
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামে বছরের শ্রেষ্ঠতম বরকতময় রাত শবে কদর। পবিত্র কুরআন এই রাতেই প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি মহিমাপূর্ণ রাতে। আপনি কি জানেন মহিমাপূর্ণ রাত কী? মহিমান্বিত রাত সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহুল কুদুস অবতরণ করেন; তাদের প্রভুর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা উদয় পর্যন্ত।’ (সুরা কদর : ১-৫)
আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ বা কদরের রাত, এর ফারসি হলো-শবে কদর। অর্থ সম্মানিত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারণী রাত। পবিত্র রমজানের শেষ দশকে এ রাতের সম্ভাবনা সর্বাধিক বেশি। অসংখ্য হাদিসে এ ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো’ (মুসলিম)। এ রাতগুলো হলো-২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯। আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়। অর্থাৎ ২০, ২২, ২৪, ২৬ ও ২৮ রমজান দিবাগত রাত। সে হিসেবে সামনে চারটি রাত রয়েছে শবে কদর হওয়ার সম্ভাব্য রাত।
এ রাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’ (বুখারি : ৩৪)। শবে কদরে যেসব আমল করা যায়-নফল নামাজ- তাহিয়্যাতুল ওজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুত, সালাতুত তাসবিহ, তওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল পড়া। নামাজে কিরাআত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা। কুরআন শরিফ; সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাসসির, ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরা তেলাওয়াত করা। দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া। তওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা। দোয়া কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন-মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ববাসীর মুক্তি কামনা করে দোয়া করা। এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করে বান্দাদের ডেকে ডেকে বলেন, ‘কে আছ অসুস্থ আমার কাছে চাও আমি শেফা দান করব, কে আছ অভাবগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি প্রাচুর্য দান করব, কে আছ বিপদগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি বিপদমুক্ত করে দেব।’ (মুসলিম)
তবে মর্যাদাপূর্ণ এ রাতকে কেন্দ্র করে সমাজে মনগড়া কিছু আমলের প্রচলন দেখা যায়। যা শরিয়ত সম্মত নয়। অবশ্যই তা বর্জন করতে হবে। লাইলাতুল কদরের নামে নির্দিষ্ট কোনো নামাজ পড়া, দলবদ্ধভাবে মসজিদে মসজিদে ঘুরে ইবাদত করা, কবর জিয়ারত করা, আতশবাজি করা ইত্যাদি। এসব পরিহার করা চাই। তা ছাড়া এ রাত যাপন উপলক্ষে অহেতুক কোনো অনুষ্ঠান বা মসজিদে কোনো ভোজের আয়োজন করা ইসলাম সম্মত নয়। বরং বেশি বেশি নফল ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত ও তওবা ইসতিগফারের মধ্যে রাত কাটানোই উত্তম। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। সুতরাং লাইলাতুল কদর তালাশ করে সঠিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত যাপনে আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভের সুুযোগ দান করুন।