প্রকাশ: রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ১১:১২ এএম আপডেট: ১৬.০৩.২০২৫ ১১:৩৭ এএম (ভিজিট : ৫৪০)

সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রামের পুরস্কার ঘোষিত আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকার তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রোববার তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হচ্ছে।
সিএমপির ডিসি আমিরুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর আরও কিছু আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসিকে নগ্ন করে পেটানোর হুমকি দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন সাজ্জাদ।
ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা আছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুরের বাসিন্দা সাজ্জাদের বাবার নাম জামাল উদ্দিন। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। একই বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাজ্জাদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাকে গ্রেফতারে জোর তৎপরতা শুরু করে পুলিশ।
নগরীতে একের পর এক সন্ত্রাসী তৎপরতায় আলোচনায় ছিল সাজ্জাদ। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কালারপোল এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন সাজ্জাদ। ওই ঘটনার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর নগরীর অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি ডাকাতির প্রস্তুতির সময় তার ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখান থেকে সটকে পড়েন সাজ্জাদ।
গত ২৮ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসিকে হুমকি দেন। এসময় সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফ দেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে আমি ধরে ন্যাংটা করে পেটাব। ওসি আরিফ থানায় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমার স্ত্রীকে আটক করে জেলে নিয়ে গেছে। তাকে আমি ছাড়ব না। পুলিশ না হলে তাকে আমি অনেক আগেই মারধর করতাম। পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা করি বলেই চুপ করে আছি। হুমকির পর ওসি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাদের খুনের অভিযোগ রয়েছে। ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ প্রধান আসামী। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’ হিসাবে পরিচিত। সবশেষ গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করলেও পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।
গত ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ। তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলি চালান সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ পালিয়ে গেলেও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয়।