ই-পেপার শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫

জাকাত নিয়ে যা না জানলেই নয়
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ৪:৪৭ পিএম আপডেট: ২১.০৩.২০২৫ ৪:৫৩ পিএম  (ভিজিট : ২১৩)
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ইসলামের মূল স্তম্ভের একটি জাকাত। এটি ফরজ ইবাদত। কোরআনের ১৯টি সুরায় ৩২ বার জাকাতের কথা এসেছে। ইসলামে নামাজের পরেই জাকাতের প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ধনীর অর্থবৈভবে গরিবের অধিকার নিশ্চিত করে জাকাত। সমাজে তৈরি করে সাম্যের চিত্র। সম্পদশালী মুসলিম নারী-পুরুষের সম্পদ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে সম্পদের আড়াই শতাংশ দেওয়ার নাম জাকাত। জাকাত সম্পদকে পবিত্র করে। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের ধনসম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করো, যার সাহায্যে তুমি তাদের গুনাহমুক্ত করবে এবং তাদের পবিত্র করে দেবে।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১০৩) 

জাকাত আদায় না করাকে মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য ঘোষণা করে আল্লাহ বলেছেন, ‘যেসব মুশরিক জাকাত দেয় না, যারা আখেরাতকে অস্বীকার করে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য।’ (সুরা হামিম সাজদা, আয়াত: ৬-৭) 

কাদের ওপর জাকাত ফরজ
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম স্বাধীন, সুস্থ মস্তিষ্ক,  ঋণের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর জাকাত ফরজ। সাড়ে সাত ভরি (৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম) সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ব্যাংকে জমাকৃত যেকোনো ধরনের টাকা, ফিক্সড ডিপোজিট হলে মূল জমা টাকা অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে। আয়কৃত সম্পদের ওপর এক বছর অতিবাহিত ও সম্পদ বর্ধনশীল হতে হবে। 

কোন সম্পদে জাকাত দিতে হয়
সোনা-রুপা, টাকাপয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে জাকাত ফরজ হয়। (আবু দাউদ: ১/২৫৫)
মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্বৃত্ত টাকাপয়সা নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত ফরজ। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৯১)
টাকাপয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে জাকাত আসে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৬৭)
সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৩২)
ব্যবসার উদ্দেশ্যে দোকানে রাখা পণ্যের ওপর জাকাত ফরজ। (আবু দাউদ: ১/২১৮)
ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি যেমন—জমি, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি যেমন—মুদি সামগ্রী, কাপড়, অলংকার, নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, হার্ডওয়্যার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি বাণিজ্যদ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দেওয়া ফরজ হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭১০৩)
নিসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকাপয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের জাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৩২-৭০৭৪) 
আগের সম্পদের সঙ্গে বছরের মাঝে সম্পদ পাওয়া গেলে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরোনো সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরোনো সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৬৮৭২)


কাদের জাকাত দেওয়া যাবে

গরিব—যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।
মিসকিন—যার মালিকানায় কোনো সম্পদ নেই।
ইসলামি সরকারের পক্ষ থেকে জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত ব্যক্তি।
ইসলামের দিকে চিত্ত আকর্ষণের জন্য জাকাত দেওয়া। এই খাত সাহাবাদের  ইজমায় রহিত হয়ে যায়। 
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ দাস-দাসী। 
আল্লাহর পথে থাকলে।
মুসাফির—সফর অবস্থায়  অভাবগ্রস্ত মানুষ।

যাদের জাকাত দেওয়া উত্তম

জাকাতের হকদার দ্বীনি জ্ঞান চর্চাকারী ছাত্র ও শিক্ষক।
আত্মীয়স্বজন।
বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী। 
তারপর জাকাতের অন্যান্য হকদার।

যাদের জাকাত দেওয়া যায় না

যার কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থ-সম্পদ আছে। 
সাইয়েদ অর্থাৎ যারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর। 
জাকাতদাতার মা-বাবা, দাদা-দাদি, পরদাদা-পরদাদি, পরনানা, পরনানি ইত্যাদি ওপরের সিঁড়ি। 
জাকাতদাতার সন্তান, নাতি, নাতির ছেলে ইত্যাদি নিচের সিঁড়ি। 
জাকাতদাতার স্বামী বা স্ত্রী। 
অমুসলিম। 
সম্পদশালী লোকের নাবালক সন্তান। 
মসজিদ, মাদরাসা বা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মাণকাজের জন্য। 
মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য বা মৃত ব্যক্তির ঋণ ইত্যাদি আদায়ের জন্য। 
রাস্তাঘাট, পুল ইত্যাদি নির্মাণ ও স্থাপন কাজে যেখানে নির্দিষ্ট কাউকে মালিক বানানো হয় না।

উত্তম পদ্ধতি
গরিবের কাছে নিজ দায়িত্বে জাকাত পৌঁছে দেওয়া ইমানি দায়িত্ব। গরিবকে ডেকে এনে কষ্ট দেওয়া গুনাহের কাজ। সবাই যদি জাকাত ফরজ হওয়ার নির্ধারিত সময়ে আদায় করে, তাহলে গরিব-অসহায়ের বড় কল্যাণ হবে। কারণ সারা বছরই কারও না কারও ওপর জাকাত ফরজ হয়। 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক




আরও সংবাদ   বিষয়:  জাকাত   মাসয়ালা   প্রশ্ন-উত্তর   রমজান  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close