ই-পেপার সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫

লবণ মাঠে তরমুজ চাষে বাজিমাত
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ৪:৪৪ এএম  (ভিজিট : ২১৪)

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের পূর্বপাশে নাফ নদ, এরপর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। নাফ নদ পারের কয়েকশ একর জমিতে দীর্ঘ সময় ধরে লবণ চাষ হয়ে আসছে। লবণ মৌসুম শেষ হলে এসব জমি সাধারণত খালিই পড়ে থাকে। কারণ লবণ মাঠে ধানসহ অন্যান্য ফসলের চাষ হয় না বললেই চলে। কিন্তু পরিত্যক্ত সেই লবণ মাঠেই এবার সোনার ফসল ফলেছে। চাষের অযোগ্য জমিতে তরমুজ ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কাটাখালী গ্রামের তিন বন্ধু। মাছ চাষ ছেড়ে ঝুঁকি নিয়ে লবণ মাঠে তরমুজ চাষ শুরু করে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন কৃষিকাজে একেবারেই অনভিজ্ঞ তিন যুবক-সিরাজুল মোস্তফা, বাবুল মিয়া ও শামসুল আলম।   

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, নাফ নদির তীরঘেঁষা লবণ মাঠগুলো দীর্ঘ সময় ধরে পতিত জমি হিসেবে পড়ে থাকে। লবণাক্ততার কারণে সেখানে ফসলের চাষ হয় না। কিন্তু সেই লবণ মাঠেই তিন যুবক তরমুজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় মানুষের নজর কেড়েছে। পতিত জমিতে তরমুজ চাষে তিন যুবকের এই সাফল্যে রীতিমতো বিস্মিত হোয়াইক্যংবাসী।   

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে টেকনাফে ১১৩ একর জমিতে ২৭৫ জন কৃষক তরমুজের আবাদ করেছেন। তরমুজ বিক্রি করে কমবেশি সবাই লাভবান হচ্ছেন।

সরেজমিন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন বন্ধু-সিরাজুল মোস্তফা, বাবুল মিয়া ও শামসুল আলম। তারা তিনজনই পৃথকভাবে মাছের ব্যবসা করতেন। তবে ব্যবসায় তেমন লাভ হচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে মাছের ব্যবসা ছেড়ে নতুন একটা কিছু করার কথা ভাবেন। শেষে সিদ্ধান্ত নেন, গরম এবং রোজার মাস সামনে রেখে তরমুজ চাষ করবেন। তবে চাষের জমি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তারা। যেসব জমি খালি পড়ে ছিল তাতে শুধু লবণ চাষ হয়। অবশেষে এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে সেই লবণাক্ত জমির চার কানি (প্রতি কানিতে ৪০ শতক) বর্গা নিয়ে শুরু করেন তরমুজের চাষ। এখন সেই ক্ষেত থেকেই লাখ লাখ টাকা লাভের মুখ দেখছেন তিন বন্ধু। 

তাদের তিনজনের বাড়িই টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে। তাদের তরমুজ চাষ করতে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার মতো। এরই মধ্যে ক্ষেত থেকে আট লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন তারা। ক্ষেতে রয়েছে আরও প্রায় দুই লাখ টাকার তরমুজ।

সফল এই তিন উদ্যোক্তার একজন সিরাজুল মোস্তফা বলেন, লবণের মাঠে তরমুজ চাষের বিষয়ে প্রথমে আমরা তিন বন্ধু কৃষি বিভাগের এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিই। তারপর বাড়ির পাশে চার কানি লবণ মাঠে তরমুজ চাষ শুরু করি। তিন বন্ধু মিলে মাঠে রোপণ করি প্রায় ১২ হাজার চারা। এখন প্রায় প্রতিটি গাছেই তরমুজ ধরেছে। তরমুজের আকারও বেশ বড়। প্রতিটির ওজন ৮ থেকে ১২ কেজি। গরম অনুভূত হওয়ায় ফাল্গুন মাসের শুরুর দিকেই তরমুজের চাহিদা বেড়ে যায়।

এখন রোজার মাসে চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। বর্তমানে প্রতিটি তরমুজ বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে। টেকনাফ, হ্নীলা, হোয়াইক্যং বাজারে ক্ষেতের সব তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। কিছু তরমুজ কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন দোকানেও সরবরাহ করা হয়।

চার কানি জমির বর্গা, শ্রমিকের মজুরিসহ সবকিছু মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে উদ্যোক্তা বাবুল মিয়া ও শামসুল আলম জানান, মাছের ব্যবসা ছেড়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই লবণ মাঠে তরমুজ চাষে নেমেছিলেন। কৃষিকাজে কারও অভিজ্ঞতাও ছিল না। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নিয়েছেন। ভবিষ্যতে তিন বন্ধু মিলে আরও দ্বিগুণ জমিতে চাষ করবেন।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close