প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ৮:৪৭ এএম (ভিজিট : ৬০)

ছবি : সময়ের আলো
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতি বাজারে স্থাপিত অফিসে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে কার্যক্রম চলে আসছে বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়ন ভূমি (তহশিল) অফিসের। সরকারি জমি দখলমুক্ত রাখা এ দুটি অফিসের দায়িত্ব হলেও মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যেই দখল হয়ে গেছে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী একটি সরকারি খাল। রামগতি বাজার খাল নামে পরিচিত ওই খালটি স্থানীয় তিন শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করায় খালের অস্তিত্ব এখন বিলীনের পথে। দখল-দূষণের মহোৎসব চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাল দখলে কোনো বাধা দেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এতে করে খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে পদক্ষেপ না নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ প্রসঙ্গে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, এসি ল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে খালটি দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
রামগতি উপজলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, রামগতি বাজার খাল দখলের বিষয়ে স্থানীয় ভূমি অফিসের মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া হবে। খালটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন এই ভূমি কর্মকর্তা।
বড়খেরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, এখানে নতুন এসেছি। শুনেছি রামগতি বাজার খাল দখল করে নিয়েছেন এমন তিন শতাধিক দখলদারকে চিহ্নিত করে উপজেলা ভূমি অফিসে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। তবে দখলদারদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানান বড়খেরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোবারক হোসেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দশক আগে উপজেলার চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা এ খাল দিয়ে পানি মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হতো। কিন্তু খালটি বাজার সংলগ্ন হওয়ায় তিন যুগ আগে দখলদারদের কবলে পড়ে। খালটি দখল করে ইতিমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকশ দোকানঘর। ফলে জলাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।
সরেজমিন দেখা গেছে, খালের ওপর নির্মাণ করা দোকান ঘরে জননী টেলিকম, বিসমিল্লাহ হোটেল, সৌদিয়া বস্ত্র বিতান, সুমাইয়া হোটেল, সোহেল ইলেকট্রনিক্স, মা ক্রোকারিজ, রফরফ স্টোর, অপরূপ হোন্ডা সার্ভিসিং সেন্টার ও মেঘনা স্টুডিওসহ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এগুলো ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দখলদাররা। আর এ টাকার একটা অংশ স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সহায়তায় বিভিন্ন দফতরের কর্তাব্যক্তিদের পকেটে যাচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় কৃষক মো. ইউনুছ আলী, রফিকউল্লাহ ও আবদুল ওদুদ জানান, একসময় এ অঞ্চলের কৃষকদের জমির পানি রামগতি বাজার খাল দিয়ে মেঘনা নদীতে যেত। কৃষিজমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ভরসা ছিল এ খাল। খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালটি পুনরুদ্ধারের দাবি তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি জানান, রামগতি বাজার খাল দখল করে নির্মাণ করা দোকানঘর থেকে মাসিক চাঁদা তোলা হয় যার একটা অংশ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসকে দেওয়া হয়। এ কারণে তারা শুধু দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করেই কাজ শেষ করেন। উচ্ছেদ কার্যকর করতে কোনো উদ্যোগ নেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত ইয়াসিন ফারুক নামের এক ব্যক্তি জানান, ওই খালটি তাদের জায়গায় খনন করা হয়েছে। তাই তারা দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। নাছির উদ্দিন ও মাঈন উদ্দিন নামের আরও দুজন জানান, তাদের দোকানের কিছু অংশ খালের ওপর পড়েছে। সরকার চাইলে খালের জায়গা ছেড়ে দেবেন। তবে এখন পর্যন্ত দখল ছেড়ে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নোটিস বা নির্দেশনা পাননি তারা।