ই-পেপার শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হৃদয় হত্যা: আহাজারি থামছে না বাবা-মায়ের
প্রকাশ: বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৪:১৮ এএম  (ভিজিট : ৪৮৩৬)
শিবলী সাদিক হৃদয় (১৬) কলেজে পড়ত। তাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। তা আর পূরণ হবে না। ১৩ দিন আগে নিখোঁজ হওয়া হৃদয় ফিরে আসবে-এই আশায় ছিলেন তার মা নাহিদা আকতার। তবে ছেলের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে থামছে না তার আহাজারি। 

মঙ্গলবার সকালেও তার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুরের পঞ্চপাড়া গ্রামে হৃদয়দের প্রতিবেশীরাও শোকার্ত। এমন নির্মমতায় ছেলে হারানো মাকে কী বুঝ দেবেন তারা! বাকরুদ্ধ হৃদয়ের বাবা মো. শফিক ড্রাইভারও। রাস্তার পাশে বসে নীরবে চোখের পানি ফেলছিলেন। কান্নায় ধরে আসা কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার পরিবারে হৃদয় ছিল আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। তাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম। অনেক বড় স্বপ্ন! কিন্তু পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা আমার পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।

শিবলীর চাচা নাজিম উদ্দিন বলেন, আমার ভাই (হৃদয়ের বাবা) শফিক পিকআপ-ভ্যান চালায়। পড়াশোনার খরচ জোগাতে ভাতিজা এলাকার একটি মুরগির খামারে কাজ নেয়। সেখানেই রাতে থাকত সে। পড়ালেখা করে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল হৃদয়ের। এখন তো সবশেষ। 
হৃদয়ের বন্ধু আরিফ বলে, পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী ছিল হৃদয়। বাবার আর্থিক অভাবের কারণে খামারে চাকরি করে পড়ালেখার খরচ জোগাত। আরেক সহপাঠী আবদুর রহমান বলেন, এমন নৃশংস হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি চাই।

প্রতিবেশী অনেকে জানান, সন্তান হারিয়ে থামছে না মা নাহিদা আকতারের আহাজারি। কাফনে মোড়ানো ছেলের খণ্ডিত লাশ পর্যন্ত দেখার সুযোগ হয়নি তার। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় দূরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিলেন শুধু। তারা জানান, হৃদয় কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি মুরগির খামারে কাজ করত। যা রোজগার করত তা সংসারে জোগান দিত। তার ছোট ভাইটিও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।

মা নাহিদা আকতার জানান, গত ২৭ আগস্ট নিজ গ্রাম পঞ্চপাড়ার মুরগির খামার থেকে নিখোঁজ হন হৃদয়। দুই দিন পর অজ্ঞাত স্থান থেকে হৃদয় মায়ের সঙ্গে কথা বলে। ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে তার মায়ের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে দুর্র্বৃত্তরা। ২ লাখ টাকা দিতে রাজি হন বাবা। ১ সেপ্টেম্বর তার বাবা শফিক অপহরণকারীদের কথামতো পার্বত্য বান্দরবানের সদর এলাকায় দুজন লোকের কাছে ২ লাখ টাকা দেন। এরপর অজ্ঞাত ওই দুই ব্যক্তি জানায় হৃদয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং সে বাসায় ফিরবে। কিন্তু হৃদয় আর বাড়ি ফেরেনি। হৃদয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে অপহরণকারীরা।

রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, অপহরণের ১৪ দিন পর রাউজানের কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়ের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার সকাল ১০টার দিকে কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। হৃদয় কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিল।

পুলিশ জানায়, হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয় তার বাড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে রাঙামাটি উপজেলার কাউখালী ইউনিয়নের দুর্গম বালু পাহাড় থেকে। সেখানে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। পুলিশের সঙ্গে যাওয়া হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা দেহাবশেষ শনাক্ত করেন পরনের প্যান্ট ও গেঞ্জি দেখে। লাশ নিয়ে ফেরার পথে হৃদয় খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে থাকা উমংচিং মারমা নামে এক যুবককে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনিতে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। এ সময় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও।

হৃদয় যে খামারে চাকরি করত সেখানে আরও চার তরুণ যুবক কাজ করত। কিছুদিন আগে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হৃদয়ের সঙ্গে তাদের ঝগড়া হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর অপহরণের মামলা নেয় পুলিশ। এরপর ওই মামলার ৫ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া সবাই হৃদয়ের সঙ্গে একই মুরগির খামারে কাজ করত বলে পুলিশ জানায়। 

পুলিশ আরও জানায়, হৃদয় অপহরণের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার নগরের চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে উমংচিং মারমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার তথ্যমতে সোমবার ভোরে দুর্গম কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় অভিযানে গিয়ে হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে হৃদয়ের হত্যার কথা স্বীকার করে উমংচিং মারমা।

গণপিটুনিতে নিহত উমংচিং মারমা ছাড়াও গ্রেফতার অন্য আসামিরা হলো রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ির সুইংচিং মং মারমা (২৪), একই জেলার কাউখালীর বেতবুনিয়া ইউনিয়নের সাপমারা গ্রামের অংথইমং মারমা (২৫) ও আছুমং মারমা (২৬) ও উক্য থোয়াইং মারমা (১৯)। গণপিটুনিতে নিহত অপহরণ মামলার আসামি উমংচিং মারমা রাঙামাটি উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের রঙ্গিপাড়া গ্রামের উথোয়াইমং মারমার ছেলে।



সময়ের আলো/আরএস/




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close