প্রকাশ: বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ১০:২৫ এএম আপডেট: ১৯.০৩.২০২৫ ১০:৪২ এএম (ভিজিট : ২৪০)

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পুরোনো ছবি
জাতীয় নির্বাচনের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিচ্ছি না বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি।
সাক্ষাৎকারে নতুন দলের চ্যালেঞ্জ, নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
নতুন দলের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এটা তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কঠিন করে তুলবে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে সীমিত সময়ের মধ্যে। (নির্বাচনের) নির্দিষ্ট তারিখ অনিশ্চিত হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নাহিদ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। ক্যাম্পাস ও শহরের রাজনীতি থেকে গ্রামের রাজনীতি ভিন্নভাবে পরিচালিত হয় এবং এখানে ভিন্ন পদ্ধতিতে এগোতে হয়। আগামী মাস থেকে আমরা ঢাকার বাইরে প্রচার শুরু করতে যাচ্ছি। তা ছাড়া এটা দেশের জন্য একটি কঠিন সময়। তাই জনগণের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য আমাদের অবশ্যই সক্রিয় থাকতে হবে। এর পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমাদের গুরুত্বের বিষয়গুলো হলো পূর্ববর্তী সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে একটি স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা এবং গণপরিষদ গঠন করা। আমরা সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে, যাতে ফ্যাসিবাদী শাসন আবার ফিরে আসতে না পারে। তাই একটি নির্বাচন আমাদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার নয়। বর্তমানে নির্বাচনের জন্য আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, একটি সরকারকে ভেতর ও বাইরে থেকে দেখাটা বিস্তর ভিন্ন অভিজ্ঞতা। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নিল, তখন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। এটা আমার জন্য একটি বড় অভিজ্ঞতা। সময়ের চাহিদার প্রতি সাড়া দিয়ে আমি পদত্যাগ করেছি এবং মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। এখন এই অভিজ্ঞতা আমি আমার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক যাত্রায় ব্যবহার করতে পারব-বিশেষ করে সামনের পথটা যখন কঠিন বলে মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দলের যাত্রা শুরু করা আমার জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ, তবে এই পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।
আপনারা কখন সাধারণ নির্বাচন চান- এমন প্রশ্নে নাহিদ বলেন, আমাদের লক্ষ্য পূর্ববর্তী সরকারের দোষীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা এবং একটি গণপরিষদ প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সংবিধান এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে, যাতে আবার ফ্যাসিবাদী শাসনের আবির্ভাব না হয়। অতএব, নির্বাচন আমাদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার নয়। আমরা বর্তমানে নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করছি না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কি দলে সমান সুযোগ পাচ্ছে? এ প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, হ্যাঁ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজনীতিতে আরও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আমাদের দল সবার জন্য সমান সুযোগ এবং দায়িত্ব প্রদান করে, সবার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক স্থান নিশ্চিত করে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের জন্য আমাদের প্রাথমিক দাবি হলো, একটি নতুন সংবিধান, যার জন্য একটি গণপরিষদ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এই সংবিধানটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাইয়ের বিদ্রোহের চেতনায় নিহিত হওয়া উচিত এবং আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সীমাহীন ক্ষমতা অপসারণ সহ একটি ভারসাম্যপূর্ণ ক্ষমতা ব্যবস্থা এবং একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের পক্ষে কথা বলি।
তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং লাভজনক কূটনৈতিক পন্থা অনুসরণ করুক, যেকোনো বিদেশি শক্তির আধিপত্য থেকে মুক্ত থাকুক। অতীতে, আমরা দেখেছি সরকারগুলো দিল্লির প্রভাবের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তবে, আমরা বাংলাদেশের রাজনীতি ভারত বা পাকিস্তানের চারপাশে কেন্দ্রীভূত হতে দেব না। এনসিপি কেবল বাংলাদেশকেন্দ্রিক থাকবে, সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।