প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ২:৫৮ এএম (ভিজিট : ১৯২)

প্রতীকী ছবি
রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ‘ইতিকাফ’। এ মাসের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সারাজীবন মহৎ আমলটি করে গেছেন। ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘অনেক আমল তো নবীজি (সা.) কখনো করেছেন, কখনো ছেড়েছেন। কিন্তু ইতিকাফের আমলটি তিনি কখনোই ছেড়ে দেননি। অথচ এই মর্যাদাপূর্ণ আমলটির ব্যাপারে মানুষ তেমন গুরুত্ব দেয় না।’
ইতিকাফ অর্থ স্থির থাকা বা অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সওয়াবের উদ্দেশ্যে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা বা স্থিতিশীল থাকাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত। কোনো একটি ছোট্ট জনপদের কেউ ইতিকাফ করলে জনপদের বাকিদের ওপর থেকে এর দায় ঘোচে যায়। তবে ওই জনপদের কেউ যদি ইতিকাফ না করে তা হলে সবাই সুন্নতে মুয়াক্কাদা বর্জনের দায়ে দায়ী হবেন। রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব থেকেই ইতিকাফ শুরু করতে হবে এবং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা যাওয়া পর্যন্ত ইতিকাফ অবস্থায় থাকতে হবে।
ইতিকাফ আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ উপায়। তাঁর সঙ্গে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যম। কারণ মানুষ যখন সংসার জগতের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে আল্লাহর ঘরে ইবাদতের নিমিত্তে আত্মনিয়োগ করবে তখন দয়াবান স্রষ্টা কি তার থেকে বিমুখ থাকতে পারেন? তিনি তো ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ‘বান্দা আমার দিকে একহাত অগ্রসর হলে আমি তার দিকে দুহাত অগ্রসর হই। আমার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘কেউ যখন আল্লাহর ঘর মসজিদে অবস্থান নেয় তখন আল্লাহ তায়ালা এত বেশি আনন্দিত হন যেমন বিদেশ থেকে কেউ বাড়িতে এলে তার আপনজনরা আনন্দিত হয়ে থাকে।’ (তারগিব-তারহিব : ৩২২)
ইতিকাফের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। এর কল্যাণ ও উপকারিতা বর্ণনাতীত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘ইতিকাফকারী যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য অফুরন্ত নেকি লেখা হয়’ (ইবনে মাজাহ)। উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায়, ইতিকাফকারী ব্যক্তি ঘুমন্ত-জাগ্রত সর্বাবস্থায় ইবাদতকারী হিসেবে গণ্য হয়। আল্লাহর ঘর মসজিদে অবস্থান করার কারণে তার দ্বারা পাপকর্মও সংঘটিত হয় না। বরং মানবশত্রু শয়তানের আক্রমণ থেকে সে বেঁচে যায়। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে তিন খন্দক দূরে সরিয়ে দেন। প্রত্যেক খন্দকের পরিমাণ আসমান ও জমিনের দূরত্ব সমান’ (তাবরানি ও বাইহাকি)। এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, ইতিকাফকারী ব্যক্তি পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।
ইতিকাফের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর মাগফিরাতের বারি দ্বারা সিক্ত হয়। কারণ ইতিকাফকারীর দৃষ্টান্ত প্রিয়তমের দরবারে প্রেমিকের আশ্রয়গ্রহণ কিংবা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কারও বাড়িতে অনশন করা। এরকম অবস্থানের ফলে পাষাণ ব্যক্তির হৃদয়ও বিগলিত হয়। অন্তরে উতলে ওঠে দয়া-মায়ার ঢেউ। তা হলে অসীম দয়ালু আল্লাহর ঘরে অবস্থান করে কেউ কি বঞ্চিত হবে? হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে নিজ ঘর থেকে উত্তমরূপে ওজু করে মসজিদে আসে সে আল্লাহর মেহমান। আর মেহমানকে সম্মান করা মেজবানের দায়িত্ব।’ (তাবরানি কাবির)