ই-পেপার রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫
রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫

ঋণের পরবর্তী কিস্তি মিলবে কবে
প্রকাশ: রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ১:৫০ এএম  (ভিজিট : ১৭৪)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকায় আসছে। বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের পরবর্তী কিস্তির শর্ত পূরণের অগ্রগতি জানতেই তাদের এই সফর। প্রায় ১১ দিনের সফরে তারা বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও কিছু সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হলো-ঋণের পরবর্তী কিস্তি কবে মিলবে। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩টি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। এখন পর্যন্ত সেই অর্থ পাওয়া যায়নি। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শর্ত পূরণের জন্য বাড়তি সময় নেওয়া হয়। 

একই সঙ্গে চতুর্থ কিস্তির ঋণের অর্থ ছাড় করার ব্যাপারেও অনুরোধ জানানো হয়। যে কারণে আইএমএফ চলতি বছরের জুনে এক সঙ্গে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণ একসঙ্গে ছাড় করার জন্য সম্মতি দেয়। 


চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে আইএমএফের প্রধান শর্ত হলো, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা ও রাজস্ব বাড়ানো। এর আগে অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। তাদের সফর সংক্রান্ত প্রতিবেদন চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আইএমএফ পরিচালনা পরিষদে উপস্থাপন করার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে তা কিছুটা পিছিয়ে যায়।

রাজস্ব আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছুদিন আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিত্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে। বাজেটের আগে এই ধরনের শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি স্টেক হোল্ডাররা ভালোভাবে মেনে নেয়নি। সর্বত্র বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি ওঠে। সেই দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত সরকার বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। তবে সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক প্রত্যাহার করলেও আগামী বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ ছাড়া রাজস্ব বোর্ডকে সংস্কারের ক্ষেত্রে বোর্ডে দুটি বিভাগে ভাগ করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে, নীতি বিভাগ। অপরটি হচ্ছে প্রশাসন বিভাগ। ইতিমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে এই ভাগ করা নিয়ে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুটি বিভাগ হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভালোভাবে কাজ করতে পারবে। 

আইএমএফের শর্ত নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখন বাজেট মৌসুম। এরপরও আইএমএফের প্রতিনিধি দল আসা মানেই হচ্ছে, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ছাড় নিয়ে আলোচনা। আলোচনায় বিনিময় হার বাজারভিত্তিক নিয়ে অগ্রাধিকার পেতে পারে। এর আগে তাদের প্রতিনিধি দল যখন এসেছিল তখন তাদের আলোচনার বিষয় ছিল রাজস্ব বাড়ানো। সরকার তখন তড়িঘড়ি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন আইটেমের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করে। কিন্তু বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের চাপের মুখে সরকার পিছু হটল। আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সংস্কারের ক্ষেত্রে দুটি বিভাগ করা আইএমএফের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে তাও দেখার বিষয়। 


ড. জাহিদ আরও বলেন, বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করার জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার দিয়েছে। এতে আইএমএফ প্রতিনিধি দল কতটা আশ্বস্ত হয় তাও দেখার বিষয়। এর পাশাপাশি তাদের আরও যে সব শর্ত রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, সারে ভর্তুকি কমানো। 

আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাধীনতার পর থেকে। এখন পর্যন্ত ১০ বার সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এসব ঋণের বিপরীতে সংস্থাটির পরামর্শে বিভিন্ন সময়ে দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কার বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে এত সংস্কারের পরও দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ প্রথম ঋণ সহায়তা নেয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে সংস্থাটির কাছ থেকে পাঁচবার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি ও স্বৈরশাসনের সময়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি না হওয়ায় সে সময় বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে ঋণের উপর নির্ভর করতে হয়। যার কারণে আইএমএফের কাছে ধরনা দিতে হয়েছে। 

১৯৯০ সালের আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের জন্য সরকারের ওপর বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার হচ্ছে মূল্যসংযোজন কর চালু করা, বাণিজ্য উদারীকরণ করার মধ্য দিয়ে আমদানি শুল্ক কমানো। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে সংস্কারের শর্ত ছিল। এই সংস্কারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা গেছে। 


বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রেও আইএমএফের প্রচণ্ড চাপ ছিল। তবে এখানেও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ছিল। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে দুটি সংস্থার শর্ত ছিল। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সফলতার মুখ দেখা গেলেও, এখনও বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে আইএমএফের শর্ত যেমন ছিল, তেমনি ছিল বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ। এসব শর্ত-পরামর্শ ব্যাংক খাতে কোনো সুফল তো বয়ে আনেনি। বরং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সংকট আর তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ তো দিনের পর দিন বাড়ছে। শুধু তাই নয়, বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে ব্যাংক জিম্মি হয়ে পড়েছে।

২০০৭-০৮ সালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের সময় আইএমএফের যে প্রতিনিধি দল আসে, সে সময় রাজস্ব দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো, রাজস্ব আয় বাড়ানো, জ্বালানি খাত, সুশাসন ও বাণিজ্য উদারীকরণের জন্য সংস্কারের পরামর্শ দেয় আইএমএফ। এর সঙ্গেও বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সম্পৃক্ত ছিল। 

২০২২ সালে বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনীতির নানামুখী সংকটে পড়ে। সংকট কাটাতে আইএমএফের কাছে হাত পাততে হয় তৎকালীন সরকারের সময়। গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের দুদিন পরই ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পাওয়া যায়। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হয় ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। তৃতীয় কিস্তি ছাড় করা হলেও এখনও চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অপেক্ষায় বাংলাদেশ।


আরও সংবাদ   বিষয়:  আইএমএফ   ঋণ   কিস্তি   অর্থনীতি  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close