প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ৫:১১ এএম (ভিজিট : ১২০)

ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সরকার যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, সেখানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঠিক প্রতিনিধিত্ব নেই বলে জানিয়েছেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সংস্কার হবে আর পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নতি হবে না। তা হলে ওই সংস্কার দিয়ে জনগণ কী করবে?
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫ : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয়। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দফতর এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু লোক নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের সংখ্যা বড় না। কিন্তু তারা কাজটা করছে বড়ভাবে। আগামী নির্বাচনের আগে পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং তাদের ভোটের নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না বলেও মনে করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতিহার তৈরি শুরু হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য প্রতিশ্রুতি আলাদাভাবে না থাকলে তারা ইশতেহার গ্রহণ করবেন না।
সরকার বদল হলেই শাসন পদ্ধতি বদল হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ও সেটি দেখা যাচ্ছে। সরকার যা বলছে, আর বাস্তবতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। গণতন্ত্রের অভাবের সময়ে যে বিপন্নতা ছিল তা এখনও দূর হয়নি। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী সবাই বিপন্ন। ফলে সরকার বদলেই কাঠামোগত বৈষম্য থেকে মুক্তি পায়নি বৃহৎ জনগোষ্ঠী। যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত তারা আগের তুলনায় এখনও যে নিরাপদ বোধ করছে তা নয়। তিনি বলেন, আমরা সবাই বললাম এই পরিবর্তন বৈষম্যবিরোধী। কিন্তু সব বৈষম্য নিয়ে কি কথা হয়? লিঙ্গ বৈষম্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈষম্য ও সুরক্ষা, নারীর বৈষম্য নিয়ে কি কথা হচ্ছে? হচ্ছে না।
জনগণ এতদিন বিভ্রান্তিকর উন্নয়নের বয়ানে ছিল উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এখন প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার সময় এসেছে। বাংলাদেশের গড়ে উন্নতি হলেও পার্থক্য রয়ে গেছে। উন্নয়নের মধ্যে সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সমাজের কোন অবস্থান থেকে, কোন গোত্র থেকে এসেছে তার ওপর নির্ভর করেছে কে উন্নয়নের সুবিধা পাবে, আর কে পাবে না। তিনি বলেন, গড় আয়ু বেড়েছে কিন্তু গরিবদের গড় আয়ু বাড়েনি। স্কুলের অন্তর্ভুক্তি শতভাগ হয়েছে কিন্তু গরিবদের সবাই স্কুলে যায় না। এ জন্য সঠিক পরিসংখ্যান দরকার, সঠিক পরিসংখ্যান না হলে সবাইকে নীতির মধ্যে আনা যাবে না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। এ সময় তিনি বলেন, এতদিন উন্নয়ন ঢাকা শহরের বাইরে যায়নি। প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী, শিশু, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, দলিত ও নারীসহ বিভিন্ন পর্যায়েই সমস্যা রয়েছে। এগুলো থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জও অনেক। সরকার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে নীতি প্রণয়নের কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় এসডিজি রিপোর্টে (ভিএনআর) প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় ঢাকার জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।