
সেনাবাহিনীর উদ্ধার অভিযানের পর নিরাপদে স্টেশন ছাড়ছেন যাত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে প্রাদেশিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে ছিনতাই ট্রেনে থেকে জিম্মি যাত্রীদের মুক্ত করতে বিশেষ সামরিক অভিযান শেষ হয়েছে বলে এক ঘোষণায় জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সব হামলাকারীকে হত্যা করে আটক সকল যাত্রীকে মুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে, অভিযান শুরুর আগেই ২১ যাত্রী হামলাকারীদের হাতে নিহত হন।
ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনসের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী পাকিস্তানের জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ সকল বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এই জটিল অভিযানে পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ), স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ (এসএসজি), সেনাবাহিনী ও ফ্রন্টিয়ার কর্পস (এফসি) অংশ নিয়েছিল। সাক্ষাৎকারে তিনি পুরো সামরিক অভিযানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরেন।
এ সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, গত ১১ মার্চ সন্ত্রাসীরা বোলান এলাকায় রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে ট্রেন ছিনতাই করে যাত্রীদের জিম্মি করে। তারা নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যাত্রীদের আত্মঘাতী হামলাকারীদের সঙ্গে মিশিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর স্নাইপাররা তাদের চিহ্নিত করে নির্মূল করেছে।
আইএসপিআর মহাপরিচালক আরও জানান, অভিযানের সময় সন্ত্রাসীরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে আফগানিস্তানে অবস্থানরত তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল।
তবে মোট কতজন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে সেই তথ্য জানাননি তিনি। অভিযানের প্রথম ধাপে ১০০ যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়, পরে আরও অনেককে মুক্ত করা হয়। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ট্রেন ও আশপাশের এলাকা পরীক্ষা করছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী আরও জানিয়েছেন যে, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী এই হামলার পরিকল্পনা আফগানিস্তান থেকে করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হচ্ছিল।
মুক্ত হওয়া একজন যাত্রী ছিনতাই হওয়া ট্রেন থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং নিরাপত্তা অভিযানে সেনাবাহিনী ও এফসি সদস্যদের প্রচেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন।
উদ্ধার হওয়া যাত্রী বলেন, গোলাগুলি হয়েছিল, কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেনাবাহিনী ও এফসি সদস্যরা আমাদের নিরাপদে সরিয়ে এনেছেন।
ট্রেনে মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ করছিলেন মুহাম্মদ বিলাল। তিনি বলেছেন, আমরা কীভাবে পালাতে পেরেছি তা বর্ণনা করার মতো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। এটি ছিল ভয়াবহ।
এ ঘটনায় কোয়েটা থেকে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে চলাচলকারী জাফর এক্সপ্রেস ও বোলান মেইল ট্রেন তিনদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পাকিস্তানের জনগণ হতবাক ও মর্মাহত হলেও সরকার ও সেনাবাহিনী জোর দিয়ে বলছে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের অভিযান থামবে না।
পাকিস্তান সরকার জানায়, তাদের আশা আফগানিস্তানের তালেবান সরকার তাদের ভূমি সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের অনুমতি দেবে না।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি সফল অভিযানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নিহত ২১ জন বেসামরিক নাগরিক ও চার এফসি সদস্যের জন্য শোকপ্রকাশ করেছেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফও সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেছেন, এই অভিযান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পেশাদারত্ব ও দক্ষ নেতৃত্বের প্রতিফলন। তিনি বৃহস্পতিবার বেলুচিস্তান সফরের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন।