
প্রতীকী ছবি
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতিটি হুকুমের মধ্যেই রয়েছে অপার কল্যাণ। তিনি রোজাকে আমাদের জন্য ফরজ করে অশেষ কল্যাণ উপহার দিয়েছেন। রোজা এমন একটি ইবাদত যা পরকালীন মুক্তির পাশাপাশি ইহকালীন মানব দেহের জন্য একটি মহৌষধ। আধুনিক যুগের চিকিৎসাবিজ্ঞান রোজার ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করে তার সত্যতা প্রমাণ করেছে যে, রোজা স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
আধুনিক মুসলিম গবেষকরা বলেন, পেপটিক আলসার রোজার কারণে তাড়াতাড়ি ভালো হয়। রোজার কারণে পাকস্থলী খাদ্যমুক্ত থাকে, এ সুযোগে পাকস্থলীর ক্ষতস্থান বা আলসার নিরাময়ে কাজ করে। পাকস্থলী খালি হওয়া মাত্রই তার ক্ষয় পূরণ এবং পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। এভাবে দীর্ঘ এক মাসের রোজা মানুষের পেপটিক আলসার রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। সারা বছর খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি দান করে রোজা। শরীরের জমে থাকা বিষগুলো রোজায় নির্গত হয়, যা ধ্বংস না হলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, একজিমা, পেটের পীড়া ইত্যাদি রোগ জন্ম নেয়।
তারা আরও বলেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য কতিপয় দিন উপবাস থাকা খুব প্রয়োজন। রোজায় দিনের বেশিরভাগ সময় খাবার গ্রহণ না করার কারণে আমাদের শরীরের লিভার, পাকস্থলী এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথেষ্ট বিশ্রাম পায়। শরীর তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে থাকে, তাই এসময় আমাদের শরীরে যে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থগুলো জমা হয়ে থাকে সেগুলো শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এতে আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার হয় এবং রক্ত সঞ্চালনে উন্নতি ঘটে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকজন কার্ডিওলজিস্ট এক দল স্বেচ্ছাসেবীর ওপর একটি গবেষণা চালান। ৩০ দিন রোজা রাখার পর দেখা যায়, দেহের ওজন বা সুস্থতাবোধের ওপর কোনো প্রভাব না পড়লেও তাদের রক্তের লিপিড প্রোফাইলের ওপর চমৎকার প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ তাদের রক্তে এলডিএল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমেছে। শুধু মুসলমানরাই নন, অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উপবাসকালীন সময়ে একই প্রভাব দেখা গেছে তাদের দেহে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষণায় দেখা গেছে, উপবাস স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, সুস্থতার অনুভূতিকে বাড়ায় এবং দীর্ঘজীবন এনে দেয়। ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোজার কোনো প্রভাব আছে কি না, তা নিয়ে মানুষের ওপর এখনও কোনো গবেষণা না হলেও প্রাণীদের ওপর এরই মধ্যে এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে এবং তাতে দেখা গেছে যে, রোজার ফলে তাদের লিম্ফোমার ঝুঁকি কমেছে, টিউমার অপসারণ পরবর্তী বেঁচে থাকার হার বেড়েছে এবং ক্যানসারের কিছু কিছু সেলের ফের বৃদ্ধিকে ঠেকিয়ে দেয়।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার মধ্যে শ্বেত রক্তকণিকা অন্তর্ভুক্ত এবং রোজা রাখার মাধ্যমে নতুন শ্বেত রক্তকণিকার উৎপত্তির মাধ্যমে আরও বেশি কার্যকর হয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত ও বলিষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে।
এ ছাড়া দীর্ঘসময় খাবার বিরতির পর আমরা যখন ইফতার করি তখন আমাদের শরীরে ‘স্টিম সেল’ নামক কোষ পুনরুদ্ধার হয় যেখানে লাল এবং শ্বেত রক্তকণিকা ও প্লাটিলেট থাকে, যার কারণেও আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মোটকথা রোজা পালন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং রোজা রোগমুক্তির এক মহৌষধ এবং সুস্থ হওয়ার বিরাট নেয়ামত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে একমাত্র তার সন্তুষ্টি অর্জনে রোজা রাখার তওফিক দান করুন।