ই-পেপার সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫

কেনাকাটায় যেন ম্লান হয় রমজানের মাহাত্ম্য
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ৫:২৩ এএম আপডেট: ২৩.০৩.২০২৫ ২:৪৬ পিএম  (ভিজিট : ১৫৮)
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

আমরা পবিত্র রমজান মাসের রহমত-বরকতের দুই দশক পেরিয়ে শেষ দশক অতিবাহিত করছি।

পাপ মোচনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো হারিয়ে যাচ্ছে কর্পূরের মতো। যাপিত জীবনের পাপ মোচনের আগেই যদি রমজানের বেলা ফুরিয়ে যায় হেলায়-ফেলায়, তা হলে এ জীবন ব্যর্থ। মাহে রমজান গুনাহ মাফ এবং মাগফিরাত লাভের মধ্য দিয়ে চিরশান্তি ও চিরমুক্তির একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয় মুমিনের জীবনে। ইবাদতের বসন্ত মাসের শেষ সময়টা বিশেষ প্রাপ্তির। অথচ ঈদের কেনাকাটা, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে ফেরা ইত্যাকার নানা ব্যস্ততায় যেন খুঁইয়ে ফেলি প্রাপ্তি ও অর্জনের সময়গুলো। ঈদের কেনাকাটা ও প্রস্তুতির জন্য অনেকে খোদ রোজাকেই বিসর্জন দিচ্ছে। নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াতের কোনো খবর নেই। ইফতারের কোনো গুরুত্ব নেই। 

শপিংমলে অহেতুক দীর্ঘ সময় ব্যয় করা হচ্ছে। এ-শপিং থেকে ও-শপিংয়ে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়ানো হচ্ছে। রমজানের আসল মুহূর্ত হচ্ছে শেষ দশক। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও ক্ষমা প্রার্থনার বিশাল আয়োজন এ দশকে। অথচ অনেকেই ঈদ প্রস্তুতির জন্য এ দশকটা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় শপিংমলে কাটিয়ে দিচ্ছে। রমজানের শুরুতে যে ভাবগাম্ভীর্যতা সবার মাঝে দেখা যায়, শেষ দশকে এসে তা এতটাই বিলীন হয়ে যায়-অনেকের আচরণ দেখে মনেই হয় না এটি রমজান। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষ্য মতে-‘যে রমজান পেল, অথচ গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না, সে চরম হতভাগা।’ (আবু ইয়ালা, ফিকহুস সুন্নাহ)

অনেকে তো রমজান আসার আগেই ঈদের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। মনে রাখতে হবে, ঈদ রোজাদারের জন্য, রোজাদার ঈদের জন্য নয়। ঈদের দিন সকালে আল্লাহ তায়ালা রোজাদারের ক্ষমা ঘোষণা করেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘শবে কদরে জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের একটি জামাতসহ অবতরণ করেন। যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে, বসে আল্লাহর জিকির করতে থাকে বা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে তার জন্য রহমতের দোয়া করেন। অতঃপর যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের সামনে বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগি নিয়ে গর্ব করেন। 

কারণ ফেরেশতারা মানুষকে দোষারোপ করেছিল (অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষ প্রেরণকালে আপত্তি জানিয়েছিল)। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা জিজ্ঞাসা করেন, হে ফেরেশতারা! যে মজদুর নিজ দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে তার বদলা কী হতে পারে? ফেরেশতারা আরজ করেন, হে আমাদের রব! তার বদলা এই যে, তার পারিশ্রমিক তাকে পরিপূর্ণ দিয়ে দেওয়া হোক। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ফেরেশতারা! আমার বান্দা-বান্দিরা আমার ফরজ হুকুম (রমজান মাসের রোজা) পালন করেছে।

এরপর তারা ঈদগাহের দিকে যাচ্ছে। আমার ইজ্জতের কসম, আমার প্রতাপের কসম, আমার দানশীলতার কসম, আমার বড়ত্বের কসম, আমার সুউচ্চ মর্যাদার কসম! আমি তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি লক্ষ করে বলেন, যাও! আমি তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দিলাম এবং তোমাদের গুনাহগুলোকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। অতঃপর তারা ঈদগাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।’ (বায়হাকি)

ঈদের প্রস্তুতি নিতে হবে, তবে খেয়াল রাখতে হবে, রমজানের উদ্দেশ্য যেন ব্যাহত না হয়। সেহরি, রোজা, ইফতার, জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবি, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও অন্যান্য ইবাদতের ওপর ঈদের প্রস্তুতি যেন কোনোভাবেই বিরূপ প্রভাব না ফেলে। রমজান শেষে যে ঈদ আসে, তা যেন ক্ষমা পাওয়ার ঈদ হয়, কোনোক্রমে তা যেন হতভাগার ঈদ না হয়-এ রমজানে মূলত আমাদের সবার সে চেষ্টাই করা উচিত। মনে রাখতে হবে, ঈদ সার্বজনীন বলা হলেও চরম সত্য হচ্ছে, ঈদ মূলত রোজাদারের জন্য। দীর্ঘ এক মাস রোজা পালন শেষে ঈদের প্রকৃত আনন্দ তারাই উপভোগ করবেন। 

আর যারা রোজা রাখেনি, ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে ছিল তাদের জন্য ঈদের খুশি নয়। ঈদ প্রস্তুতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই যে বিশেষ করে শেষ দশকের রজনিগুলো-যা একান্ত নিরালা পরিবেশে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ও মোনাজাতের শ্রেষ্ঠতম সময়, প্রভুর সান্নিধ্য লাভের মোক্ষম সুযোগ ও অনন্য মুহূর্ত, তা বাজারঘাটে পেরিয়ে হয়ে যায়। 

অনেক ক্ষেত্রে পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা হয়। রোজা, ইফতার ও তারাবি তোয়াক্কা করা হয় না। যদি আমাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রদর্শিত পথ, শিক্ষা-দীক্ষা ও তাঁর আদর্শের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা এবং অনুরাগ থাকে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শাফায়াত লাভের তপ্ত বাসনা অন্তরে জাগ্রত থাকে, তা হলে আমাদের অতীত গাফিলতি থেকে খাঁটি মনে তওবা করা উচিত। এই অঙ্গীকার করা উচিত যে এই পবিত্র মাসে সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকব, একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর দিকে ফিরে আসব। রমজানের এই অতিমূল্যবান সময়গুলো যেন অবহেলায় না কাটে, ঈমানদারদের এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা জরুরি।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close