ই-পেপার রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫
রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫

ফ্যাসিজম অভ্যুত্থান সংস্কার
সংস্কার ও নির্বাচন যুগপথভাবে চলতে পারে
প্রকাশ: রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ৭:০৬ পিএম আপডেট: ১৬.০৩.২০২৫ ৭:২৩ পিএম  (ভিজিট : ৯৭)
ছবি: সময়ের আলো

ছবি: সময়ের আলো

নিঃসন্দেহে ২০২৪ সাল ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় বছর। এ বছর ছাত্র-জনতার সাহসী নেতৃত্বে গড়ে ওঠা স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতা ছাড়তে এবং দেশত্যাগ করে ভারতে পালাতে বাধ্য করেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে সূচিত হয়ে, এক দফা দাবির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি এক দীর্ঘকালীন অন্ধকার অধ্যায়ের ইতি টেনেছে।

অবসান ঘটেছে নাগরিকদের ভোটাধিকার হরণের ১৫ বছরের দুঃসময়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নীতির প্রতি চরম অবজ্ঞা এবং প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক নজরদারির কাঠামোকে অকার্যকর করার ধারাবাহিকতার। একই সঙ্গে দুর্নীতি, পুঁজি পাচার এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার একচোখা আনুগত্যের দাপট বন্ধ হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনের শাসনের অপমান এবং নিপীড়নের অন্ধকার অধ্যায়ও সমাপ্ত হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের প্রতিটি সূচকে দেশের অবনতি ঘটিয়ে ফ্যাসিবাদের শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত করেছিলেন।

শেখ হাসিনা সরকারের বিগত ১৫ বছরের অন্যায় ও অবিচারের ফলস্বরূপ জনমানসে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সমগ্র জাতিকে এক বারুদের স্তূপের ওপর দাঁড় করিয়েছিল। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সেই জনরোষের বারুদের স্তূপের ওপর স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে রূপ নিয়েছিল দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ গণবিস্ফোরণে যা বাস্তবায়িত হয় আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণে। এই গণবিস্ফোরণ ছাত্র-তরুণদের অসামান্য ত্যাগ ও বীরত্বের ফসল, যা একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তুলতে পদ্ধতিগত সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করে, যার মধ্যে ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ অন্যতম। এ কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে কার্যকর সুপারিশমালা প্রণয়ন। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠিত হলেও নির্বাচনব্যবস্থার পুনর্গঠনের জন্য এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ। আমরা কমিশনের আট সদস্য, এই দায়িত্বকে কেবল কাজ নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে নিয়েছি- একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের সুযোগ- যেখানে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আরও মজবুত ও টেকসই হবে রাষ্ট্রের ভিত।

গত অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে কমিশন গঠনের পর আমরা নির্বাচনি আইন, বিধিবিধান ও নীতিমালা বিশ্লেষণ শুরু করি এবং আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্র নির্ধারণ করি। আমরা ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছি, যার মধ্যে রয়েছে-

১. নির্বাচন কমিশনের কার্যক্ষমতা;

২. সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন;

৩. প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন প্রক্রিয়া;

৪. সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচন;

৫. সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব;

৬. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন;

৭. কার্যকর সংসদীয় কার্যক্রম;

৮. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা;

৯. স্থানীয় সরকার নির্বাচন;

১০. রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন;

১১. সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ;

১২. জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থাপনা;

১৩. প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি;

১৪. ভোটার তালিকা হালনাগাদ;

১৫. প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা;

১৬. অনলাইন ভোটিং প্রক্রিয়া।

এই অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনব্যবস্থার আইন ও বিধি পর্যালোচনা করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। রাজনৈতিক দল, নির্বাচনি কর্মকর্তা এবং সাধারণ নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করে প্রাথমিক সুপারিশ প্রণয়ন করেছি। জাতীয় পর্যায়ে সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহায়তায় একটি জরিপ পরিচালনা করেছি এবং মোবাইল এসএমএস, ওয়েবসাইট, ই-মেইল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অনলাইন সভারও আয়োজন করেছি। সবশেষে জনমত ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমাদের অভিজ্ঞতা ও সর্বোচ্চ বিবেচনার মাধ্যমে একটি সুসংহত সুপারিশ চূড়ান্ত করেছি, যা ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে বলে আমরা মনে করি।

১৬টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে আমরা দুই শতাধিক সুপারিশ প্রণয়ন করেছি, যা নাগরিকদের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ উদ্দেশ্যে আমরা একটি সমন্বিত ‘নির্বাচন কমিশন আইন’-এর খসড়া প্রস্তুত করেছি। খসড়া আইনে কেবল রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সৎ, যোগ্য এবং সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিদের কমিশনে নিয়োগের বিষয় অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং এতে কমিশনের দায়িত্ব, ক্ষমতা, কার্যপরিধি, জনবল এবং দায়বদ্ধতার বিষয়গুলোও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমাদের উচ্চ আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে যে, নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে কমিশন আইন-কানুন ও বিধিবিধানের সঙ্গে সংযুক্তও করতে পারে। আমরা কমিশনের ক্ষমতা আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্ণ ক্ষমতা নিশ্চিত করার এবং আদালতের ক্ষমতা সীমিত করার সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে কমিশন যেন রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে রেফারেন্স পাঠিয়ে ৯০ দিনের জন্য নির্বাচন স্থগিত করতে পারে, সেই প্রস্তাব করেছি। সুপারিশ করেছি নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় প্রজাতন্ত্রের কনসোলিডেটেড অ্যাকাউন্ট থেকে বহন করার, যেখানে বর্তমানে শুধু কমিশনারদের পারিশ্রমিক ও সচিবালয়ের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বর্তমান নির্বাচনি আইন ও আর্থিক বরাদ্দ ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল, কার্যত নির্বাহী বিভাগের কাছে জিম্মি। এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি নিরসনের জন্য আমরা সংসদের উচ্চকক্ষের একটি সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে কমিশনের কার্যক্রমে সহায়তার সুপারিশ করেছি। এই কমিটি স্পিকারের নেতৃত্বে গঠিত হবে, কিন্তু কমিশনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ করবে না।

এ ছাড়া আমরা প্রস্তাব করেছি যে, দায়িত্ব থেকে অবসরের পর কমিশন কিংবা কমিশনের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ বা শপথ ভঙ্গের অভিযোগ উঠলে তা বিশেষ সংসদীয় কমিটি তদন্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ পাঠাবে। এ ধরনের দায়বদ্ধতার কাঠামো অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই বিদ্যমান, কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কেউই জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। আর জবাবদিহিতার এমন বিধান প্রয়োজনীয় গার্ডরেইল তৈরি করে প্রতিষ্ঠানকে অন্যায় আচরণ থেকে দূরে রাখে।

বস্তুত আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি কমিশনকে আরও ক্ষমতায়িত ও শক্তিশালী করতে, যেহেতু নির্বাচন কমিশনই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সাংবিধানিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা নির্বাচনের কস্টোডিয়ান। তবে দায়বদ্ধতাহীন ক্ষমতা স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়, যা আমরা গত ১৫ বছরে তিক্তভাবে উপলব্ধি করেছি। প্রসঙ্গত আমাদের প্রাথমিক প্রস্তাব পেশের পর সরকার যে আইনের মাধ্যমে এনআইডি ব্যবস্থাপনাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল, তা ইতিমধ্যেই বাতিল করেছে।

আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার একটি অন্যতম কারণ হলো অপরাধপ্রবণ ও অশুভ প্রভাবসম্পন্ন নির্বাচনি পরিবেশ। এ পরিস্থিতি দূর করতে আমরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণের মাপকাঠি কঠোর করার সুপারিশ করেছি। ঋণখেলাপিদের নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার এবং দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদেরকে বিচারিক আদালত বা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দিন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার রহিত করার সুপারিশ করেছি। একই সঙ্গে আইনানুগভাবে অযোগ্য করার সুপারিশ করেছি আমাদের দেশে যারা ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদেরকে। নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার ছকে পরিবর্তন আনা এবং প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা এবং এতে ভুল তথ্য দেওয়ার বা তথ্য গোপনের ব্যত্যয় ঘটলে নির্বাচনের আগে প্রার্থিতা বাতিল এবং নির্বাচনের পর যেকোনো সময় প্রার্থীর নির্বাচন বাতিলের সুপারিশও আমরা অন্তর্ভুক্ত করেছি।

নির্বাচনি অঙ্গনকে কলুষমুক্ত করার পাশাপাশি আমরা রাজনৈতিক অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন  এবং রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ও নেতাকর্মীদের কাছে জবাবদিহির সুপারিশ করেছি। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে তাদের সদস্যদের বার্ষিক তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং সেই তালিকার ভিত্তিতে দলের প্রতিটি স্তরে অভ্যন্তরীণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে সদস্য চাঁদা ও শুভাকাক্সক্ষীদের অনুদানের ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে দাখিল ও প্রকাশের সুপারিশ করেছি।

আমরা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর আওতায় আনার প্রস্তাব করেছি। প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিকতা নিশ্চিত করতে, প্রতিটি নির্বাচনি এলাকার জন্য প্রাথমিক সদস্যদের ভোটে তিন সদস্যের একটি প্যানেল গঠনের সুপারিশ করেছি, যেখান থেকে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করবে। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক সংগঠন এবং বিদেশি শাখা বিলুপ্ত করার সুপারিশও আমরা করেছি। পাশাপাশি যারা সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অযোগ্য, তাদের রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক সদস্যপদ বা কোনো কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখার সুপারিশ করেছি।

জাতীয় সংসদকে কার্যকর এবং স্বচ্ছ রাখার লক্ষ্যে আমরা রিকল ব্যবস্থার সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি জনগণের মতামতের শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ‘না-ভোটে’র বিধান পুনরায় চালুর প্রস্তাব দিয়েছি। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে আরও প্রস্তাব করেছি যে, জাতীয় নির্বাচনে যদি কোনো আসনে ভোটার উপস্থিতি ৪০ শতাংশের নিচে নেমে যায়, তবে সেই আসনে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে যারা ২০১৮ সালের জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হোক। পাশাপাশি ২০১৪ এবং ২০২৪ সালের একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজকদেরও একই তদন্ত প্রক্রিয়ার আওতায় আনার কথা বলেছি।

জাতীয় সংসদে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসনব্যবস্থা নিছক আনুষ্ঠানিক এবং নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়নের পক্ষে যথার্থ নয়। সুতরাং আমরা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সংসদের আসন সংখ্যা ৪০০-তে উন্নীত করে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে পূরণের সুপারিশ করেছি। প্রস্তাবিত ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে প্রথম পর্যায়ে লটারি বা বিকল্প পদ্ধতিতে নির্ধারিত ১০০টি আসনে কেবল নারীরা যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অন্য ৩০০টি সাধারণ আসনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকবে। পরবর্তী তিনটি নির্বাচনি চক্রে পর্যায়ক্রমে আরও ১০০টি করে আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০ বছরের মধ্যে প্রতিটি আসন থেকে অন্তত একজন নারী জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। এভাবে নির্বাচিত নারীরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের সমান ক্ষমতা, অধিকার এবং দায়িত্ব ভোগ করবেন। যোগ্য নারীরা কঠোর পরিশ্রম এবং দক্ষতার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সাধারণ আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হবেন। আমাদের মতে, এই প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং ভবিষ্যতে নারী সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তা বিলোপ করবে। তবে এ পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন অপরিহার্য হবে।

টাকার প্রভাব আমাদের রাজনীতিকে ভয়াবহভাবে কলুষিত করেছে। ‘উই হেভ দ্য বেস্ট ডেমোক্র্যাসি মানি ক্যান বাই’- এই বাস্তবতাই আমাদের দেশে বিরাজমান। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে আমরা ‘দৃশ্যমান’ নির্বাচনি ব্যয়ের নিরীক্ষার সুপারিশ করেছি এবং পোস্টার, বিলবোর্ড বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছি। তবে ‘অদৃশ্য’ নির্বাচনি ব্যয়, যেমন মনোনয়ন বাণিজ্য ও ভোট কেনাবেচা বন্ধের বিষয়ে আমরা বড় ধরনের কোনো সুপারিশ দিতে পারিনি। কারণ এসব ব্যয় অদৃশ্য এবং এগুলো রোধ সম্পূর্ণভাবে আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদদের নৈতিকতা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল। নৈতিকতা কাউকে শেখানো যায় না, এটি আত্ম উপলব্ধি থেকে আসে।

তবু আমরা আশাবাদী। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে যেসব সাহসী মানুষ আহত বা শহিদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ আমাদের সামনে গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের এক অপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আশা করি, আমরা তাদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না এবং এ ঐতিহাসিক সুযোগ নষ্ট হতে দেব না।

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলে আমাদের স্থানীয় সরকারব্যবস্থা চরমভাবে কলুষিত হয়েছে। তাই আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দলীয় পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ করেছি। দলের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করতে আমরা সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিধান চালুর প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা আরও সুপারিশ করেছি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার। পাশাপাশি সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণের জন্য ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চালুর প্রস্তাবও রেখেছি। এ ছাড়া আমরা কেন্দ্রীয় বাজেটের ৩০ শতাংশ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করেছি, যাতে স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম আরও শক্তিশালী এবং কার্যকর হয়।

আমাদের প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি বাংলাদেশি প্রবাসে বসবাস করেন, তবে তাদের একটি বড় অংশ ভোটার নন এবং অধিকাংশই ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এই বিশাল জনগোষ্ঠী ভোটাধিকার-বঞ্চিত থাকলে নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে পারে না। আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের এনআইডি কার্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছি।

আমরা প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট বা ই-ভোটিং ব্যবস্থার প্রবর্তনেরও সুপারিশ জানিয়েছি। পাশাপাশি এনআইডি ব্যবস্থাপনাকে সাময়িকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে আমরা আরও সুপারিশ করেছি  আগামী সাত বছরের মধ্যে এনআইডি ব্যবস্থাপনাটি একটি স্বাধীন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করার। এর কারণ এনআইডি ব্যবস্থাপনা একটি কারিগরিভাবে জটিল ও বিশাল কার্যক্রম, যা নির্বাচন কমিশনের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনার পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা কঠিন হতে পারে। উপরন্তু এ ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক প্রথার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ১০০ আসনবিশিষ্ট সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে একটি সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের আমরা সুপারিশ করেছি। এই উচ্চকক্ষে, প্রতি দলের প্রাপ্ত আসনের ৫০ শতাংশ দলের সদস্যদের মধ্য থেকে এবং বাকি ৫০ শতাংশ নির্দলীয়ভাবে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মানবসেবী, শ্রমজীবী, নারী উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি থেকে সংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে নির্বাচিত করার প্রস্তাব দিয়েছি, যেখানে অন্তত ৩০ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। আমরা উচ্চকক্ষের সদস্যদের জন্য বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক নির্ধারণের সুপারিশ করেছি।

এ ছাড়া আমরা দলনিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করার সুপারিশ করেছি এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বাধিক দুবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার পাশাপাশি দুবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে অযোগ্য করার সুপারিশ করেছি। একই সঙ্গে একই ব্যক্তিকে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা- এই তিনটি পদ একসঙ্গে না রাখার সুপারিশও করেছি।

অতীতের সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের দাবি, সীমানা নির্ধারণে কারসাজি করে তাদের অতীতের নির্বাচনে পরাজিত করা হয়েছে। এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণে আমরা একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সীমানা নির্ধারণের সুপারিশ করেছি। এর মাধ্যমে স্বাধীন কর্তৃপক্ষের কাছে নির্বাচন কমিশনের মতামত প্রদানের সুযোগ থাকবে। তবে আসন্ন নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠন করে সীমানা নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তাব দিয়েছি।

নির্বাচনকালীন আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনি অপরাধ নিয়ে বহু অভিযোগ উঠলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দায়ীদের কেউই শাস্তির আওতায় আসেননি। এ অবস্থার অবসানে আমরা নির্বাচনি অভিযোগ ও অপরাধ ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ পেশ করেছি। আমরা নির্বাচনি বিরোধ (ইলেকশন পিটিশন) নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে এর বিচারের দায়িত্ব হাইকোর্ট থেকে পুনরায় জেলা জজের নেতৃত্বাধীন আদালতে ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেছি। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিককালে কোনো নির্বাচনি বিরোধই সংসদের মেয়াদকালের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়নি। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আচরণবিধি নিয়ে সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছি।

এ সুপারিশগুলোকে দুটি মূল ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রথম ধরনের সুপারিশ হলো আইন-কানুন সংক্রান্ত, যা অধ্যাদেশ জারি এবং কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে কয়েকটি অতি জরুরি এবং তা অবিলম্বে কার্যকর করা দরকার। উদাহরণস্বরূপ নির্বাচন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-তে একাধিক সংশোধন প্রয়োজন এবং দ্রুত নির্বাচনের স্বার্থে তার বাস্তবায়ন এখনই জরুরি। একই ভাবে সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ অবিলম্বে শুরু করা উচিত। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সময়সাপেক্ষ কাজ এখনই শুরু করা উচিত। উপরন্তু নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কাজও অনতিবিলম্বে শুরু করা আবশ্যক।

দ্বিতীয় ধরনের কাঠামোগত সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন এবং এ জন্য একটি নির্বাচিত সংসদের প্রয়োজন হবে। তবে গণভোট বা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কিছু উদ্যোগ আগেই এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ সংসদের উচ্চকক্ষ স্থাপন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য সংবিধানে সংশোধন আনতে হবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণের জন্যও সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ভাষায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের জন্য সব গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের স্বাক্ষরিত একটি ‘জাতীয় সনদ’ অপরিহার্য হবে।

একটি বহুল ব্যবহৃত উক্তি হলো-‘পুডিংয়ের স্বাদ তার খাওয়ায়’। তেমনি সংস্কারের সাফল্য নির্ভর করে তার বাস্তবায়নের ওপর। নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার বাস্তবায়ন নির্ভর করবে চারটি প্রধান পক্ষের ওপর : অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল এবং জনগণ। এই চারটি পক্ষের হাতেই এখন সংস্কার বাস্তবায়নের ‘বল’ রয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আমাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে আগ্রহহীনতা প্রত্যাশিত নয়, কারণ এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন নেই। সুতরাং সংস্কারের গতি মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে নাগরিক সমাজ। জনগণের ঐক্যবদ্ধ এবং সোচ্চার অবস্থানই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। এর উজ্জ্বল প্রমাণ হলো গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের ঘটনা। 

সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন হবে নাকি সংস্কার হবে- তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব দেখছি না। একটার বিপরীতে আরেকটা নয়। দুটোই দরকার। নির্বাচন হতে হবে, সেই সঙ্গে সংস্কার হতে হবে। দুটোই যুগপথভাবে চলতে পারে। আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। আর এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে এবং সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সংস্কার দরকার। কেননা যে পদ্ধতি ভেঙে পড়েছে, তা জোড়া লাগাতে হবে। তাই সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া টেকসই হবে না। এ ছাড়া সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে স্বৈরতন্ত্রেরই পুনরুত্থান ঘটতে পারে।

লেখক : সদস্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close