ই-পেপার বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫
বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫

নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকবে ‘আবু সাঈদের ২০ ফুট দীর্ঘ ভাস্কর্য’
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫, ৬:৫২ পিএম  (ভিজিট : ১৬০)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভে রংপুরে সহিংসতায় নিহত ‘আবু সাঈদের ২০ ফুট দীর্ঘ’ একটি ভাস্কর্য থাকছে। দুই হাত প্রসারিত ও বুক টান করে দাঁড়ানোর দৃশ্যটি ইতিমধ্যে বীরত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সেই দৃশ্য ভাস্কর্যে তুলে আনা হবে বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রায়।

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম শেখের বরাতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে।

চারুকলা অনুষদের ডিন জানান, এ শোভাযাত্রা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। এবার প্রাথমিকভাবে বড় আকারের চারটি ভাস্কর্য রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকবে ‘২০ ফুট দীর্ঘ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য’। আরও থাকবে স্বৈরাচারের প্রতীকী ভাস্কর্য।

এছাড়াও শোভাযাত্রায় বড় আকারে রাজা-রানির অন্তত চারটি মুখোশ, বাঘ, প্যাঁচা, পাখি, ফুল এসবের শতাধিক মুখোশ থাকবে।

১৯৮৯ সাল থেকে চারুকলা পয়লা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’।


জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। তবে এবার শোভাযাত্রার নাম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থাকবে কি না, তা নির্ধারিত হয়নি।

এ শোভাযাত্রা ছাড়াও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে থাকছে আরও আয়োজন। মন্ত্রণালয় বলছে, প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে এ আয়োজন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় দুই দিন ধরে চলবে অনুষ্ঠান। থাকবে কনসার্ট, ড্রোন শোসহ বেশ কিছু কর্মসূচি।

বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন কর্মসূচি নিয়ে সোমবার (২৪ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অংশীজনদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান। এতে যোগ দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম শেখ বলেন, এবারের নববর্ষ উদ্‌যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান”। চারুকলা অনুষদ বরাবরের মতোই শোভাযাত্রার মূল আয়োজন করবে। এতে দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তারা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপাদানগুলো নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে তারা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।


তিনি আরও জানান, শোভাযাত্রা কোন পথে যাবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা থাকবে, না পরিবর্তন করা হবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনে আরও সময় আছে, তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সোমবার অনুষদ চত্বরে দেখা যায় শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কাজ চলছে। জয়নুল গ্যালারিতে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। প্রাক্তন শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন কাজের তদারক করছিলেন। তিনি জানান, বড় আকারে রাজা-রানির মুখোশ থাকবে অন্তত চারটি। এ ছাড়া থাকবে প্যাঁচা, পাখি, ফুল—এসবের শতাধিক মুখোশ। গ্যালারির সামনে জলরঙের ছবি আঁকছিলেন শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা। নকশা আঁকছিলেন মাটির সরায়। এগুলো সুলভে বিক্রি করে শোভাযাত্রার খরচ মেটানো হবে।

গত রোববার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছিলেন, এবার প্রথমবারের মতো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান হবে দুই দিন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তিতে কনসার্ট আয়োজন করা হবে। এতে মাইলস, ওয়ারফেজ, দলছুট, এভোয়েড রাফা, ভাইকিংস ও স্টোন ফ্রি ব্যান্ড দল এবং বাউল-ফকিরেরা সংগীত পরিবেশন করবেন। আর পয়লা বৈশাখে সন্ধ্যায় চীন সরকারের সহযোগিতায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পয়লা বৈশাখ ও জুলাই বিপ্লব নিয়ে হবে ড্রোন শো।

ষাটের দশকে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের হাত ধরে। এবারও রমনার বটমূলে প্রভাতি সংগীতানুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে ছায়ানট।


এ বিষয়ে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক পার্থ তানভীর নভেদ জানান, অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ও গান নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলক গানের নিয়মিত মহড়া চলছে। এতে শতাধিক শিল্পী অংশ নেবেন। এ ছাড়া ২টি পাঠসহ প্রায় ১৫টি একক গান থাকবে।

সংগীত সংগঠন সুরের ধারাও পয়লা বৈশাখ সকালে সহস্রকণ্ঠের সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। তাদের অনুষ্ঠান হয় পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠের পাশে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোনে সুরের ধারার পরিচালক শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জানান, তাদের বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে। এবারেও সহস্রকণ্ঠের গান হবে। তবে অনুষ্ঠানের স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি।

এ ছাড়া নববর্ষের আরেকটি প্রধান সংগীতানুষ্ঠান হয়ে থাকে শিশু একাডেমির সামনে নারকেল বীথি চত্বরে। বিশিষ্ট গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে এ সংগীতানুষ্ঠান শুরু হয়। এবারও ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী এ অনুষ্ঠান করছে। ঋষিজের সহসভাপতি শিল্পী ফকির সিরাজ জানান, এবারও তারা নারকেল বীথিতে প্রভাতি অনুষ্ঠান করবেন। তাদেরও গানের মহড়া চলছে।

এছাড়া এবার প্রথমবারের মতো পয়লা বৈশাখে বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।


আরও সংবাদ   বিষয়:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়   মোস্তফা সরয়ার ফারুকী   ভাস্কর্য   উপদেষ্টা   বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন   মঙ্গল শোভাযাত্রা  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close