
বৃহস্পতিবার রাজধানী ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে এইচআরএফবিয়ের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
দেশের মানবাধিকার কর্মী, সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের ‘উদ্বেগ এবং দাবি’ বিবেচনায় নিলে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন দেওয়ার দরকার হত না বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে ‘আন্তর্জাতিক’ দলিল হিসেবে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের কাছে একটা সুনির্দিষ্ট ‘সময়বদ্ধ রোডম্যাপ’ চেয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে র্যাবের পাশপাশি মানুষের ‘মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত’ হওয়ার নজরদারিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার-এনটিএমসিও বিলুপ্ত করার বিষয়ে জোর দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ঢাকার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ প্রণয়ণের দাবিতে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এইচআরএফবি সদস্য ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিবেদনে পাঁচটি বিভাগে ৪৩টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ আছে। আমরা বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মী, সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষ, যাদের নাগরিক সমাজ বলি। আমাদের যে উদ্বেগ, আমাদের যে দাবিগুলো দীর্ঘদিন যাবত উত্থাপিত হয়ে আসছে, সে দাবিগুলো যদি পূরণ হতো, সে দাবিগুলো যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে বিবেচনা করত তাহলে একদিকে যেমন এ প্রতিবেদনের দরকার হয় না, অন্যদিকে বাংলাদেশে যেভাবে কর্তৃত্ববাদ বিকাশ হয়েছিল সেটা হত না।
সংস্কার কমিশনের ছয়টি প্রতিবেদন হয়েছে আরও পাঁচটি হবে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার জানা মতে পাঁচটিসহ ছয়টি প্রতিবেদনের সুপারিশের সঙ্গে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের মিল আছে। যে কথাগুলো জাতিসংঘ বলেছে সেগুলো খুব একটা রকেট সায়েন্স তা না, তবে আমাদের দীর্ঘদিনের যে উদ্বেগ ছিল সেটাকে একটা আন্তর্জাতিক দলিলের মধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে। সে কারণেই এটি গুরুত্বপূর্ণ।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে দুর্নীতির ব্যপকতা, গভীরতার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল, যে কারণে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্থপাচারের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। সেটি কিন্তু ছিল কর্তৃত্ববাদের বিকাশের অন্যতম অনুঘটক।
পুলিশ ও নিরাপত্তার খাত সম্পর্কে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, এর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুলিশ অধ্যাদেশ যেটা আছে ১৮৬১, এমন কোন দেশ আছে যেখানে দুইশ বছরের পুরাতন একটা আইন দিয়ে পুলিশ চলে? তারা বলেছে এটাকে আন্তর্জাতিক চর্চার আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, র্যাব বিলুপ্তির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এসেছে, যেটা দীর্ঘদিনের মানুষের প্রত্যাশা। বিজিবির দায়িত্ব একটা সুনির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে, বর্ডার গার্ড বাহিনী। তাকে তার ম্যান্ডেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা। ডিজিএফআইকে বলেছে পরিস্কারভাবে, ডিজিএফআইয়ের ম্যান্ডেট হচ্ছে এটি নিরাপত্তা সংস্থা সংক্রান্ত গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান। যাদের উপর মানুষের অধিকার সংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরির দায়িত্ব বর্তায় না। শুধুমাত্র সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আনসার ভিডিপির সামরিক কর্তৃত্ব বন্ধ করতে হবে।
আরেকটি প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির কথা বলা হয়েছে, সেটি হচ্ছে এনটিএমসি। এটিকে বিলুপ্ত করতে হবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটা প্রস্তাব আছে, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। বাংলাদেশকে নজরদারিভিত্তিক সমাজে পরিণত করা হয়েছিল। নজরদারির ক্ষেত্রে তারা বলছে পরিস্কারভাবে যে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে বিশেষ করে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, এ ধরণের নজরদারি থেকে আমাদেরকে সরে আসতে হবে।
ব্লাস্টের পরিচালক মো. বরকত আলী বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল আমরা বিচার বিভাগ কিছুটা হলেও স্বাধীন দেখতে পাব। সে আশা পূরণ হয়নি। দীর্ঘদিনের জঞ্জাল হয়ত দুদিনে শেষ হবে না। কিন্তু কিছুটা উদ্যোগ থাকা দরকার ছিল। যেগুলো এখনো আমাদের জন্য আসেনি।
নারী পক্ষের প্রতিনিধি রওশন আরা বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে কিন্তু বলা হয়েছে যে এটা আরও বেশি তদন্ত করতে হবে, কিন্তু সেটা কে করবে? এটা নিয়ে এখন আমরা খুব একটা পরিষ্কার ধারণা পাই না।
সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের সুপারিশমালার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আইন ও সালিস কেন্দ্রের সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি। এতে আরও বক্তব্য রাখেন- নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।