ই-পেপার মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫

আলো ছাড়া সমুদ্রতলে অক্সিজেন তৈরির রহস্য কী?
প্রকাশ: সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ৮:৪৯ পিএম  (ভিজিট : ৯২)
বিজ্ঞানীদের দাবি, সাগরের গভীরে, অন্ধকার এলাকায় ধাতব পাথরগুলো অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞানীদের দাবি, সাগরের গভীরে, অন্ধকার এলাকায় ধাতব পাথরগুলো অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক চমকপ্রদ দাবি করেছেন, সাগরের গভীরে, অন্ধকার এলাকায় ধাতব পাথরগুলো অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। তাও আবার সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে এমনটি ঘটে। এই ধারণা সমুদ্রবিজ্ঞানীদের কাছে নতুন এবং গবেষণার মাধ্যমে এটি আলোচিত হচ্ছে। 

সাধারণত আলো ছাড়া অক্সিজেন তৈরি অসম্ভব বলে মনে করা হয়। তবে, গবেষকরা এই ধারণা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, এটা আসলেই সম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো, সাগরের গভীরে পাথরগুলো সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে অক্সিজেন তৈরি করতে পারে কীভাবে? একদল বিজ্ঞানী এই আবিষ্কারকে সমর্থন করছেন, অন্যরা এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে এর রহস্য কী তাই এখন আমরা জানব। 

গত বছরের জুলাইয়ে নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র পৃথিবীতে জীবনের উৎস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। 

বার্তা সংস্থা এএফপিতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গভীর সমুদ্রের নিচে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ধাতব খনিজের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে রহস্যময় ‘ডার্ক অক্সিজেন’ বা ‘অন্ধকার অক্সিজেন’।

এই আবিষ্কার খনিজ উত্তোলনকারী কোম্পানিগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা এই পলিমেটালিক নোডুলস থেকে মূল্যবান ধাতু বের করতে আগ্রহী।


উল্লেখ্য, পলিমেটালিক নোডুলস হলো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট শিলা বা গোলাকার গঠন, যা সমুদ্রের গভীরে পাওয়া যায় এবং এতে একাধিক মূল্যবান ধাতু থাকে।

গবেষকরা বলেছেন, সমুদ্রের পানির হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন বিভক্ত করার জন্য আলু আকারের এই নোডুলস পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। এই প্রক্রিয়া ইলেকট্রোলাইসিস হিসেবে পরিচিত।

এদিকে বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বছর আগে অণুজীবগুলো সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদন শুরু করে। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হয়। আর এই সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন সূর্যের আলো।

তবে দীর্ঘদিনের এই ধারণার ওপর সন্দেহ সৃষ্টি করেছে নতুন গবেষণা। এক বিজ্ঞপ্তিতে স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেরিন সায়েন্স লিখেছে, গভীর সাগরের এই আবিষ্কার জীবন উৎপত্তির ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।


পরিবেশবিদেরা বলেছেন, ডার্ক অক্সিজেন বা অন্ধকার অক্সিজেনের উপস্থিতি গভীর সমুদ্র নিয়ে আমাদের ধারণা কতটা কম, তা প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে এই দাবিকে সমর্থন করে, গভীর সমুদ্রে খনিজ উত্তোলন প্রকল্প পরিবেশগত দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস জানায়, বহুদিন ধরে তারা প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে খনিজ উত্তোলন বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করছে। কারণ, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই অবিশ্বাস্য আবিষ্কার (ডার্ক অক্সিজেন) তাদের সেই আহ্বানের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বিশাল অগভীর এলাকা ক্ল্যারিয়ন-ক্লিপারটন অঞ্চলে ডার্ক অক্সিজেনের আবিষ্কার হয়। অঞ্চলটি মেক্সিকো ও হাওয়াইয়ের মধ্যে অবস্থিত। এদিকে খনিজ উত্তোলনকারী কোম্পানিগুলোর জন্য ক্রমে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ক্ল্যারিয়ন-ক্লিপারটন অঞ্চল।

সমুদ্রের তলদেশে ৪ কিলোমিটার (২ দশমিক ৫ মাইল) গভীরে ছড়িয়ে থাকা পলিমেটালিক নোডুলস ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, কোবাল্টসহ মূল্যবান ধাতু ধারণ করে, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ও অন্যান্য নিম্ন কার্বন প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য।


ডার্ক অক্সিজেন আবিষ্কারের গবেষণায় আংশিকভাবে অর্থায়ন করেছিল খনিজ উত্তোলনকারী কানাডীয় কোম্পানি ‘দ্য মেটালস কোম্পানি’। তারা এ ধরনের খনিজ উত্তোলনের ফলে সামুদ্রিক পরিবেশে কী প্রভাব ফেলে, তা মূল্যায়ন করতে চেয়েছিল।

গবেষক অ্যান্ড্রু সুইটম্যান ও তার দলের ডার্ক অক্সিজেন নিয়ে গবেষণাপত্রটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের অনেকে গবেষণাটির সমালোচনা করেন এবং এটি ‘পদ্ধতিগত ত্রুটিতে’ ভরা বলে অভিযোগ তোলেন। গত জুলাইয়ের পর থেকে সুইটম্যানের আবিষ্কারটি খণ্ডন করতে পাঁচটি গবেষণাপত্র পর্যালোচনার জন্য জমা পড়েছে।

জার্মানির জীব-রসায়ন বিশেষজ্ঞ মথিয়াস হেকেল বলেছেন, পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বের জন্য পরিষ্কার প্রমাণ উপস্থাপন করেননি সুইটম্যান।

ফ্রান্সের জাতীয় সমুদ্রবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ইফ্রেমারের ভূ-রসায়ন গবেষক অলিভিয়ার রাউক্সেল এএফপিকে বলেছেন, এই ফলাফল নিয়ে একেবারেই কোনো ঐকমত্য নেই। গভীর সমুদ্রের নমুনা সংগ্রহ করা সব সময় চ্যালেঞ্জিং।

এ ছাড়া অলিভিয়ার রাউক্সেল সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, কয়েক কোটি বছরের পুরোনো নোডুলগুলো এখনো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম কি না। তিনি আরও বলেন, পরিমাপযন্ত্রে ধরা পড়া অক্সিজেন আটকে থাকা বাতাসের বুদ্‌বুদও হতে পারে।

গবেষক অ্যান্ড্রু সুইটম্যান এএফপিকে জানান, এ ধরনের তর্ক-বিতর্ক বিজ্ঞানী মহলে স্বাভাবিক এবং কোনো বিষয় এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক।

সুইটম্যান আরও জানান, তিনি একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত করছেন। তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলোর সঙ্গে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি যুক্তি খুব সাধারণ এবং এটি বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যায়।

এই আবিষ্কার গভীর সমুদ্রের রহস্য ও জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তবে এটি স্পষ্ট যে এ বিষয়ে আরও গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close