ই-পেপার মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫
মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫

ঈদ ঘিরে নীরব চাঁদাবাজি
প্রকাশ: সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ১২:০৬ এএম  (ভিজিট : ১৮২৮)
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

প্রায় ১ হাজার ৮০০ দোকান রয়েছে রাজধানী সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটে। মার্কেট দুটির চারিদিকের ফুটপাথ ও দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে আট শতাধিক অস্থায়ী দোকান। ঈদ সামনে রেখে এসব দোকানের আকার অনুযায়ী ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা করে চাঁদা চাওয়া হয়েছে। ঈদের ৩ দিন আগে লোকজন এসে টাকা নিয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে। চাঁদা না দিলে শেষ তিন দিন দোকান খুলতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দিয়েছে। কারণ যারা চাঁদা চেয়েছে তারা পুরোনো চিহ্নিত চাঁদাবাজ। এ অবস্থায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ী মুখ না খুললেও চাঁদামুক্ত হতে চান তারা। কারণ দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও যদি চাঁদাবাজরা চাঁদা নিতে পারে, তা হলে ভবিষ্যতে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

শুধু রাজধানী সুপার মার্কেট নয়, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও ফুটপাথের দোকানগুলোতে নীরবেই চলছে চাঁদাবাজি। কোথাও রসিদ দিয়ে ঈদ উৎসবের টাকা চাওয়া হয়েছে, কোথাও অস্ত্র প্রদর্শনের পর চাঁদাবাজ গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত ঈদগুলোতে যেভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসী, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের নামে বকশিশ তোলা হতো, এবার সে রকমভাবে চাঁদাবাজি নেই। বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বের হওয়ার পরও তাদের তৎপরতা নেই বললেই চলে। আর ফুটপাথে অবৈধ দোকান ঘিরে নীরবে যে চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলোতে চাঁদাবাজ ও ব্যবসায়ী, উভয় পক্ষই লাভবান থাকেন কোনো না কোনোভাবে। ফলে পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ করেন না, আবার পুলিশ জানতে চাইলেও কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না। এরপরও পুলিশ চাঁদাবাজদের ঠেকাতে তৎপর রয়েছে।

গত বুধবার রাজধানী সুপার মার্কেটে গিয়ে কথা হয় একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যবসায়ীরা সময়ের আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আজমল হোসেন বাবুল, তার ছেলে বিপ্লব, বাবুলের ভাগিনা টিটু রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় তারা এবং তাদের সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও চাঁদাবাজি থেমে থাকেনি। পট পরিবর্তনের পর চক্রটি গাঢাকা দিলে সবাই সাময়িকভাবে হাফ ছেড়ে বাঁচে। কিন্তু আগে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলেও এবার ঈদ সামনে রেখে নিজেদের নামে চাঁদা চেয়ে গেছেন বিপ্লব ও টিটু। ঈদের ৩ দিন আগে চাঁদার টাকা রেডি রাখতে বলা হয়েছে।

আগেও প্রতি বছর ঈদে একই পরিমাণ টাকা ঈদ বকশিশ হিসেবে দিয়ে আসায় ব্যবসায়ীরাও বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করতে চাচ্ছেন না। তবে এ চাঁদাবাজ চক্রের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান তারা। এ বিষয়ে গত ১৮ জানুয়ারি বাবুল, বিপ্লব, টিটু, বাবুলের ভাই সেন্টুদের অপকর্ম উল্লেখ করে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সেল ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরে অভিযোগও জমা দেন ব্যবসায়ীরা। এরপরও এ চাঁদাবাজ চক্রের বিপ্লব ও আশরাফ উদ্দিন টিটু আগের মতোই বেপরোয়া রয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বিপ্লব ও টিটুর সহযোগী রনি, সাইদ মোল্লা, দ্বীন ইসলাম ও হুমায়ুন এ চক্রে সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর ওয়ারী থানার ওসি ফয়সাল আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের কাছে কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করেননি। আমাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমেও এমন কোনো তথ্য পাইনি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা কথা বলে দেখছি। যদি কেউ চাঁদা চেয়ে থাকে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাজধানীর নিউমার্কেটের বিভিন্ন ফুটপাথ, গাউছিয়া মার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, উত্তরার আজমপুর এলাকার ফুটপাথ, মিরপুরের বিভিন্ন মার্কেট, ৬০ ফিট রোডের বিভিন্ন দোকান, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, গুলিস্তান, শান্তিনগর, মতিঝিল ও পল্টনের বিভিন্ন মার্কেটে নীরবে চাঁদাবাজির খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৬০ ফিটের এক ব্যবসায়ী মিরপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। থানা পুলিশ, চাঁদা প্রতিরোধে ৬০ ফিটের সব ব্যবসায়ীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরার্মশ দিয়েছে। এরপরও কোনো চাঁদাবাজ চাঁদা দাবি করলে তাকে আটকিয়ে থানায় খবর দিতে বলা হয়েছে। চাঁদনী চক মার্কেটে চাঁদা তোলা হচ্ছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। প্রিমিয়ার ট্রেডিং হাউস বিদ্যুৎ কমিটির রসিদে ঈদ উৎসব খরচ বাবদ দোকানপ্রতি ৭০০ টাকা করে তোলা হচ্ছে।

চাঁদনী চকের ব্যবসায়ীরা সময়ের আলোকে বলেন, চাঁদনী চক মার্কেটে ১২ শতাধিক দোকান রয়েছে। বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে দোকান প্রতি ৭০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিনিময়ে কোনো চাঁদাবাজ দোকান মালিকদের কাছে চাঁদা চাইবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জুয়েলারি দোকানি সময়ের আলোকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে ৩০০-৫০০ টাকা নেওয়া হতো। গত বছরও ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। এ বছর ৭০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে এ চাঁদাকে বলা হচ্ছে ঈদ উৎসব খরচ। কেউ যদি তাদের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে, তা হলে স্টাফ বেতনসহ বিভিন্ন খরচ সামনে আনা হয়। মূলত এটি ঈদের চাঁদা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদনী চক বিজনেস ফোরাম ও চাঁদনী চক বণিক সমিতি দুটি সংগঠন রয়েছে মার্কেটটিতে। আগে বিজনেস ফোরামের আওয়ামী নেতারা এ চাঁদা নিতেন। পট পরিবর্তনের পর ওই নেতারা দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় বিজনেস ফোরাম সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে বণিক সমিতির নির্দেশে বিদ্যুৎ বিলের রসিদের সঙ্গে ঈদ উৎসব ভাতা তোলা হচ্ছে।

রাজধানীর তেজগাঁও থানার একটি সূত্র জানিয়েছে, কারওয়ানবাজারে বিগত সময়ে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি হতো। কিন্তু বর্তমানে চাঁদাবাজি ঠেকাতে পুলিশ প্রতিদিন মাইকিং করেও সতর্ক করছে। গত ১১ মার্চ শান্তিনগর এলাকা থেকে পিস্তলসহ গ্রেফতার হওয়া মো. নুরুজ্জামান বিপ্লব শান্তিনগরের মার্কেটগুলোতে ঈদকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চাঁদাবাজি বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হুসাইন মোহাম্মদ ফারাবি সময়ের আলোকে বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম মার্কেটে মানুষের আনাগোনা বেশি থাকে। ফলে এ এলাকা দুটিতে ফুটপাথে বেশি দোকান বসে। আমরা বিভিন্ন সময় তাদের উচ্ছেদ করার কিছুদিন পর তারা আবার দোকান বসায়। এ অস্থায়ী দোকানদারদের কাছ থেকে দৈনিক বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে চাঁদা নেওয়া হয়। ঈদের আগে চাঁদার হার বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কে বা কারা নিচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো দোকানি মুখ খোলেন না। কারণ এ চাঁদাবাজিতে চাঁদাবাজ ও দোকানি উভয়ই লাভবান হয়। এর বাইরে যেকোনো সময়ের রোজার তুলনায় চাঁদাবাজির ঘটনা খুবই কম। নীরবে যেটুকু চলছে, ব্যবসায়ীরা আমাদের তথ্য দিলে সেটুকুও থাকবে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধে রোজার শুরু থেকেই পুলিশি টহল ও প্যাট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর ৫০টি থানাকেই কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ বছর এখন পর্যন্ত আমরা চাঁদাবাজদের উৎপাতের খবর পাইনি। ঈদের আর মাত্র অল্পকিছুদিন বাকি। এ সময়ে কেউ চাঁদাবাজির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close