প্রকাশ: শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ৫:৩৪ পিএম (ভিজিট : ৬৮)

ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এনামুল হকের ব্যক্তিগত প্রেস সচিব জিল্লুর রহমানকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। উত্তরাঞ্চলের সেই গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে রাজশাহী মহানগরের কাজলা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
এলাকায় সার জিল্লুর ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। শুধু বিএনপি, জামায়াত নয়, নিজ দলীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাগমারা এলাকায় বিভিন্ন দলের লোকজনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীও উল্লাস প্রকাশ ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন। সেই সাথে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জিল্লুর রহমান বাগমারার শ্রীপুর ইউনিয়ন লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রীপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন গাইনের ছেলে। ৫ আগস্টের আওয়ামী পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট এক শিক্ষার্থী ও এক যুবদল নেতাকে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি, মারধর, নিয়োগ-বাণিজ্য ও প্রতারণার একাধিক অভিযোগও রয়েছে। এলাকায় তার সারের ব্যবসা আছে। তাই তিনি ‘সার জিল্লুর’ নামে পরিচিত। এর আগেও তাকে আটকের চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে বারবার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরতে পারেনি।
রাজশাহী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিল্লুর রহমান পলাতক থেকে দলীয় কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। উত্তরাঞ্চলের সেই গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাগমারা থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করা হয়েছিল।
এছাড়া, তিনি কিশোরদের নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করে বিরোধী দলের কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাতেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে কোটি টাকা মূল্যের গুদাম তৈরি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বিষয়ে মামলা করতে চাইলেও তার প্রভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি, এমনকি অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা যায়নি।
জিল্লুর রহমানের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাগমারার শ্রীপুর বাঁধের বাজারের লোকজন উল্লাস প্রকাশ করেছেন। শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাফি বলেন, শ্রীপুর এলাকার ত্রাস ছিলেন জিল্লুর। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
একই কথা বলেন শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাম পারভেজ। তিনি বলেন, সার জিল্লুর ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। শুধু বিএনপি জামায়াত নয়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেল ৫টায় তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে, এবং তিনি আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেলের অ্যাডমিন ছিলেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার বিকেলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।