প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ২:১০ পিএম আপডেট: ২১.০৩.২০২৫ ২:৪০ পিএম (ভিজিট : ১৪২৬)

হাসনাত আব্দুল্লাহ-আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পুরোনো ছবি
‘বুকে পাথর চাপা দিয়ে মেনে নেওয়া সিদ্ধান্ত’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ। যে ভিডিওতে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ভিডিওতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কি বলেছেন তা সময়ের আলোর পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘সেনা প্রধানের দিক থেকে মূল ভেটো ছিল, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন? কেন অন্য কোনো ব্যক্তি নয়? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন কনভিক্টেড ব্যক্তি। একজন কনভিক্টেড ব্যক্তি কিভাবে একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন। আওয়ামী লীগ একজন লোককে একেবারেই দেখতে পারছে না। এছাড়া বাংলাদেশে ৩০-৪০ শতাংশ ব্যক্তি আওয়ামী লীগ সাপোর্ট করে। এই ৩০-৪০ শতাংশ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে একজন ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত? সেনাপ্রধান লাস্ট আমাদেরকে বলেছিলেন যে আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এই সিদ্ধান্তটা মেনে নিচ্ছি।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) গভীর রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
স্ট্যাটাসে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমিসহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায়। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়- ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে। আমাদের আরও বলা হয় যে, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন।
এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরণের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক। আলোচনার এক পর্যায় বলি, যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া `ইনক্লুসিভ` ইলেকশন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘উত্তরে বলি, আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময়ও আমাদের দিয়ে অনেককিছু করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো এজেন্সি কখনো বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা ধরণের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে চাপ দেয়া হয়েছে। আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের উপরেই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সাথে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি।
আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের উপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে। হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোন ধরণের আপোষ করার সুযোগ নাই।
জুলাইয়ের দিনগুলোতে জনগণের স্রোতে ক্যান্টনমেন্ট আর এজেন্সির সব প্রেসক্রিপশন আমরা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আজ আবারও যদি আপনাদের সমর্থন পাই, রাজপথে আপনাদের পাশে পাই তবে আবারও এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারবো।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, সব যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দিবো না।
৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোন সুযোগ নাই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।