কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে...
প্রকাশ: বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ২:৪১ এএম (ভিজিট : ১৫০)

ঝালকাঠিতে কবি জীবনানন্দ দাশ পাঠাগার ও সংগ্রহশালায়। ছবি: সময়ের আলো
ঝালকাঠির রাজাপুরে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের সংগ্রহশালা এখন অভিভাবকহীন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজটি বাস্তবায়ন করলেও নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো নির্দিষ্ট দফতর নেই। এ কারণে কাছ শেষ হওয়ার পরও আটকে আছে উদ্বোধন।
স্থানীয় এক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বিনা বেতনে শুধু বকশিশের ওপর নির্ভর করে দেখাশোনা করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরের অধীনে দেখাশোনা বা কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিলে সুরক্ষিত থাকবে এটি।
এতদিনেও কেন উদ্বোধন করা গেল না- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে। সামনে সিদ্ধান্ত আসবে সংগ্রহশালাটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে কে। পাউবোর মহাপরিচালক স্যারের নির্দেশনা চেয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। দেখাশোনা ও সংগ্রহশালা পরিচালনার জন্য লোক নিয়োগ দিলেই এটি উদ্বোধন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগ্রহশালা নির্মাণকাজের ঠিকাদার আবদুল মান্নান তাওহীদ বলেন, ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে। ঠিকাদার হিসেবে চেষ্টা করেছি কাজটি সুন্দর ও যথাযথভাবে করার। কাজ শেষ হয়েছে। যেকোনো সময়ে কর্তৃপক্ষকে এটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ২০২৩ সালে কবির জন্মদিন উপলক্ষে সংগ্রহশালা নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কবির প্রয়াণের ৭০ বছর পার হলেও নদীটির তীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সংগ্রহশালাটি। স্থাপনাটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও উদ্বোধন হয়নি এখনও। ত্রিশের দশকের কবিদের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ ছিলেন ব্যতিক্রম।
রূপসী বাংলার এই কবি লিখেছেন, আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়। হয়তো মানুষ নয়, শঙ্খচিল-শালিখের বেশে, হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে। ধানসিঁড়ির কাছে ছুটে আসতে কবির এই আকুতি রূপসী বাংলার সৌন্দর্যের স্মারক। কবির প্রয়াণের ৭০ বছর পর ঝালকাঠি সদর ও জেলার রাজাপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ধানসিঁড়ি নদীর পিংড়ি এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশ সংগ্রহশালা ও পাঠাগার। হ্যান্ড্রি বেভারেজের বইয়ে অবশ্য ধানসিদ্ধি নদী বলা হয়েছে। কালের বিবর্তনে খালে পরিণত হলেও নদীর মর্যাদায় একে বাঁচিয়ে রেখেছে জীবনানন্দের কবিতা।
জীবনানন্দ গবেষক আমীন আল রশীদ তার ‘জীবনানন্দের মানচিত্র’ বইয়ে বিভিন্ন সূত্র ও চিঠিপত্রের সাহায্যে স্পষ্ট করেছেন, কবির জন্ম বরিশালের কালিবাড়ী রোডে। এমনকি তার মা কবি কুসুম কুমারী দাশের জন্মও বরিশালে। কবি কেন ধানসিঁড়ির কাছে ছুটে আসতে চাইতেন? ধানসিঁড়ির সঙ্গে সম্পর্ক হলো কীভাবে তার? কারণ এই নদী হয়ে কবি বরিশাল থেকে কলকাতা যাতায়াত করতেন। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
এমনকি কলকাতা সিটি কলেজে চাকরিসহ শেষ জীবনে তার আট বছর কাটে কলকাতায়। তখন বরিশাল থেকে কলকাতা যাতায়াতের জন্য খুলনা পর্যন্ত স্টিমারে যেতে হতো। ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি নদীর পাশ দিয়ে গাবখান চ্যানেল হয়ে যেতে হতো খুলনা পর্যন্ত। এভাবেই কবি ধানসিঁড়ির প্রেমে পড়ে যান।