‘আ. লীগ-বিএনপির মধ্যে ঐতিহাসিক ব্যবধান রয়েছে’

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, অনেকে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগকে এক পাল্লায় বিচার করে। আমি মনে করি এটা অনেক বড় অবিচার। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন নয়, তবে এই দুটির মধ্যে ঐতিহাসিক অনেক ব্যবধান রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল ১১টায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এই পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি।
মামুনুল হক বলেন, যদি এ দেশের রাজনীতির ইতিহাস ব্যাখ্যা করি তাহলে আমরা সবসময়ই এদেশে দুটি ধারা দেখতে পাই। সেই অবিভক্ত ব্রিটিশ আমল থেকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এসেছিল, যখন ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গের উত্থানের ঘোষণা এসেছিল, যখন মুসলিম জাতিসত্ত্বা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এসেছিল, তখন এই বঙ্গ অঞ্চল থেকে কিছু মানুষ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল, তারা ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলার উত্থানকে ঠেকিয়ে দিতে চেয়েছিল যারা মুসলিম জাতিসত্ত্বার বিরোধী ছিল। সেই ঐতিহাসিক ধারা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে এসেছে।
তিনি বলেন, এভাবে দুটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংঘাত চলেছে লড়াই চলেছে। একটি ধারা ছিল পূর্ববঙ্গ কেন্দ্রিক, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ তথা মুসলিম জাতীয়তাবাদের তথা মুসলিম জাতিসত্তা গঠনের যে ঐতিহাসিক ধারা এই ধারায় যারা রাজনীতি করে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সেই ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। বিএনপিকে যেমন এই কথাটা মনে রাখতে হবে যার বিনিময়ের সমালোচনা করে তাদেরকে এই কথাটা মনে রাখতে হবে।
আবু তালেব ও আবু জাহেলের উদাহরণ টেনে মামুনুল হক বলেন, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কেউই ইসলামী রাজনীতি করে না বরং তাদের রাজনীতির ভিন্ন দর্শন রয়েছে। ঠিক যেমন আবু জাহেল এবং আবু আবু তালেব- কেউই ইসলামের অনুসারী ছিলেন না। কিন্তু কেউ যদি আবু জাহেল এবং আবু তালেবকে এক পাল্লায় মাপে তার চেয়ে বড় জাহেল আর কউ হতে পারে না।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ইসলামী রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিএনপি আবু তালেবের ভূমিকায়, আর আওয়ামী লীগ আগাগোড়ায় আবু জাহেলের ভূমিকায়।
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার হয়েছে। সামনে নির্বাচন। সংস্কারের কাজ শেষ। যে সংস্কারের অনেকগুলোর কথা তারেক রহমান আগেই বলেছিলেন। দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। ষোলো বছরের আন্দোলনে যারা আন্দোলন করেছে, তাদেরকে নিয়ে জাতীয় সরকারের কথা তিনি বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ছাত্রদল অকাতরে জীবন দিতে প্রস্তুতি নেবে। নবী করিম সা. অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি পিছিয়ে যাননি। আজ ছাত্রদল পেছাবে না। নবী করিম সা. হিলফুল ফজল সংগঠন করেছিলেন। প্রয়োজনে ছাত্রদলকে এই কর্মসূচি চালু রাখতে হিলফুল ফজল গঠন করতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল বলেন, একটি মহল বলে বেড়ায়, একই সাপের দুইমুখ; একটি আওয়ামী লীগ এবং অন্যটি বিএনপি। যারা এই কথা বলে, তাদেরকে বলব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখুন, ছাত্রলীগ কী করেছে, এখন ছাত্রদল কী করছে। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে চাই যেন দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু অনেকের তো মুখ দেখি ঠিক থাকে না। চান্স পেলেই বিএনপিকে গুতা মারে।
ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, নানা ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র থাকবে, কিন্তু আমাদের বিজয়ী হতে হবে। ষড়যন্ত্র যারা করে, তাদের শক্তি-সামর্থ্য আমাদের জানা আছে। প্রয়োজন হলে যেকোনো ভূমিকায় যাওয়ার জন্য ছাত্রদলকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বিএনপির ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা রাকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভাত ও ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে। ভোটের অধিকার ফিরে পেতে হাজার হাজার নেতাকর্মী-ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছি। শেখ হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু তার ফ্যাসিস্ট বাহিনী রয়ে গেছে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট বাহিনীর লোকজন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি ষড়যন্ত্রী মহল নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে। দীঘদিন জনগণ ভোট দিতে পারেনি।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে রয়েছে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেও রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে। এখন কীভাবে একজন শিশু বাচ্চা ধর্ষিত হয়? আমরা যদি বিচ্ছিন্ন থাকি, তাহলে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে। ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করে আবার কোনো স্বৈরাচারের আবির্ভাব ঘটাবে। সেজন্য সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় সাহস প্রমুখ।