প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ৯:২০ পিএম আপডেট: ১৩.০৩.২০২৫ ৯:২৮ পিএম (ভিজিট : ২০৩)

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মশাল মিছিল। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণের দাবিতে মশাল মিছিল করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি জোট। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এই মশাল মিছিল শুরু হয়।
মিছিলটি নীলক্ষেত হয়ে হলপাড়া ঘুরে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়। মিছিলের আগে তারা শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। এ সময় মাগুরার ৮ বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যার বিচারসহ একাধিক দাবি তোলেন সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
মিছিলে ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘আছিয়ার হত্যাকারীদের, বিচার করো করতে হবে’, ‘খুন ধর্ষণ হয়নি শেষ, রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘আছিয়া মরলো কেন, রাষ্ট্র জবাব চাই’, ‘ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ করতে হবে’, ‘খুন ধর্ষণ যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’, ‘খুন ধর্ষণ নিপীড়ন রুখে দাও জনগণ’, ‘হামলা-মামলা-হুলিয়া নিতে হবে তুলিয়া’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মিছিল শুরুর আগে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আজ ধর্ষণের শিকার হয়ে আমাদের বোন আছিয়ার মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর সঙ্গে আমরা কেউ প্রতারণা করবো না। এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করিয়েই আমরা আমাদের আন্দোলন শেষ করবো। যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এদেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না তার এই পদে থাকার কোনো দরকার নেই।

তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর ধর্ষণের বিচার চেয়ে যখন আমরা স্মারকলিপি দিতে গেলাম পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করলো। আমাদের নামে মামলাও হয়েছে। এই পুলিশ এদেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, পুলিশ আমাদের বোনদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, কিন্তু এই পুলিশ এদেশের সব আন্দোলনে তাদের যে হামলা-মামলা-নির্যাতন সেটি খুব নিখুঁতভাবে করে।
ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, পুলিশের গেঞ্জি ছেঁড়া নিয়ে যারা কান্নাকাটি করছে তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার মেট্রোরেলের পিলার ধরে কান্নার কোনও পার্থক্য নেই। তাদের একটাই নাম, তারা দালাল। যারা এই সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তুলবে না, ধর্ষণের বিরুদ্ধে আঙুল তুলবে না, সেই প্রত্যেকটা আঙুল দালালের আঙুল। তাদের প্রতিটা নিশ্বাস দালালের নিশ্বাস।
এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে আছিয়ার জানাজা শেষে আছিয়ার আদি নিবাস শ্রীপুরের সোনাইকুন্ডীতে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে ইফতারের আগ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তার মরদেহ মাগুরায় নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ওই শিশুটি। পরদিন তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর গত শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন রোববার শিশুটিকে সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়া হয়। আজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে চারজনের নামে মামলা করেন। ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব (১৮), সজীবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।