
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৭ মার্চ) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলূম মাদরাসায় এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি খতিবে বাঙ্গাল মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব।
সভাপতির বক্তব্যে খতিবে বাঙ্গাল মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর দমন-পীড়ন চরম আকার ধারণ করেছে। নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক হোলি উৎসবকে কেন্দ্র করে ভারতীয় প্রশাসনের নিপীড়ন বিশ্বমানবতার জন্য লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, হাজারো নিরপরাধ মুসলমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৬০টিরও বেশি মসজিদ তেরপল দিয়ে ঢেকে দিয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এটি মুসলমানদের মৌলিক মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন। মোদি সরকার ও তার সমর্থিত উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মুসলমানদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে, যা ভারতের সাম্প্রদায়িক চরিত্র স্পষ্ট করে তুলছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করবে। ভারত সরকার যদি এই নিপীড়ন বন্ধ না করে, তবে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি পাবে, যার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে মোদি সরকারকেই নিতে হবে।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন ভারতের এই সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী তার বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় কাদিয়ানী সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতীয় সংসদে তাদের পক্ষে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুসহ একাধিক এমপিকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। এটি প্রমাণ করে যে, সরকার এই সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।
তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের হামলায় মুসল্লী নিহত হওয়ার ঘটনায় যখন তৌহিদী জনতা রাজপথে নেমেছিল, তখন পঞ্চগড়ের তৎকালীন এমপি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, পঞ্চগড় থেকে খতমে নবুওয়তের চেতনা চিরতরে মুছে ফেলা হবে। এটি সরকারের একপাক্ষিক নীতিরই প্রমাণ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস যদি কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করাই যৌক্তিক হবে। এই স্বীকৃতি বাস্তবায়িত হলে তাদের ধর্মীয় পরিচয় স্পষ্ট হবে এবং তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারবে। একইসঙ্গে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিও সুরক্ষিত থাকবে। ধর্মীয় সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ও বিভ্রান্তি দূর করতে কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে মাওলানা মাহবুবুল আলমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা শাব্বীর আহমাদ কাসেমী, মাওলানা আশিকুল্লাহ, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা আফসার মাহমুদ, মুফতী আল আমীন ফয়জী, মাওলানা হেদায়াতুল ইসলাম, মাওলানা রিয়াদ মাহমুদ, মাওলানা ইয়ামিন প্রমুখ।