ই-পেপার শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫

বস্তিতে বাড়ছে পানিবাহিত চর্মরোগ, ছড়াচ্ছে আবাসিক এলাকাতেও
প্রকাশ: শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ২:৪১ এএম আপডেট: ১৫.০৩.২০২৫ ৪:১৪ এএম  (ভিজিট : ১৫৫)
বরিশাল নগরীর বস্তি থেকে আবাসিক এলাকায় নীরবে ছড়িয়ে পড়েছে চর্মরোগ। ছবি: সময়ের আলো

বরিশাল নগরীর বস্তি থেকে আবাসিক এলাকায় নীরবে ছড়িয়ে পড়েছে চর্মরোগ। ছবি: সময়ের আলো

বরিশালে পানিবাহিত চর্মরোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নগরীর বস্তি এলাকার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ ভাগই শিশু-নারী ও বৃদ্ধ। ছোঁয়াচে রোগ বলে ক্রমেই তা নগরীর ছড়াচ্ছে আবাসিক এলাকাগুলোতেও। নিচু এলাকাগুলোয় বিভিন্ন সময়ের জলাবদ্ধতায় পানির দূষণে এ রোগ ছড়াচ্ছে বলে দাবি নগর কর্তৃপক্ষের। আক্রান্তের সংখ্যা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় গরমে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছের নগরীর চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর ৫ নম্বর পলাশপুর বস্তির জনসংখ্যা ৬ হাজার ১৪৯ জন। গত এক মাসে এখানে ৩ হাজার ৭৮৮ জন ছত্রাকজনিত চুলকানি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখানকার সবাই মজা খালের পানিতে গোসল, কাপড় ও বাসন ধোয়ার কাজ করে থাকেন। এলাকাটি নিচু হওয়ায় বর্ষা ও জোয়ারে বারবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়। রোগাক্রান্তরা দিয়েছেন তাদের বর্তমান অস্থির জীবনযাপনের বর্ণনা, বলেছেন কোনো ওষুধে কাজ হচ্ছে না।

আক্রান্তদের মধ্যে রূপাতলী এলাকার হনুফা বেগম জানান, এতদিন এ রোগ আমাদের এখানে ছিল না। অল্প দিন হয় এ রোগ ছড়িয়েছে। প্রথমে দানা হয়, পরে চুলকাতে গিয়ে লাল হয়ে এর থেকে পানি বের হয়। তারপর এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। অনেক ওষুধ খেয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। রোগাক্রান্তের সারাশরীরে নিমপাতা, বরইপাতা ও কাচা হলুদ মাখিয়ে রাখছি। খালের পানি দূষিত বলে এটা হচ্ছে।

নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকার সুরমা আক্তার জানান, বিকাল থেকে সারারাত সারা শরীর চুলকায়, ঘুমুতে পারি না। ডাক্তার দেখিয়েছি ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু চুলকানিও কমে না, অসুখও সারে না। বাধ্য হয়ে আজ (শুক্রবার) কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা মেখে দিয়েছি। আমাদের এলাকার সবার অবস্থাই এরকম।

রূপাতলী এলাকার আসমা বেগম বলেন, আক্রান্ত স্থানে চুলকালে ভীষণ জ্বলে, এক পর্যায়ে রক্ত বের হয়। এরপর সারাশরীরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ব্যথা। বলেন, শরীরের চুলকানি সহ্য করতে না পেরে ঘুম থেকে উঠে গরম পানিতে নুন দিয়ে তা শরীরে ঢালি। যেখানে মলম লাগাই তার পাশ থেকে খুজলি ওঠে।

একই অবস্থা নগরীর স্টেডিয়াম কলোনি, নামার চর, ভাটার খাল, শিশুপার্ক ও বিডিএস বস্তির। নগরীর অন্য ১৮টি বস্তির সবগুলোতেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলেও এসব বস্তির শতকরা ৮০ ভাগ শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

বরিশালে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞরা জানালেন আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এ রোগের চিকিৎসা নিতে আসছেন। তবে চিকিৎসার কোর্স শেষ না করায় ছত্রাকের ভয়াবহতা বাড়ছে বলে তাদের ধারণা। এ নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রেজওয়ান কায়সার বলেন, আগেও আমাদের কাছে এমন রোগী আসত কিন্তু তার সংখ্যা ছিল কম। তবে গত কয়েক মাস থেকে অনেক বেশি চর্ম রোগী আসছেন। আমরা ভয় পাচ্ছি যে আসছে গরমে এ রোগীর সংখ্যা আরও বেশি বাড়বে তখন এদের কীভাবে ম্যানেজ করা হবে। এটাও চিন্তার বিষয়। শুধু ওষুধ নয়, এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে কিছু নিয়ম মানতে হয়। বেশিরভাগ রোগী তা মানে না। বেশিরভাগ রোগী অর্ধেক পথে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। কোর্স শেষ করেন না। তারা যদি পুনরায় আক্রান্ত হন সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই রোগের ভয়াবহতা বেশি থাকে। কাজেই রোগের শুরু থেকে রোগীর আশপাশে যারা থাকেন তাদের সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। 

বরিশাল সিটি এলাকার বস্তির সীমানা পেরিয়ে এই রোগ ক্রমেই অন্য আবাসিক এলাকাগুলোতেও সংক্রমিত হচ্ছে। তবে অনুচ্চারিত বলে এ নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন এখনও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তারা এটিকে পানি ও ড্রেনেজ সমস্যায় সৃষ্ট বলে দাবি করছেন।

বিসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মঞ্জুরুল ইমাম বলেন, এসব এলাকায় স্ক্যাবিসের (চুলকানি) প্রচণ্ড সমস্যা রয়েছে তার অন্যতম কারণ প্রাত্যহিক জীবনে পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং পানিপ্রবাহ। আমরা এ সমস্যা সমাধানে পানি পরীক্ষাসহ অন্য কাজ শুরু করছি। বেশিরভাগ বস্তিতে পরিষ্কার স্বাদু পানির অভাব এবং অকার্যকর ড্রেন সমস্যা চোখে পড়েছে। এসব স্থানে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। এ স্থানগুলোয় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। রোগাক্রান্তরা যাতে স্বাস্থ্যগত সুবিধা পায় তার জন্য আমরা বিভিন্ন এনজিওর সহায়তা নেওয়ার কাজও করে যাচ্ছি। 

এ সমস্যার কথা স্বীকার করে বরিশালের স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এ বছর স্ক্যাবিস আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি বলে আমরা খবর পাচ্ছি। এটা ছোঁয়াচে রোগ। জনবহুল এলাকায় এ রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় আমরা এ রোগাক্রান্তদের সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে এক্ষেত্রে রোগীদের চিকিৎসকের সব উপদেশ মেনে চলতে হবে এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close