ই-পেপার রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫

গুরনাহ, স্পিভাক ও কিছুটা বিশ্ব সাহিত্য
প্রকাশ: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ৫:৪৫ এএম  (ভিজিট : ১০৬)

নোবেলজয়ী তানজানিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ উপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহর নতুন উপন্যাস প্রকাশ হয়েছে। ‘থেফট’ নামের ৩৬৮ পৃষ্ঠার এই বইটি র‌্যান্ডম হাউস থেকে ১৮ মার্চ প্রকাশিত হয়। এটি নোবেল পাওয়ার পর তার লেখা প্রথম উপন্যাস। গুরনাহ জানান, ২০২১ সালে উপন্যাসটি লেখার সময় তিনি নোবেল পুরস্কার পান। এরপর দীর্ঘদিন ধরে নানা ব্যস্ততার কারণে বইটি লেখা থেকে বিরতি নিতে হয়েছিল তাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নোবেল পাওয়ার পর বইটির ওপর আমি আর মনোযোগ দিতে পারিনি। বুঝতে পারছিলাম, আমি আর আগের মতো কাজ করতে পারব না। আমি এ ধরনের চাপের মধ্যে কাজ করতে পছন্দ করি না।’ 

তবে ব্যস্ততা কাটিয়ে তিনি আবার অসমাপ্ত উপন্যাসটি শেষ করবেন বলে ঠিক করেন। অবশেষে তিনি সেই অসমাপ্ত বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোতে ফিরে আসেন এবং দেখতে পান এখনও এটি শেষ করার কিছু সুযোগ আছে।
 
থেফট উপন্যাসটি নব্বই দশকের শেষের দিকে তানজানিয়ার প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে। সে সময় দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সরকার তার বৈদেশিক মুদ্রা আইন পরিবর্তন করেছিল। ফলে পর্যটকরা পূর্ব আফ্রিকার উপক‚লের ঠিক কাছে অবস্থিত জাঞ্জিবার দ্বীপে ব্যাপকহারে আসতে থাকে। সেখানে জন্মগ্রহণকারী গুরনাহ বলেন, ‘পর্যটনের বিপুল অর্থ তার সঙ্গে নতুন হোটেল, নতুন মানুষ, এনজিও নিয়ে এসেছে। কিন্তু পর্যটকদের আগমন অনেক দুর্নীতিও এনেছে।’ 

তিনি বলেন, কিছু সৈকত এবং রেস্তোরাঁ একচেটিয়াভাবে পর্যটকদের জন্য হয়ে ওঠে। সেখানে স্থানীয়দের যাওয়ার অনুমতি ছিল না। লোকেরা পর্যটকদের খুশি করার জন্য তাদের কাছে মিথ্যা গল্প বিক্রি করতে শুরু করে। 

থেফট উপন্যাসে তিনটি কেন্দ্রীয় চরিত্র রয়েছে। সেখানে আছে শিক্ষিত এবং এক ধরনের অহংকারী করিম। তার তরুণী স্ত্রী ফৌজিয়া, যে মৃগীরোগে ভুগছে। এ ছাড়া তাদের তরুণ চাকর বদর। ফৌজিয়া এবং করিম চাকর বদরকে ছোট ভাইয়ের মতোই দেখে। তারা সবাই ভিন্ন জগৎ থেকে এসেছে, তবুও তাদের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে। ন্যায়সংগত হোক বা অন্যায়, তারা সবাই তাদের বাবা-মায়ের কাছে কোনো না কোনোভাবে অবাঞ্ছিত বোধ করে। 

উল্লেখ্য, আবদুলরাজাক গুরনাহ ১৯৪৮ সালে তানজানিয়ার জাঞ্জিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। ২০২১ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো-প্যারাডাইস, বাই দ্য সি, আফটারলাইভস, গ্রাভেল হার্ট। খ্যাতিমান সাহিত্য সমালোচক এবং প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ২০২৫ সালের হলবার্গ প্রাইজ জিতেছেন। ১৩ মার্চ হলবার্গ প্রাইজ কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। নরওয়ে থেকে দেওয়া এই পুরস্কার মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন বা ধর্মতত্ত¡ গবেষণার ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য বলে বিবেচিত হয়। 

হলবার্গ কমিটির সভাপতি হেইকে ক্রিগার বলেন, ‘একটি অসম বিশ্বে ক্ষমতা ও জ্ঞানের কাঠামোর সমালোচনা এবং বিভিন্ন দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ সম্প্রদায়ের নিরক্ষরতা মোকাবিলার প্রচেষ্টা স্পিভাককে এই পুরস্কারের অত্যন্ত যোগ্য প্রাপক করে তুলেছে।’ স্পিভাক ১৯৪২ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। বর্তমানে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

তিনি ‘ক্যান দ্য সাবঅল্টার্ন স্পিক?’ (১৯৮৮) প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। ঔপনিবেশিক ভারতে নারীর অবস্থান এবং জ্ঞানচর্চা কীভাবে ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক মানুষদের বঞ্চিত করেছে তা নিয়ে এটি লেখা হয়েছে। এতে মূলত পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া প্রান্তিক গোষ্ঠীর সংগ্রামকেও তুলে ধরেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, ডেথ অব অ্যা ডিসিপ্লিন (২০০৩), ক্রিটিক অব পোস্ট কলোনিয়াল রিজন (১৯৯৯), অ্যানেস্থেটিক এডুকেশন ইন দ্য এরা অব গ্লোবালাইজেশন (২০১২), এথিকস অ্যান্ড পলিটিকস ইন টেগোর, কোয়েৎজি অ্যান্ড সার্টেইন সিনস অব টিচিং (২০১৮)। উল্লেখ্য, নরওয়ে সরকার প্রতি বছর শিল্প, মানবিকবিদ্যা, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন ও ধর্মতত্ত্বোর ক্ষেত্রে বিশিষ্ট গবেষকদের হলবার্গ প্রাইজ দেয়। ড্যানিশ-নরওয়েজীয় লেখক ও শিক্ষাবিদ লুডভিগ হলবার্গের (১৬৮৪-১৭৫৪) নামে এই পুরস্কারের নামকরণ করা হয়েছে। 
২০০৪ সাল থেকে পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছরের মার্চে হলবার্গ প্রাইজ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। জুনে নরওয়ের বার্গেন শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার হস্তান্তর করা হয়। পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। নরওয়েজিয়ান সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক ড্যাগ সোলস্টাড ৮৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। নরওয়ের সংবাদপত্র আফটেনপোস্টেন জানিয়েছে, ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী থেরেসে বয়র্নেবো তার সঙ্গে ছিলেন। 

সোলস্টাড অস্তিত্বগত হতাশা, রাজনৈতিক বিষয় এবং হাস্যরসের এক অদ্ভুত অনুভূতির সমন্বয়ে গদ্য রচনার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি নজিরবিহীনভাবে তিনবার নরওয়েজিয়ান ক্রিটিকস প্রাইজ ফর লিটারেচার জিতেছেন। নরওয়েজিয়ান সাহিত্য সমালোচক সমিতি ১৯৫০ সাল থেকে প্রতি বছর সাহিত্যের জন্য এই পুরস্কারটি প্রদান করে আসছে। 

সাহিত্যে নোবেল প্রাইজের জন্য সম্ভাব্য বিজয়ীদের তালিকায় প্রায় সময় সোলস্টাডের নাম থাকত। বিখ্যাত জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামি নরওয়ের এই লেখকের লেখা জাপানি ভাষায় অনুবাদও করেছেন। এদিকে মার্কিন লেখক লিডিয়া ডেভিস জানিয়েছেন, তিনি সোলস্টাডের ‘টেলিমার্ক নভেল’ পড়ে নরওয়েজিয়ান ভাষা শিখেছিলেন। 

নরওয়ের লেখক কার্ল ওভ নাউসগার্ড তার পুরোনো ধাঁচের লেখার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন; পের পিটারসন তাকে ‘নরওয়ের সবচেয়ে সাহসী, সবচেয়ে বুদ্ধিমান উপন্যাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন। প্যারিস রিভিউর একটি প্রবন্ধে মার্কিন লেখক ড্যামিয়ন সার্লস, সোলস্ট্যাডকে নরওয়েজিয়ান সাহিত্যের জন লেনন বলে উল্লেখ করেছেন। 

সোলস্টাড ১৯৪১ সালে দক্ষিণ-পূর্ব নরওয়ের স্যান্ডেফজর্ড এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২৩ বছর বয়সে ছোটগল্প লেখা শুরু করেন। এর আগে স্থানীয় একটি পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে তার লেখালেখির জীবন শুরু করেন। তিনি নরওয়ের লেখক জন মিশেলেটের সঙ্গে ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে পাঁচটি বইও লিখেছিলেন। চলতি বছর ইংরেজি সাহিত্যের জনপ্রিয় উপন্যাসিক জেন অস্টেনের ২৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। বিখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৭৭৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের স্টিভেনটনে জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজি সাহিত্যের ক্লাসিক উপন্যাস ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’র স্রষ্টা তিনি। ২১২ বছর আগে প্রকাশিত বইটি আধুনিক যুগের পাঠকদেরও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। 

জেন অস্টেনস হাউস জাদুঘর বলেছে, ২০২৫ সালে জেন অস্টেনের জন্মের ২৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ জন্য আমরা একাধিক উৎসবের আয়োজন করছি। আমরা সারা বছর ধরে নতুন প্রদর্শনী, বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটি উদযাপন করব। জাদুঘরটি জানিয়েছে, বিখ্যাত এই লেখকের উপন্যাসের নামে উৎসবগুলোর নাম রাখা হয়েছে। তার জনপ্রিয় উপন্যাস প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিসের নামে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়েছে। 

এ ছাড়া ১ থেকে ১১ মে সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি ফেস্টিভ্যাল, ১২ থেকে ২০ জুলাই এমা ফেস্টিভ্যালেরও আয়োজন করা হবে। প্রতিটি উৎসবে থিমযুক্ত ট্যুর, পদযাত্রা, পারফরম্যান্স, কর্মশালা, আলোচনা এবং আরও বিশেষ অনুষ্ঠান থাকবে! এই উৎসবগুলোতে যোগ দিতে দর্শনার্থীদের জন্য ইতিমধ্যেই টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। এদিকে ১২ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পারসুয়েশন অ্যান্ড পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল এবং ১৩ থেকে ২১ ডিসেম্বর জেন অস্টেনের জন্মদিন উদযাপন সপ্তাহ পালন করা হবে বলেও জানা গেছে। জেন অস্টেন সেন্টার জানিয়েছে, ২৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে লেখকের স্মৃতি বিজড়িত তিনটি স্থানে বছরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এই স্থানগুলো হলো-তার জন্মস্থান স্টিভেনটন শহর, জীবনের শেষ ৮ বছর কাটানো ছোট গ্রাম চওটন এবং তার উপন্যাসগুলোতে উল্লেখ করা শহর বাথ। 

উল্লেখ্য, জেন অস্টেন ১৮১৭ সালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে মারা যান। তার জনপ্রিয় বই হলো- প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস, সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি, এমা, পারসুয়েশন, ম্যানসফিল্ড পার্ক। 

লেখক- শোয়েব সর্বনাম, সহকারী সম্পাদক, সময়ের আলো




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close