমলশূন্য রেখে) কবরে পরিণত কোরো না। অবশ্যই যে বাড়িতে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে।’ (মুসলিম : ৭৮০)

আয়াতুল কুরসি পাঠ : সুরা বাকারা শয়তানের হেফাজতের আমলের জন্য যথেষ্ট। এ সুরায় বিভিন্ন আয়াত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত অন্যতম। এটাকে ‘আয়াতুল কুরসি’ বলা হয়। এই আয়াতও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শক্ত ভূমিকা রাখে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমাকে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) জনগণ থেকে সংগৃহীত জাকাত ও ফিতরার সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন (সম্পদ জমাকৃত ঘরে পাহারার দায়িত্বে অবস্থানকালে)। তিন রাতে আমি এক চোরকে আটক করলাম। বিভিন্ন অজুহাতে সে দুই রাতে ছুটে গেল। তৃতীয় রাতে সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, তোমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দেব, যা দ্বারা তোমার উপকার হবে।’ আমি বললাম, সেগুলো কী? ‘সে বলল, যখন তুমি ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে।’ তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত করা হবে। আর সকাল পর্যন্ত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। আমি ঘটনাটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা। তুমি কি জানো সে কে? সে শয়তান ছিল!’ (বুখারি : ২৩১১)

সকাল-সন্ধ্যা বিশেষ দোয়া : হজরত আবু বকর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, ‘আমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিন, যেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমি পড়তে পারব।’ নবীজি বললেন, ‘বলেন, আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরজি, আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ, রাব্বা কুল্লা শাইয়িন ওয়া মালিকিহি ওয়া আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া শাররিশ শাইতানি ওয়া শিরকিহি’, অর্থাৎ হে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা! হে দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয়ের সর্বজ্ঞানী! হে সব জিনিসের প্রভু ও অধিপতি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার নফসের ও শয়তানের অনিষ্টতা ও শিরক থেকে।’ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এবং যখন বিছানায় শুইতে যাবে তখন এটি পাঠ করবে। তাহলে তুমি শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। (তিরমিজি : ৩৩৯৩) 

টয়লেটে প্রবেশে দোয়া : বাথরুম-টয়লেটে শয়তান ওত পেতে থাকে। মানুষের মনে বিভিন্ন কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে। তাই বাথরুম-টয়লেটে প্রবেশের সময় দোয়া পড়ে ঢোকা। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এসব মলমূত্র ত্যাগের স্থানে শয়তানের উপস্থিতি থাকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন মলমূত্র ত্যাগের স্থানে প্রবেশের ইচ্ছা করে, তখন সে যেন বলে, ‘আউজুবিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবায়িস’, অর্থাৎ ‘আমি আল্লাহর কাছে নারী-পুরুষ উভয় শয়তানের খারাপি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ : ৬)

হাই রোধ করা : মানুষ যখন ইবাদত বা ভালো কাজে লিপ্ত হয় তখন শয়তান হাই তুলতে সহায়তা করে। তাই এ সময় হাই রোধ করা ও ইসতেগফার পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হাই আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং কারও যখন হাই আসে, সে যেন তা প্রতিহত করতে চেষ্টা করে। কারণ কেউ যদি হাই তুলে ‘হা’ বলে, তবে শয়তান তা দেখে হাসতে থাকে’ (বুখারি : ৬২২৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কারও যদি হাই আসে, তবে তার হাত দিয়ে যেন মুখ চেপে ধরে, কারণ শয়তান ভেতরে প্রবেশ করে।’ (মুসলিম : ২৯৯৫)
ঘরে প্রবেশকালে জিকির : ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করা। এতে শয়তান থেকে দূরে থাকা সহজ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে, ‘তোমাদের রাত যাপন ও রাতের আহারের কোনো ব্যবস্থা হলো না।’ কিন্তু কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত যাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহারের ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল।’ (মুসলিম : ২০১৮; আবু দাউদ : ৩৭৬৫) 

শয়তানকে গালি না দেওয়া : অনেকে শয়তানকে গালমন্দ করে থাকে। এটা অনুচিত। কারণ শয়তানকে গালি দিলে তার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। হজরত আবু মালিহা (রহ.) বলেন, একজন সাহাবি আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘একদিন আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে একই উটের পিঠে আরোহণ করলাম। এমন সময় উট লাফালাফি করতে থাকলে আমি বললাম, শয়তানের সর্বনাশ হোক।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি বোলো না শয়তানের সর্বনাশ হোক! কেননা এমন বললে শয়তান আত্মগৌরবে ফুলে উঠে ঘরের সমান হয়ে যায় এবং বলতে থাকে আমি খুবই শক্তিমান। তুমি আল্লাহর নাম নেবে। কারণ এমন সময় যদি আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তবে সে আস্তে আস্তে ছোট হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ : ৪৯৮২)




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close