প্রকাশ: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ১১:২৮ পিএম (ভিজিট : ১০৪)

ছবি: সংগৃহীত
সুন্দরবনে আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে জলদস্যুরা। গত কয়েক মাসে সাতক্ষীরা, কয়রা, দাকোপ, মোংলা এলাকায় জেলে অপহরণ, মাছ ছিনতাই, চাঁদা আদায়সহ বেশ কয়েকটি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বন বিভাগের সক্ষমতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দৈনিক সময়ের আলোর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেল ভেঙে পালিয়ে আসা কয়েদি ও চিহ্নিত আসামিরাও সুন্দরবনে দস্যুতা করছে। তারা সুন্দরবনে মৎস্য আহরণে যাওয়া জেলেদের কাছ থেকে মাছ, টাকা, মুঠোফোনসহ সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে। এমনকি বনে ঢুকলে জেলেদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের চাঁদাও দাবি করছে। গত তিন মাসে পশ্চিম সুন্দরবনে অন্তত তিনটি অপহরণের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর বাইরে অপহরণের ঘটনা ঘটলেও জেলেরা পরবর্তী ঝামেলা এড়াতে প্রকাশ করতে চান না। ভিন্ন নামে ভিন্ন পরিচয়ে বনদস্যু গ্রুপগুলো জেলেদের কাছে মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি করছে বলে জেলে-বাওয়ালিরা অভিযোগ করেছেন।
প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনে একসময় আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছিল জলদস্যুরা। অপহরণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধের অভয়ারণ্য ছিল এই ম্যানগ্রোভ। জেলে, বাওয়ালি থেকে শুরু করে পর্যটকরাও সবসময় থাকত আতঙ্কে। তবে দস্যুদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। সুন্দরবন একদিকে যেমন বাংলাদেশের গর্ব অন্যদিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশও বটে।
সুন্দরবনের সার্বিক সুরক্ষার জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি বাংলাদেশের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিবিধ প্রাকৃতিক সুরক্ষার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা উচিত। বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার পাশাপাশি বনসংশ্লিষ্ট অপরাধীদের ধরতেও তৎপরতা চালাতে জরুরি হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জলদস্যুদের তৎপরতা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি জলদস্যুদের তৎপরতা উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কমে আসা আরও উদ্বেগজনক। আমরা জানি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন একটু ভঙ্গুর সময় পার করছে। সেই সুযোগে তৎপর নতুন-পুরোনো জলদস্যুদের এভাবে বাড়তে দিলে সেটা হবে আরও ভয়াবহ। যৌথবাহিনীকে সুন্দরবন নিরাপদ রাখতে কাজ করতে হবে। টহল বাড়াতে হবে, তদারকি বাড়াতে হবে। সার্বিকভাবে গণঅভ্যুত্থানে হারানো অস্ত্র উদ্ধার করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এখন সুন্দরবনে ৬টি জলদস্যু গ্রুপ সক্রিয়। এদের অতীতের মতো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দরবনকে জলদস্যুদের কবল থেকে নিরাপদে আনতে সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট হবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।