ই-পেপার শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫

হাসপাতালের সামনে মায়ের মৃত্যু, দেহ নিয়ে বসে ১১ বছরের মেয়ে
প্রকাশ: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ২:১৭ এএম আপডেট: ২২.০৩.২০২৫ ২:৫৫ এএম  (ভিজিট : ৮১১)
নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মায়ের দেহের পাশে বসে মেয়ে। ছবি: সংগৃহীত

নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মায়ের দেহের পাশে বসে মেয়ে। ছবি: সংগৃহীত

নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক এবং অমানবিক ঘটনা। অ্যাম্বুল্যান্স বা সাহায্যের হাত মেলেনি, গরিব পরিবারের পাশে দাঁড়াল না কেউ, তুলনা উঠেছে কালাহান্ডির ঘটনার সঙ্গেও! 

একটি অসুস্থ মহিলাকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল চালক ও কন্ডাক্টর। পাশে রইল তার ১১ বছরের মেয়ে। মায়ের দেহ আগলে সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রইল রাস্তায়। মেলেনি কোনো সাহায্য, কোনো শববাহী গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্স। ধীরে ধীরে মায়ের নিথর দেহ নিয়ে ভিজে বৃষ্টিতে ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিল এক অসহায় শিশু। ঘটনাটি শুক্রবারের (২১ মার্চ।)

৪৫ বছরের জাহেরা বিবি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। শুক্রবার সকালে চিকিৎসার জন্য তেহট্ট থানার তরণীপুর থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে একটি বেসরকারি বাসে কৃষ্ণনগরের উদ্দেশে রওনা দেন। বাসেই অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহেরা। কৃষ্ণনগরে ঢোকার আগেই সংজ্ঞা হারান তিনি। ঘূর্ণি এলাকায় যখন তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়, তখন বাসকর্মীরা তাকে কৃষ্ণনগর-করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।


কয়েক বার মাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করে সে। কিন্তু মেয়েটির আকুতিতে কর্ণপাত করেননি কেউ। সময় গড়ায়। ওই ভাবে বাসস্ট্যান্ডের পাশে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অদূরে পড়ে থাকেন মহিলা। ঢিল ছোড়া দূরত্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কেউ কেউ উঁকি মেরেছেন। ভিড় জমিয়েছিলেন পথচলতি মানুষদের কেউ কেউ। কিন্তু কেউ সাহায্যের হাত বাড়াননি বলে অভিযোগ।

মায়ের অবস্থা দেখে চিৎকার-আর্তনাদে জড়ো হন অনেকে। অবশেষে ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসেন দু’জন আশাকর্মী। তারা খানিকক্ষণ পরীক্ষা করে মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করে চলে যান। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ দেখাননি কেউ। অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে মায়ের দেহ নিয়ে যাওয়ার মতো টাকা ছিল না ছোট্ট মেয়েটির কাছে। অনেকে তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানানোর পরামর্শ দিয়ে নিজেদের কাজে চলে যান। অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি। স্থানীয় এক জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল মেয়েটি। তিনি ২ হাজার টাকা চান। ওই ভাবে আরও সময় গড়ায়। শেষমেশ কয়েকজন ব্যক্তির উদ্যোগে একটি ইঞ্জিনভ্যানের ব্যবস্থা হয়। তাতেই মায়ের মরদেহ নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ৪০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের দিকে রওনা দেয় মেয়ে।

শববাহী গাড়ি জোগাড় করতে না পারায় স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে কালাহান্ডির সালামনি বারিকের ১২ কিলোমিটার হেঁটে যাওয়ার ছবি এখনও অমলিন। তার মাঝেই বাংলায় এমন একটি ঘটনায় শোরগোল শুরু হয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘সমব্যথী’র মতো রাজ্য সরকারের প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও কেন এমন একটি ঘটনার সম্মুখীন হতে হল গরিব মায়ের এই মেয়েটিকে?

এ ঘটনায় কৃষ্ণনগর পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশ্বনাথ বর্মণ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এসে কেউ কিছু বলেননি। আমি কিছুই জানি না।’’ 


বাস থেকে এ ভাবে এক জন অসুস্থ, মুমূর্ষু রোগীকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক তপন ঘোষের মন্তব্য, ‘‘চূড়ান্ত অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন বাস থেকে এই ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব।’’

কৃষ্ণনগর শহর তৃণমূলের মুখপাত্র মলয় দত্ত বলেন, ‘‘অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তবে অত্যন্ত নিন্দনীয়। পুরসভার টাকায় চিকিৎসকেরা মাইনে পান, কর্মীদের বেতন হয়। এত টাকা খরচ হচ্ছে। তার পরেও সাধারণ নাগরিকেরা ন্যূনতম পরিষেবা পাবেন না, এটা হতে পারে না।’’ 

কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘চূড়ান্ত অমানবিক! রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এর বিচার করা উচিত। পুলিশ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা, পুরসভার টহলরত কর্মীদের, কারও চোখে কেন পড়ল না এমন একটি দৃশ্য? দেখেও কেন সবাই এড়িয়ে গেলেন? এই প্রশ্নের জবাবদিহি করতে হবে।’’ 

কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান রীতা দাস জানিয়েছেন, কী ঘটেছে তা জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।


আরও সংবাদ   বিষয়:  নদিয়া   হাসপাতাল   মৃত্যু   ১১ বছরের মেয়ে   অমানবিক ঘটনা  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close