
মস্কোতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন রুশ মুখপাত্র রুশ মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনে যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে একে দীর্ঘায়িত করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। এ ছাড়া ইউরোপ ইউক্রেনে শান্তি চায় না বলেও মন্তব্য করেন এ মুখপাত্র।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আয়োজিত বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে মস্কোতে বৃহস্পতিবার তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রশ্নের জবাবে রুশ মুখপাত্র এসব অভিযোগ করেছেন বলে শুক্রবার (১৪ মার্চ) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থাটি।
মস্কোর পক্ষ থেকে এমন সময় এসব মন্তব্য আসল, যখন দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো সংঘাত বন্ধে জোর প্রচেষ্টার চালাচ্ছে ।
সংবাদ সম্মেলনে রুশ মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘জার্মানি এবং ফ্রান্স পূর্ব ইউক্রেনের ওপর ২০১৪-২০১৫ সালের মিনস্ক চুক্তি লঙ্ঘনের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে। অন্যদিকে ব্রিটেন ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা থেকে বিরত করেছে। এসবই প্রমাণ করে ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য আদৌ চেষ্টা করেনি এবং এজন্যই ইউক্রেন বিষয়ে তাদের অবস্থান অপ্রাসঙ্গিক।
তিনি বলেন, ‘যদি তারা তাদের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে — যা বর্তমানে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং রুশোফোবিয়ার ওপর ভিত্তি করে তৈরি — তাহলে আমরা এটি বিবেচনা করব। কিন্তু আপাতত, তাদের উন্মত্ত অবস্থান বিবেচনা করার কোনও ভিত্তি নেই।”
জাখারোভা আরও দাবি করেন যে, ইউরোপীয় দেশগুলো সক্রিয়ভাবে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিরোধিতা করছে। ইউরোপের কিছু রাজনৈতিক শক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনা শুরু করার যে কোনও প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, ‘তারা (ইউরোপীয় দেশগুলো) শান্তি এবং সমাধান শব্দগুলো নিয়েই অস্বস্তিতে রয়েছে। তারা এটি চায়ই না। তাদের লক্ষ্য হলো উত্তেজনা বৃদ্ধি করা এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা। (ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির) জেলেনস্কি এবং তাকে সমর্থনকারী ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনে আরও অস্ত্র সরবরাহের জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছেন।’
ইউরোপ ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর কথা ভাবছে এমন খবরের বিষয়ে জাখারোভা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘যে কোনও অজুহাতে (ইউক্রেনে) বিদেশি সামরিক ইউনিট বা ঘাঁটি মোতায়েনের বিষয়টি হবে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘এর অর্থ হবে যে— ওই দেশগুলো সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। আমরা আমাদের হাতে থাকা সমস্ত উপায় দিয়ে এর জবাব দেব। এই ধরনের পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে আরও খারাপ করতে পারে।’
ইউরোপের সামরিক গঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি যুক্তি দেন, ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে এই মহাদেশে সংঘাতকে আরও উস্কে দেওয়া।
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বিষয়ে জাখারোভা বলেন, ‘ওয়াশিংটনের কাছ থেকে সম্পর্ক উন্নত করার ইচ্ছাকে স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো। তবে তিনি বলেন, ‘কথাগুলোকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমেই এগিয়ে নেওয়া উচিত, কারণ আমরা আগে দেখেছি যে তাদের কথা প্রায়শই তাদের কাজের সাথে মিলে না।’