
জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইমি ও তার সঙ্গীরা। ছবি : সময়ের আলো
কবিতা চাকমার আলোচিত পঙক্তি ‘জ্বলি ন উধিম কিত্তেই’ অর্থাৎ ‘রুখে দাঁড়াবো না কেন!’ এই স্লোগান নিয়ে শাহবাগে টানা ৭ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এক নারী। তার নাম শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি (সহ-সভাপতি)।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় সময়ের আলোকে ইমি জানান, সারাদেশে চলমান অস্থিরতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে ৫ দফা দাবিতে শাহবাগে অবস্থান করছেন তিনি। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
ইমি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি তার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এর জন্য যত দিন তাকে এ আন্দোলন করে যেতে হয়, তিনি করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সময়ের আলোকে জানালেন দুঃখের কথাও। বললেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ধুলোবালি, শব্দ দূষণসহ নানা কারণে রাস্তায় ঘুমাতে তার সমস্যা হচ্ছে। ওয়াশরুম ইউজ করা একটা বড় সমস্যা। তবুও ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা যেন বন্ধ হয়, এসবের যেন উপযুক্ত বিচার হয়, এ জন্য তিনি প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরাসরি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন ইমি। বিভিন্ন সময় তিনি পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন। তবুও দমে যাননি। এবার সরব হয়েছেন ধর্ষণের প্রতিবাদে। গত ৮ মার্চ থেকে তিনি শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইমির পাঁচ দফা হলো— ১. ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিচার কার্যক্রম নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করা এবং দ্রুত রায় কার্যকর করা।
২. প্রতিটি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে একটি ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস রেসপন্স টিম গঠন করা। একই সঙ্গে খানার অভ্যন্তরে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যেখানে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত সহায়তা ও মানসিক সমর্থন সেবা দেওয়া হবে।
৩. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-১৪ সংশোধনপূর্বক ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে সেই ধারায় সংবাদমাধ্যমের সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও যুক্ত করা।
৪. ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের মানসিক,শারীরিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নেওয়া।
৫. নারী ও শিশুর উপর সংঘটিত সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা। এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি শ্রেণি-স্তরের নারী ও শিশুদেরকে সচেতন করা যাবে। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা পাঠদানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।