ই-পেপার শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫
শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫

রমজানে কথাবার্তায়ও সংযম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ৯:০৬ এএম  (ভিজিট : ১৫৬)
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

আল্লাহ তায়ালা রোজা ফরজ করেছেন আমাদের মুত্তাকি বানানোর জন্য। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি (পরহেজগার) হতে পারো’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)। আর তাকওয়ার গুণ অর্জনের জন্য চোখের হেফাজত ও অন্যান্য আমলের সঙ্গে জবান (মুখে কথা বলা) সংযত রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ‘জবান’ আমাদের দেওয়া আল্লাহ তায়ালার অসীম নেয়ামত। এটি এমন এক স্বয়ংক্রিয় মেশিন যা কোনো ধরনের জ্বালানি, সার্ভিসিং চার্জ কিংবা মেরামত ছাড়া জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে। মনের ভাব থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় জবানের মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করে থাকি। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, দামি এ নেয়ামতের কদর আমাদের কাছে নেই। কারণ এটি অর্জনে আমরা কোনো পরিশ্রম করিনি, টাকা-পয়সা খরচ করতে হয়নি। অন্যান্য ফ্রি জিনিসের যেমন কদর থাকে না এটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ফলে আমরা এর অপব্যবহার করেই চলছি। আমাদের চারপাশের বাকশক্তিহীন মানুষ বুঝে জবান কত বড় নেয়ামত।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে (বুখারি : হাদিস ৫৫৯৩)। মুহাদ্দিসগণ বলেন, হাদিসটিতে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ধরনের ফালতু, অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা ও কল্যাণকর কথামালার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। সুতরাং জবানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন যেন এর দ্বারা গুনাহ না হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা মস্তিষ্ক ও জবানের মধ্যে অটোমেটিক সূক্ষ্ম কানেকশন তৈরি করে রেখেছেন। মস্তিষ্ক যখন ইচ্ছা করে জবান কথা বলুক, জবান বলতে শুরু করে। কথা বলার এ যন্ত্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিতেন তা হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। কেননা কোন শব্দ জবান কীভাবে ঘোরালে উচ্চারিত হবে এটা শিখতেই বনি আদম হাঁপিয়ে উঠত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তা করেননি। জন্মগতভাবেই আমাদের মধ্যে কুদরতের কারিশমা দিয়ে বাকশক্তির অমূল্য গুণ রেখেছেন যা দ্বারা আমরা অবলীলায় বলেই যাচ্ছি।

জবান দামি সম্পদ। এর সঠিক ব্যবহার করা চাই। একজন জাহান্নামি কাফের জবান দিয়ে কালিমা উচ্চারণ করে মুসলমান হলে সঙ্গে সঙ্গে তার জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আল্লাহর অভিসম্পাতে অভিশপ্ত এ ব্যক্তি জবানের কারণেই রহমতপ্রাপ্ত জান্নাতি বান্দাদের তালিকাভুক্ত হয়। জবানকে জিকিরের মাধ্যমে সতেজ রাখা চাই। হাদিসে এসেছে, কোনো ঈমানদার যখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে এর দ্বারা মিজানের পাল্লা অর্ধেক ভরে যায়। বুখারি শরিফের শেষ হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দুটি কালিমা যা দয়াময় আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়! উচ্চারণে অতি সহজ তবে মিজানের পাল্লায় অধিক ভারী, তা হলো ‘সুবহানাল্লাহি ওবি হামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’। অনুরূপভাবে জবান দ্বারা বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত ও দ্বীনি জ্ঞানচর্চা করা চাই। সুনান ইবনে মাজায় রয়েছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অনেক মানুষ জবানের গুনাহের কারণে জাহান্নামে যাবে (হাদিস ৩৯৭৩)। সুতরাং মিথ্যা, গিবত, চোগলখোরি, অশ্লীল কথাবার্তা ইত্যাদি অবশ্যই পরিত্যাগ করা দরকার। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) একবার জিহ্বা টেনে ধরে বসেছিলেন এবং তা মোচড়াচ্ছিলেন। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল আপনি এমনটি কেন করছেন? তিনি উত্তর দিলেন এ জিহ্বাই আমাকে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সুতরাং একে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আরেক বর্ণনায় এসেছে তিনি মুখে কংকর এঁটে বসেছিলেন যেন জবান থেকে অনর্থক কথা বের না হয়।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার জবান এবং হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে (বুখারি : হাদিস ৯)। তাই আমাদের উচিত জবানকে সংযত রাখা। কারণ জবান থেকে কখনো এমন কথা বের হয় যা দ্বারা অন্যের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। দুনিয়াতে তলোয়ারসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্রের আঘাতের জন্য বিভিন্ন প্রতিষেধক আছে অর্থাৎ তা নিরাময়যোগ্য কিন্তু কথার দ্বারা যে আঘাত দেওয়া হয় তা নিরাময়ে কোনো প্রতিষেধক নেই। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ করে বলেন, আল্লাহর রহমতে আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছেন, যদি আপনি কর্কশভাষী ও কঠিন হৃদয় হতেন তবে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত (সুরা আলে ইমরান : আয়াত : ১৫৯)। আয়াতে কারিমা দ্বারা বোঝা যায় কোমল হৃদয় ও মিষ্টভাষী হওয়া আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির লক্ষণ। যেটি অর্জনে সবারই চেষ্টা করা উচিত। পবিত্র এ রমজানে আমরা অনেক কষ্ট করে রোজা রাখি। কিন্তু জবান সংযত না রাখলে রোজা মাকরুহ ও হালকা হয়ে যায়। সুপ্রসিদ্ধ ফতোয়ার কিতাব ‘দুররে মুখতার’ (২/৪১৬) এর মধ্যে রোজা মাকরুহ হওয়ার যে কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তন্মধ্যে প্রধানত কয়েকটি হচ্ছে ‘মিথ্যা কথা বলা, গিবত বা চোগলখোরি করা, গালাগালি ও ঝগড়া-ফাসাদ করা। দেখুন, রোজা মাকরুহ হওয়ার প্রধান কয়েকটি কারণই জবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই আমাদের উচিত, চলমান এ রমজানে অতীতে জবান সংযত না রাখার গুনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা ও ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। কারণ জবান সংযত রাখার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close