ই-পেপার শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সিপিডির সংবাদ সম্মেলন
অর্থ পাচারকারীদের জয়, গরিবের জন্য কিছু নেই
প্রকাশ: শনিবার, ১১ জুন, ২০২২, ৯:০০ এএম  (ভিজিট : ৭০৪)
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ধনী ও অর্থপাচারকারীদের জয় হয়েছে, গরিবের জন্য তেমন কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে যাদের টাকা-পয়সা আছে, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী, যারা টাকা পাচার করে; এই শ্রেণির জয় হয়েছে। গরিবের জন্য বাজেটে তেমন কিছু নেই। সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছে মধ্যবিত্ত।

শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩, সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তৌফিকুল ইসলাম খান। এতে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, যারা ধনী এবং অবৈধভাবে টাকা নিয়ে গেছেন, এই বাজেটে তাদের জয় দেখা যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তেমন কিছু আসেনি। বরং বাজেটে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার রোধে তেমন পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

তিনি বলেন, সরকার ধরেই নিয়েছে করোনা চলে গেছে। করোনার সামগ্রীর ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। কোনো কারণে করোনা মহামারি আবার ফিরে এলে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা করবে। এই মুহূর্তে ল্যাপটপের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ সময় বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। চাল, ডালসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দরকার ছিল, কিন্তু করা হয়নি। সিপিডির পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে কর কমানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটিও রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি রয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী এক বছরে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমবে? কারণ, পৃথিবীর অনেক দেশ অর্থনৈতিক মন্দায় চলে যাবে। তাহলে কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমবে, এটাই বড় প্রশ্ন।

ড. ফাহমিদা বলেন, বর্তমানে জনজীবনের ওপর চাপ রয়েছে। বাজেটে প্রত্যাশা ছিল নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে, কিন্তু দেওয়া হয়নি। উল্টো বিত্তবানদের কর কমানো হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট যে লক্ষ্য নিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে তা পূরণে নেওয়া পদক্ষেপগুলো পরিপূর্ণ নয়। নীতিকৌশলের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ অসম্পূর্ণ এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তা অপর্যাপ্ত।

তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে অর্থ আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ অনৈতিক। আর একটি বিষয় হচ্ছে, এটা কখনই বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তার চেয়ে বড় কথা হলো, এটা অনৈতিক। একদিকে অর্থপাচারের সুযোগ দিয়ে আবার অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেব; অন্যদিকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য করছাড় থাকবে না- এটা সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বর্তমানে জনজীবনের ওপর চাপ বেড়েছে। বাজেটে প্রত্যাশা ছিল নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে, কিন্তু দেওয়া হয়নি। উল্টো বিত্তবানদের কর কমানো হয়েছে। যেসব মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে, তারা কীভাবে আগের জায়গায় ফিরতে পারবে, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা নেই বাজেটে।

তিনি বলেন, বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ ছয়টি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী নিজেই। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, অর্থমন্ত্রী রোগ চিহ্নিত করেছেন ঠিকই; কিন্তু সেই রোগ সারাতে ওষুধ ঠিকমতো হয়নি। নতুন বাজেট যে লক্ষ্য নিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে তা পূরণে নেওয়া পদক্ষেপগুলো পরিপূর্ণ নয়। নীতিকৌশলের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ অসম্পূর্ণ এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তা অপর্যাপ্ত।

বাজেটে অর্থমন্ত্রী পাচার হওয়া টাকা সাড়ে সাত শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগের প্রস্তাব করেন। প্রথমবারের মতো পাচারকারীদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সাড়ে সাত শতাংশ কর দিয়ে টাকা আনলে দেশের অন্য কোনো আইনে তাকে প্রশ্ন করা হবে না। এ বিষয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর আগেও দেখা গেছে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খুব কমসংখ্যকই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছে। এবার পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে টাকা আরও পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক তিনভাবেই অগ্রহণযোগ্য।

ব্রিফিংয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগকে সৎ করদাতাদের জন্য চপেটাঘাত। এটি শুধু সুযোগই নয়, ওই ব্যক্তির জন্য দায়মুক্তিরও সুযোগ। সরকার এই সিদ্ধান্ত নেবে না এবং এখান থেকে সরে আসবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

/আরএ


আরও সংবাদ   বিষয়:  সিপিডি   বাজেট  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close