ই-পেপার মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫

মামলা নিষ্পত্তির হার শূন্য
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ২:২৭ এএম  (ভিজিট : ১৪০)
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলার সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিশেষত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। অনুসন্ধানে অপরাধের আলামত মিললেই দেওয়া হচ্ছে মামলা। তবে দুদকে মামলার বোঝা দিন দিন বাড়লেও বিচারকাজ এগোচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তির হার প্রায় শূন্যের কোটায়। এ কারণে শক্তিশালী আসামিরা ফাঁকফোকর খুঁজছেন মামলা থেকে রেহাই পেতে।

এদিকে বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মামলার সংখ্যা বাড়ছে। তবে যে হারে মামলার সংখ্যা বাড়ছে, সে অনুযায়ী নিষ্পত্তির গতি বাড়ছে না। এ ছাড়া বিগত দিনে মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে আছে। ওইসব মামলারও নেই কোনো অগ্রগতি।

গত ১৯ বছর আগে ২০০৪ সালে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া দুর্নীতি দমন ব্যুরোর দায়ের হওয়া ৩৭০টি মামলার নিষ্পত্তিও হয়নি এখনও। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে ১৭৯টি মামলার কার্যক্রম। তবে গত এক বছরে ব্যুরো আমলের মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৪৭টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে মোট ২৪১টি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে ৪৭৯টি মামলা।

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিচার চলমান মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৮৩৩। উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ২৩৬। মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯। এর মধ্যে সাজা হয়েছে ৮টি ও আর খালাস দেওয়া হয়েছে ৮টি মামলার। গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মামলার মোট নিষ্পত্তির হার শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে মোট মামলা হয়েছে ৭৭৩টি। ওই মাসে মাত্র ৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ ছাড়া গত ২০১৪ সালে মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬টি। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ২৩৭টি। আর বিচার চলমান রয়েছে ২ হাজার ৮২৯টি মামলা। 

মূলত গত বছরের ৫ আগস্টের পর জমা পড়া অভিযোগগুলো নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে একের পর এক অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি। আর অভিযোগগুলো প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এসব মামলার বেশিরভাগই ৫ আগস্টের পর হওয়া। আর এর আগের মামলাগুলোর কার্যক্রম অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। ওই বছর মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে মোট ২৭৪টি। আর গত ২০২৪ সালে দুদকে মোট অভিযোগ জমা পড়ে ১৫ হাজার ৮৪২টি। এর মধ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া ১ হাজার ৮৯৪টি। আর অভিযোগ থেকে নথিভুক্ত করা হয় ১২ হাজার ৯৬৩টি। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয় ১ হাজার ১২টি। তবে এই অভিযোগের বেশিরভাগই ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর। এ ছাড়া গত ২০১৯ সালে ৩৬৩টি, ২০২০ সালে ৩৪৮টি, ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২২ সালে ৪০৬টি ও ২০২৩ সালে ৪০৪টি মামলা করে সংস্থাটি।



দুদক বলছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও অনেকেই বিদেশে পালিয়ে থাকায় তাদের ধরা যাচ্ছে না। আবার কেউ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও তদবির করেন। এমনকি দেশের বাইরে থেকে তদবির আসে। সঙ্গত কারণে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তবে যে যতই শক্তিশালী হোক না কেন দুদকের জালে যারা ধরা পড়েছেন, তারা রেহাই পাবেন না। হয়তো সময় একটু বেশি প্রয়োজন হতে পারে। দুদক কারও দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

বিগত ১৯ বছরে বিভিন্ন সময়ে দায়ের হওয়া প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মামলা দেশের বিচারিক আদালত বা অধস্তন আদালতগুলো ছাড়াও উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে বিচারের অপেক্ষায়। মাঝেমধ্যে এসব মামলার শুনানি হয়, সাক্ষ্যগ্রহণ হয়, কিন্তু চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় না। এসব মামলার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগও আছে। তারাও কাজ করছে। কিন্তু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বছরের পর বছর মামলার কার্যক্রম ঝুলে আছে বিভিন্ন আদালতে। কোনো মামলার বয়স দুই দশক পার হয়েছে, কিন্তু নিষ্পত্তি হয়নি। দুর্নীতির অভিযোগে নিয়মিতই মামলা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, আয়কর ফাঁকি ও সম্পদের তথ্যে গরমিল, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদক এসব মামলা করেছে। মামলার পর বিবাদী পক্ষ আইনি প্রতিকার পেতে বিচারিক আদালতসহ উচ্চ আদালতে যান। উচ্চ আদালত থেকে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশও নিয়ে আসেন অনেকে। ব্যক্তির সম্পদের হিসাব বিবরণী চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উচ্চ আদালতে দুদকের নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও করেন। তখন সেই রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুদক তার কার্যক্রম চালাতে পারে না। এসব কারণে দুদকের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে প্রভাবশালী ১৮০ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। একটি অনুসন্ধান যত গভীরে গিয়ে করা যায় ততই মামলা তদন্তের জন্য ভালো হয়। এতে ভুলভ্রান্তি কম থাকে। ফলে আদালতে গিয়ে মামলার সাজাও সহজে নিশ্চিত করতে পারে দুদক। কিন্তু মামলা হয়ে গেলে সেটি আদালতের এখতিয়ারে চলে যায়। তারপরও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়টি বিজ্ঞ আদালতের নজরে আনা হয়। দুদক আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করছে যথাসময়ে সাক্ষ্য ও তথ্য-উপাত্ত আদালতে উপস্থাপনের জন্য।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, আয়কর ফাঁকি ও সম্পদের তথ্যে গরমিল, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, ব্যাংক হিসেবে অস্বাভাবিক লেনদেনসহ নানা অভিযোগ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান চালায়। এ অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করছে। মামলাগুলো হওয়ার পর আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। এখানে দুদকেরও তেমন কিছু করার থাকে না।


আরও সংবাদ   বিষয়:  মামলা   আইন   দুর্নীতি দমন কমিশন  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close