ই-পেপার রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫

ইতিকাফে কী খোঁজেন খোদাপ্রেমীরা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ৪:৪১ এএম  (ভিজিট : ২৭২)
ছবি: সময়ের আলো

ছবি: সময়ের আলো

পবিত্র রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের বিধান রয়েছে ইসলামে। ইতিকাফ মহান রবের চূড়ান্ত সান্নিধ্য অর্জনে নিজেকে সঁপে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার নিবিড় সম্পর্ক তৈরির মাধ্যম। ইতিকাফের মাধ্যমে সত্যিকারার্থেই হৃদয়ে এক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জিত হয়। অনুভব হয় হৃদয়জুড়ে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর। সৃষ্টি হয় মহান মালিকের সন্তুষ্টির পথে চলার অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা। আর এ জন্যই  নবী করিম (সা.) নিয়মিত ইতিকাফ করেছেন। প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘প্রতি রমজানের শেষ দশকে রাসুল (সা.) ইতিকাফ করতেন। তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান (বুখারি : ১৯০৩)। ইতিকাফের নানাবিধ কল্যাণ ও প্রাপ্তি রয়েছে।

শবে কদর প্রাপ্তির সুযোগ
সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, শবে কদর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো’ (বুখারি : ২০১৭)। যেহেতু ইতিকাফকারীগণ রমজানের শেষ দশকে মসজিদেই অবস্থান করেন এবং সর্বদা আল্লাহর ধ্যানে নিজেদের মগ্ন রাখেন, নিয়োজিত রাখেন নিজেদের- আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে, বিধায় আশা করা যায়, তারা শবে কদর পেয়ে যাবেন। এই মহান বরকতময় রাতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগি ও তওবা-ইস্তিগফারে রত থাকা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো নামাজ। এরপর কুরআন তেলাওয়াত, তসবি-তাহলিল ও তওবা-ইস্তিগফার। শবে কদরে ফেরেশতারা দুনিয়ায় আসেন এবং ইবাদতরত বান্দাদের জন্য দোয়া করেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, ‘শবে কদরে হজরত জিবরাইল (আ.) একদল ফেরেশতাসহ অবতীর্ণ হন এবং দাঁড়িয়ে বা বসে আল্লাহকে স্মরণরত প্রত্যেক বান্দার জন্য দোয়া করেন’ (মেশকাত)। শবে কদরে ইবাদতের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি শবে কদরের পূর্ণ ঈমান-বিশ্বাস ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করে (অর্থাৎ নামাজে রত থাকে) তার সব অতীত গুনাহ মাফ হয়ে যায়’(বুখারী, মুসলিম)। আর এই শবে কদরের রাত্রিতে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ একটি দোয়া রয়েছে তা হলো ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফাফু আন্নি’। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন (তিরমিজি : ৩৫১৩)। এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা।

মসজিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা

ইতিকাফকারীগণ ধারাবাহিকভাবে যখন ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করেন, স্বভাবতই মসজিদের সঙ্গে তাদের একটা হৃত্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়, ভালো লাগা ও ভালোবাসা তৈরি হয়। এই সম্পর্ক হাশরের ময়দানে তাদেরকে উপকৃত করবে। সম্মানের মুকুট পরাবে। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘সাত শ্রেণির মানুষদের আল্লাহ তায়ালা হাশরের ময়দানে আরশের নিচে ছায়া দেবেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো, যাদের হৃদয়টা মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে’ (বুখারি : ৩২১৫)।  অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ডেকে ডেকে বলবেন, আমার প্রতিবেশী লোকেরা কোথায়? তখন ফেরেশতারা বলবেন, আপনার প্রতিবেশী আবার কারা? তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যারা দুনিয়াতে আমার ঘরের (মসজিদ) সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রেখেছে এবং মসজিদ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছে’ (মুসনাদে আহমাদ : ১০/২০৩)। মসজিদে অবস্থান করলে মহান আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন আল্লাহর ঘর থেকে কোনো ঘরে একত্র হয়, যেখানে তারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে বা পরস্পর আলোচনা করে, তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল হতে থাকে, তাদের রহমত ঢেকে রাখে এবং ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে। আর আল্লাহ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ তাকে এগিয়ে নেয় না।’ (মুসলিম : ২৬৯৯)

গুনাহমুক্ত থাকার সৌভাগ্য

মসজিদের পরিবেশ ইবাদতের জন্য অনুকূল। গুনাহের কাজের প্রতিকূল। যার ফলশ্রুতিতে সহজেই গুনাহমুক্ত থাকা যায়। কারণ মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব রয়েছে। পরিবেশ মানুষকে প্রভাবান্বিত করে দারুণভাবে। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ হলো, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা : আয়াত-১১৯)

আত্মার প্রশান্তি

ইতিকাফকারী মসজিদের পরিবেশে থাকার কারণে হৃদয়ে সত্যিকারের এক প্রশান্তি অর্জন করেন। কারণ তারা আল্লাহ তায়ালার স্মরণে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন, তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আসকারে মশগুল থাকেন। ফলে তাদের হৃদয়ের উৎকর্ষ সাধন হয় ও প্রশান্তি অর্জন হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরগুলো শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : ২১)

সময়ের হেফাজত
পৃথিবীতে মানুষ যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি অপচয় করে, সেটি হলো সময়। সময়ের অবমূল্যায়ন হয় সবচেয়ে বেশি। এ কারণে নবীজি (সা.) বলেন, এমন দুটি নেয়ামত আছে, যে দুটিতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে সুস্থতা আর অবসরতা (বুখারি : ৬৪১২)। ইতিকাফকারীদের ওপর আল্লাহ তায়ালার বিশেষ  রহমত, তারা সময়ের হেফাজত করতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে সময়কে সওয়াব অর্জনের পেছনে ব্যয় করেন। ব্যয় করেন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কাজে। 

নফল ইবাদতের সুযোগ
ইতিকাফের সবচেয়ে বড় একটি উপকার হচ্ছে, অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতের সুযোগ পাওয়া যায়। আর নফল ইবাদতের দ্বারা বান্দা আল্লাহর নিকটবর্তী হয়ে যায়। যেমনটি হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে- ‘আল্লাহ বলেন, আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নিকটবর্তী হয় না। বান্দা নফল ইবাদতের দ্বারা আমার নিকটবর্তী হতে থাকবে।’ (বুখারি : ৬৫০২)

নামাজের সওয়াব লাভ

একজন মুসলমান যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবে ততক্ষণ নামাজের মধ্যেই থাকবে। অর্থাৎ নামাজ আদায়ের মতো সওয়াব পেতে থাকবে। হুমাইদ (রহ.) বলেন, আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল (সা.) কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। এক রাতে তিনি এশার সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করেন। নামাজ শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, লোকেরা নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ নামাজের জন্য অপেক্ষা করেছ, ততক্ষণ নামাজরত ছিলে বলে গণ্য করা হবে। আনাস (রা.) বলেন, এ সময় আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আংটির উজ্জ্বলতা লক্ষ করছিলাম (বুখারি : ৬৬১)। ইতিকাফে থাকলে খুব সহজেই প্রতি মুহূর্তে নামাজের সওয়াব লাভ করা যায়।

সুন্নতে কিফায়া পালন

মাহে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। পুরো মহল্লার কিছু মানুষ আদায় করলেই সবার দায়িত্ব আদায় হয়ে যায়। তবে যারা ইতিকাফে বসেন, তারা নবীজি (সা.)-এর এই সুন্নতটি অন্যের দ্বারা আদায় না করিয়ে, সরাসরি নিজেরাই আদায় করলেন (দুররে মুখতার : ২/৪৪০)। আল্লাহ তায়ালা ইতিকাফের মাধ্যমে বর্ণিত কল্যাণগুলো লাভ করার তওফিক দান করুন।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close