
ছাত্রলীগের সাদ্দাম, ইনান ও শয়ন। ছবি: সংগৃহীত
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্র-জনতার অভ্যুথান চলাকালীন ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এরা বিভিন্ন হামলায় অংশগ্রহণ করেছে। বহিষ্কার হওয়া প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সোমাবার (১৭ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকেই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ১২৮ জনের নাম সংবলিত একটি তালিকা এ প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। বহিষ্কারের তালিকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের নাম থাকলেও নাম আসেনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের নাম।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কয়েক বছর আগে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের নামও রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
এদিকে তালিকায় সৈকতের নাম না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আরও অনেক চিহ্নিত হামলাকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য ও নারী কর্মীদের নাম বহিষ্কারের তালিকায় না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী গুলে জান্নাত দিশা মন্তব্য করেছেন, ‘‘নারী নেত্রী যারা এটলিস্ট সভাপতি, সেক্রেটারি ছিলো, তিলোত্তমারা এদের বিরুদ্ধে একশন নিতে কি তথ্য প্রমাণ লাগবে? এরা হলে কি চালাতো এইটা সবাই জানে। কিভাবেই বুঝবো এদের ফুটেজ দেখছে তারা?’’
ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম সামাজি লিখেছেন, ‘‘সাময়িক বহিষ্কারের লিস্ট দেখে যা বুঝলাম তদন্তের দায়িত্ব পড়েছে হয়ত তানবির হাসান সৈকতেরই উপর। তানবির হাসান সৈকতসহ হামলার সঙ্গে জড়িত তার কাছের সব নেতাদেরই নাম তালিকা থেকে আউট।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী লিখেছেন, ‘‘জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেও অনেক সন্ত্রাসী বহিষ্কারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে।’’
এদিকে এ বিষয়ে জানতে সত্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণকে একাধিকবার মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
বহিষ্কার হয়েছেন যারা
এদিকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের তালিকায় রয়েছেন- নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের ইমন খান জীবন, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান শেখ, বিজয় একাত্তর হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী এম সাকিব, সুর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এস এইচ স্বাধীন, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ওমর ফারুক, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক ওমর ফারুক শুভ, জগন্নাথ হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়েলস সরকার; পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের কাউসার হাসান, উর্দু বিভাগের কৌশিক হাসান পরশ, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের খালিদ মাহমুদ মিরাজ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আলম চৌধুরী, সুর্যসেন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার হোসেন, সুর্যসেন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হাসান অপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নাবিন হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ, অর্থনীতি বিভাগের নাহিদ ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের নায়েব শাহরিয়ার, অপরাধ বিজ্ঞানের নিঝুম ইফতার, আরবি বিভাগের নিয়াজ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগ কর্মী নুরুল আমিন, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগ কর্মী নূরে আলম বিশ্বাস।
এছাড়া আরও রয়েছেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হুসাইন মোহাম্মদ সোহান, ফিন্যান্স বিভাগের হাসান সাইদ, দর্শন বিভাগের হারুন অর রশিদ, ঢাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাগত আহমেদ, আইন বিভাগের সৈয়দ ইশতিয়াক ফারদিন, জসীমউদ্দীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল সুমন, জগন্নাথ হলের সুমন নন্দী, আইন বিভাগের শাহরিয়ার অনন, সূর্যসেন হলের শাহরিয়ার অভি, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বিজয়, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিভাগের শুভ আলম, দর্শন বিভাগের শেখ নাসির উদ্দিন, আরবি বিভাগের শোয়াইব আহসান, বিজয় একাত্তর ফল ছাত্রলীগ নেতা সজিবুর রহমান সজিবসহ ১২৭ জন।