ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫
বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫

কালভার্টে বদলে গেল ১০ গ্রামের ভাগ্য
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ৮:৪৫ এএম  (ভিজিট : ৭০)
ছবি : সময়ের আলো

ছবি : সময়ের আলো

নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে ছোট দুটি কালভার্ট। আধা কিলোমিটার দূরত্বে নির্মিত জোড়া কালভার্টের কল্যাণে ডুংকুরিয়া বিল এলাকার বহু কৃষকের ভাগ্যের চাকা খুলে গেছে। এলাকার সবাই কম-বেশি উপকার পেলেও সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন জলাবদ্ধতার অভিশাপে নিমজ্জিত থাকা এই অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা। ঘুরে দাঁড়িয়েছে কৃষি অর্থনীতি। আর্থিক সচ্ছলতায় প্রাণ ফিরে পেয়েছেন গ্রামীণ জনপদের খেটে খাওয়া মানুষ। এখন এই বিল সংলগ্ন কৃষিজমিতে সোনার ফসল ফলিয়ে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে বছরে শতকোটি টাকা আয় করছেন চাষিরা। এ ছাড়া সহজেই ঘেরের মাছ পরিবহন করতে পারায় হাসি ফুটেছে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মুখেও।

সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীত সময়ে বর্ষা মৌসুমে এই বিলের প্রায় পাঁচ হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে থাকত বছরের ৯ মাস। ফলে বিল অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষকে নির্ভর করতে হতো এক মৌসুমে ধান চাষের ওপর। স্থানীয়দের আর্থিক সচ্ছলতার প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল জলাবদ্ধতা। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বছরের বেশিরভাগ সময় পানিতে তলিয়ে থাকত কৃষিজমি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বছর দুয়েক আগে পানি নিষ্কাশনের খাল কাটা হলেও মেলেনি স্থায়ী সমাধান। গত অর্থবছরে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ঐকান্তিক চেষ্টায় আধা কিলোমিটার দূরত্বে দুটি কালভার্ট তৈরি করে দেয় সরকার। এতে বদলে যায় স্থানীয়দের জীবনমান, গতি পায় কৃষি অর্থনীতি। এখন এখানকার মানুষের প্রধান পেশা হয়ে উঠেছে চাষাবাদ। মৎস্য চাষও বেড়ে গেছে আগের চেয়ে বহুগুণ। বছরে দুবার ফলছে বাড়তি ফসল সোনার ধান। এখন সোনালি দিন হাতছানি দিচ্ছে বহু বছর বঞ্চিত থাকা কৃষকদের ঘরে ঘরে।

এ বিষয়ে বিছালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেমায়েত হোসেন ফারুক বলেন, কৃষকরা এখন ওই বিলের প্রায় হাজার পাঁচেক একর জায়গায় হাজার খানেক ছোট-বড় ঘের কেটে মাছ চাষ করছেন। সেই মাছ এলাকার চাহিদা মেটাচ্ছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের চাহিদাও মেটাচ্ছে নড়াইলের মাছ। এ ছাড়া বিল এলাকায় কৃষিজমিতে ফসল ও নানা ধরনের সবজি চাষ করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। এই পরিকল্পনার অংশ হতে পেরে এলাকাবাসীর পাশাপাশি খুশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা জায়, জেলার এই অঞ্চলের কৃষকদের বহু বছরের দুঃখ ছিল ডুংকুরিয়া বিলের জলাবদ্ধতা। ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে পানি নিষ্কাশনে বিলের চারপাশে কাটা হয় একটি খাল। তাতে আংশিক সমাধান মিললেও বাধ সাধে সরাসরি যোগাযোগ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া যাতায়াত সমস্যায় পড়তে হয় কৃষককে। উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে নানা ঝক্কি পোহাতে হয় তাদের। এরপর কাজ শুরু হয় সমস্যা সমাধানের নতুন কৌশল নিয়ে। জনপ্রতিধিদের প্রয়াস এবং রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় আধা কিলোমিটার দূরত্বে তৈরি করা হয় দুটি কালভার্ট। আর তাতেই মেলে সমাধান। সরকারি অর্থায়নে খালের ওপর তৈরি কালভার্ট দিয়ে বর্ষার পানি বের হয়ে যাওয়ায় ইউনিয়নের বন খলিশাখালি, রুখালি, আকবপুর, চাকই, মধুরগাতি, বিছালি, রুন্দিয়া, হাটঘড়া, চর খলিশাখালি ও বড়ালÑএই দশটি গ্রামের কৃষকদের মুখে ফোটে খুশির ঝিলিক। দুর্দান্ত গতিতে ঘুরতে থাকে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা।

বন খলিশাখালি গ্রামের কৃষক অসীম বিশ্বাস বলেন, আমার দশ বিঘা জমি আছে বিলের মধ্যে। জমিতে বুক সমান জল থাকায় বছরের ৯ মাসই কোনো ফসল পেতাম না। কৃষক অসীম বিশ্বাস আরও বলেন, এখন আমরা জমিতে ধানও পাচ্ছি, আবার ঘেরের পাড়ে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি লাগিয়ে বিক্রিও করছি। তাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারও ভালো চলছে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মাঠে উৎপাদিত ফসল আর ঘেরের মাছ পরিবহনের জন্য সংযোগ ব্রিজ স্থাপনের। অবশেষে দুটি ব্রিজ হওয়ায় এলাকার বিভিন্ন গ্রামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এতে সহজেই বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও মাছ পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করেছে এই দুটি ব্রিজ। এতে আমাদের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close