
জাকাত ইসলামের একটি ফরজ বিধান। জাকাত আদায় করলে যেমন সওয়াব রয়েছে, তেমনি অবহেলা করলে রয়েছে কঠিন শাস্তি। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা স্বর্ণ-রুপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (আর তাদের বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে। কাজেই তোমরা যা জমা করেছিলে, তার স্বাদ ভোগ করো’ (সুরা তওবা : ৩৪-৩৫)।
জাকাত অর্থ পবিত্র করা বা পরিশুদ্ধ করা। অর্থাৎ কোনো মুসলমান আল্লাহ নির্ধারিত (নিসাব) পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকলে নির্ধারিত পরিমাণ অংশ হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়াকে জাকাত বলা হয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে এটি পঞ্চম।
জাকাত প্রতি বছর একবার করে দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে আমাদের দেশে ঈদুল ফিতরের আগে যার ওপর জাকাত দেওয়া ফরজ হয়েছে তিনি তার এলাকার গরিব-মিসকিন এবং আত্মীয়স্বজনদের মাঝে তার সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ বিলিয়ে দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদকে পরিশুদ্ধ করেন।
কিন্তু ইদানীং সমাজে জাকাতের নামে নিম্নমানের কাপড় দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে জাকাত হিসেবে লুঙ্গি এবং শাড়ির প্রচলনটা বেশি রয়েছে। দেখা যায় সমাজে একশ্রেণির মানুষ বাজারে গিয়ে জাকাতের পোশাক হিসেবে সবথেকে কম দামি লুঙ্গি এবং শাড়ি কিনে এনে জাকাত দিচ্ছে। নিজেদের গচ্ছিত মালামাল পরিশুদ্ধ করতে গিয়ে গরিব-অসহায় মানুষদের সঙ্গে একপ্রকার প্রতারণা করছে। যা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না।
রমজানে অধিকাংশ মানুষ জাকাত আদায় করে থাকে। কিছু কিছু বিপণিকেন্দ্রে বড় বড় সাইনবোর্ডে লেখা দেখা যায়, ‘এখানে জাকাতের কাপড় পাওয়া যায়।’ সমাজের একশ্রেণির মানুষ কম দামে নিম্নমানের এসব কাপড় কিনছে। অনেকেই তো বাজারে গিয়ে নির্দিষ্ট করে সস্তা দামে জাকাত দেবে বলে প্রকাশ্যে কাপড় খুঁজছে। মানুষের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের কতটুকু অবক্ষয় হয়েছে তা এ থেকেই অনুমেয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কস্মিনকালেও তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় না করো। আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন’ (সুরা আলে ইমরান : ৯২)।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু মানুষের জাকাত শুধু লোক দেখানো হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাদের এ ইবাদত পালন হচ্ছে না। বর্তমানে এই শ্রেণির মানুষকে দেখে দেখে এই পক্ষের লোকের সংখ্যা বাড়ছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই দুঃখজনক।
জাকাত সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেরা যে পবিত্র ধনসম্পদ উপার্জন করছ এবং জমি থেকে যে ফসল আমি তোমাদের দান করেছি এসব কিছু থেকে তোমরা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করো’ (সুরা বাকারা : ২৬৭)। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকের ওপর জাকাত ফরজ হলেও তারা তা বিভিন্ন অজুহাতে তা দিচ্ছে না। এর ফলে একদিকে যেমন গরিব অসহায়রা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে মহান আল্লাহ অখুশি হচ্ছেন। আর যারা দিচ্ছেন তাদের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে জাকাতের নামে নিজেদের প্রচার চালাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে জাকাত ইসলামের মৌলিক একটি বিষয়। যার ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, সে জাকাত না দিলে গুনাহগার হবে। জাকাতের মধ্য দিয়েই নিজেদের মালামাল পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি আর্থিক ও নৈতিক সক্ষমতা অর্জন হবে।