প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫, ৩:১৮ পিএম (ভিজিট : ১৩৪)

বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ইফতার করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সময়ের আলো
গোধূলি বেলায় শেষ বিকালের নরম রোদ গায়ে মেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে বৃত্তাকার হয়ে ইফতার করেন ১০ থেকে ১৫ জন বন্ধু। বৃত্তের ঠিক মাঝখানে বিছানো পত্রিকা। তাতে ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, ধনে পাতা, ঘুগনি একসঙ্গে মেশানো। পাশেই পলিথিনে আছে পেয়ারা আর তরমুজ। সবার অপেক্ষা মাগরিবের আজানের। ইফতার সামগ্রী খুব দামি না হলেও এতেই সবাই খুশি। পরিমাণে খুব অল্প তবু সবার চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস অনেক বেশি। সারা দিনের ক্লান্তি যেন হার মেনেছে এই মুহূর্তের কাছে। কষ্ট হলেও সবাই মশগুল ইফতার আড্ডায়, তবে কেউ কেউ ব্যস্ত ছিলেন শেষ মুহূর্তের শরবত বা অন্য সামগ্রী তৈরিতে। যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রকাশ ঘটেছে বন্ধুত্বের সম্প্রীতির ইফতার।
বুধবার বিকালে পুরান ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে এমন চিত্র দেখা যায়। শহিদ মিনার ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, ভাষাশহিদ রফিক ভবন, শহিদ সাজিদ ভবন, কাঁঠাল তলা, মুক্ত মঞ্চ, সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতেও এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
বাঁধাধরা নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলে না কিছুই। কখনো রোজার প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয় আবার কখনো রোজার শেষের দিকে। এবার বিশ্ববিদ্যালয় রোজার শেষের দিকেই বন্ধ হচ্ছে। তবে শুরু হয়েছে অনলাইনে ক্লাস, সশরীরে চলছে পরীক্ষা। অনলাইনে ক্লাস আরম্ভ হলেও টিউশনি থাকায় অনেকের ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এখনও প্রাণবন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের নিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে ইফতারের আয়োজনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে সেহরি-ইফতার করতে না পারার কষ্ট এভাবেই ভুলে থাকতে চান। বিকাল গড়াতেই ইফতারসামগ্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় জায়গায় জড়ো হন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্ধুরা।
কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া ও বাইরের দোকানগুলো থেকে ইফতার সামগ্রীর পার্সেল নেন। বিগত বছরের ন্যায় এবারও ক্যাফেটেরিয়ায় ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাফেটেরিয়ার এ ইফতারি প্যাকেজে রয়েছে অনেকগুলো আইটেম। প্যাকেজে আছে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, আলুর চপ, পিয়াজু, খেজুর ও শরবত।
ক্যাম্পাসে ইফতারে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি-উচ্ছ্বাস একটু বেশিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, পরিবার ছেড়ে বাইরে প্রথম রমজান। বাবা-মার সঙ্গে রোজা পালন করতে পারছি না, কিন্তু বন্ধুরা আছে। বিভাগ ও সংগঠনের সিনিয়ররাও আছে। সবাই একসঙ্গে ইফতারি করছি। সকলে মিলে একসঙ্গে ইফতারি করাতে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। ভালো লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী রাতুল সময়ের আলোকে বলেন, পরিবার ছাড়া ইফতারি করেছি আমার জীবনে এমন ঘটনা খুব কম। পরিবার ছাড়া ইফতারি করতে একটু খারাপ লাগছে। তবে বন্ধুদের সঙ্গে বসে ইফতারি করতে পেরে পরিবারের সঙ্গে ইফতারি করার কষ্ট অনেকটা ভুলে গেছি। একসঙ্গে ইফতারের জন্য ফলমূলসহ যাবতীয় সবকিছু কিনেছি। সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতারি তৈরি করেছি। সবমিলিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে বসে এ বছরের রমজানে ইফতারি করতে পেরে ভালোই লাগেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম বলেন, আমি সাধারণত ক্যাম্পাসে ইফতারি করি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে আছি। এখানে সব সদস্য মিলে একসঙ্গে ইফতারের আয়োজন করি। বড়ভাই-ছোটভাই মিলে এখানে দারুণ এক মেলবন্ধন।
ক্যাম্পাসে ইফতার করতে এসেছেন সদ্য অনার্স শেষ করা শিক্ষার্থী জসিম শিকদার। তার সঙ্গে কথা হলে জানান, অনার্স শেষ করার পর ক্যাম্পাসে তেমন আসা হয় না। কারণ এখনও মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়নি। তবে আজকে (গতকাল) বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ছলে ক্যাম্পাসে ইফতারি করে সত্যি অনেক ভালো লাগল। কিছু সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গেও দেখা হয়ে গেল। দীর্ঘদিন পর সবার সঙ্গে দেখা হয়ে অনেক ভালো লাগল। ইফতার শেষে কিছু সময় তাদের সঙ্গে আড্ডা দিলাম। বাবা-মা ছাড়া এত দূরে একা একা ইফতারের মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারি করলে বেশ ভালোই লাগে। তাই মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসে ইফতারের চেষ্টা করি।