প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ৪:৫৭ এএম (ভিজিট : ১৪০)

ছবি: সময়ের আলো
বহুল আলোচিত সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট দফায় দফায় তদন্ত সংস্থা এবং তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনেও খুলেনি। এরই মধ্যে মামলার তদন্তে কেটে গেছে ৯ বছর। দুই দফায় করা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও তার মৃত্যুর কারণ ‘উল্লেখ’ করা হয়নি। তদন্তে মৃত্যুর রহস্য বের না হওয়া এবং বিচার না পাওয়ার শঙ্কায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তনুর পরিবার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে তনুর দাদার বাড়িতে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিক মিলাদ ও দোয়া শেষে কান্নাজনিত কণ্ঠে তনুর খালা সাজেদা বেগম বলেন, ‘গত আট বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন তনু হত্যার বিচার করেনি, আজ ৯ বছর চলে। নতুন সরকারের কাছে আমার তনু হত্যার বিচার চাই।’ তিনি আরও জানান, তনুর মা-বাবা অসুস্থতার কারণে গ্রামের বাড়িতে আসতে পারেনি। তারা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের বাসায় ছোট পরিসরে মিলাদের আয়োজন করেছেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী ছিলেন সোহাগী জাহান ওরফে তনু। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী। চাকরির সুবাদে সেনানিবাসের কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকেন। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তনুর বাবা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
মামলার ৯ বছর অতিবাহিত হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। দীর্ঘ এ সময়ে ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তারা হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনও তদন্ত করে বের করতে পারেননি। এ কারণে ক্ষুব্ধ তনুর মা-বাবা, তার পরিবারের সদস্য, সহপাঠীসহ কুমিল্লার সচেতন নাগরিক সমাজ। তনুর পরিবারের সদস্যরা বলেন, ৯ বছরে চারটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন আর ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া তদন্তে কোনো ধরনের অগ্রগতি দেখতে পাইনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার শুরুতে প্রথমে থানা পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং এরপর পুলিশের অপরাধী তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। শেষে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলার নথি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদর দফতরে হস্তান্তর করে সিআইডি। প্রায় চার বছর মামলাটি তদন্ত করেন পিবিআই সদর দফতরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান। তিনিও তদন্ত শেষ না করে বদলি হয়ে গেছেন। সবশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটির ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআই রাজধানীর কল্যাণপুর কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম।
মেয়ের খুনিদের বিচার না হলে মরেও শান্তি পাবেন না বলে জানান তনুর বাবা ইয়ার হোসেন। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এত দিন রাজনৈতিক সরকার ছিল। বিভিন্ন কারণে খুনিরা সামনে আসেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রায় সাত মাস হলো তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ওই কর্মকর্তা একবারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আমরাই তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের তথ্য পেয়ে তাকে কল করেছি। প্রথমে কল রিসিভ করলেও বর্তমানে তিনি আমাদের কলও রিসিভ করেন না। আমার অসুস্থ মা ও বাবা তনুর জন্য কান্না করছে, কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখছি না।’
মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগের তদন্ত কর্মকর্তারা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মামলার সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি। প্রক্রিয়াটি শেষ হলে আমরা আবারও ঘটনাস্থলে যাব। সেটি ঈদের আগেও হতে পারে, পরেও হতে পারে।’
তনুর মা ও ভাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের শনাক্ত করার। আমাদের তদন্তে কোনো অবহেলা নেই। যখন প্রয়োজন, তখন ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। যোগাযোগ নেই, বিষয়টি সঠিক নয়।’