প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ৮:৩৩ এএম আপডেট: ১৩.০৩.২০২৫ ৭:৪৮ পিএম (ভিজিট : ২৫৯)

ছবি : সংগৃহীত
নতুন আত্মপ্রকাশ করা ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) কৌশলে চাপে রাখবে বিএনপি। মাঠে কথার লড়াই চালালেও এখনই মুখোমুখি অবস্থানে যাবে না দলটির নেতাকর্মীরা। আপাতত ছাত্রদের রাজনৈতিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে। নতুন দলের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সরব থাকবে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কথায় বিষয়গুলো উঠে এসেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের আহ্বায়ক হিসেবে আছেন উপদেষ্টার পদ ছেড়ে আসা নাহিদ ইসলাম। আর সদস্য সচিব আখতার হোসেন। শিক্ষার্থীদের নতুন এই রাজনৈতিক দল দ্রুত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে। তারা জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচন চায়। গণপরিষদের মাধ্যমে ‘নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এগুলো দলটির অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। এ ছাড়া সংস্কার শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল।
সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, সংস্কার পুরোপুরি শেষ করে নির্বাচন চাইলে সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের প্রথমার্ধে করা সম্ভব হবে। আর অল্প সংস্কার চাইলে এ বছর ডিসেম্বরে ভোট হতে পারে। সরকার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের তার ভিত্তিতে নির্বাচন কথাও বলছে। অন্যদিকে বিএনপি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে।
শুরু থেকে বিএনপির তরফ থেকে নতুন দলকে স্বাগত জানানোর কথা বলা হলেও ছাত্রদের কোনো উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছে না তারা। বিশেষ করে ছাত্রদের এই সেকেন্ড রিপাবলিকের দাবিকে ভিন্ন চোখে দেখছে বিএনপি। ইতিমধ্যে বিএনপি নেতারা ছাত্রদের দাবির সমালোচনা করেছেন। ঈদের পর তারা জনগণের কাছে এই মুহূর্তে এসব বিষয়ের যৌক্তিকতা আছে কি না; বিস্তারিত তুলে ধরবেন। ছাত্ররা যাতে এসব দাবি কোনোভাবে প্রতিষ্ঠা করতে না পারে সে জন্য বিএনপি বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে। রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা থেকে সামাজিক মাধ্যম কিংবা টেলিভিশন টকশোÑসবখানে বিএনপি নেতারা ছাত্রদের দাবির বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরবেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ সময়ের আলোকে বলেন, প্রথমত ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের ভিত্তি কি? অস্তিত্ব কি? এগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। আমরা সেগুলোতে যেতে চাই না। তারা একেক দিন একেক দাবি করছে; করুক। এখন গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবাই নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করছে। বাক-স্বাধীনতা রয়েছে। এই সুযোগে ছাত্ররা বলে যাচ্ছে; বলুক। তবে নির্বাচন দিতে হবে যথাসময়ে। নইলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ভোটের ব্যবস্থা করতে যত দেরি সরকার তত সমর্থন হারাবে। রাজনৈতিক দলগুলো আগের মতো সহযোগিতা করবে না। বিএনপির এই নেতা মনে করেন, ছাত্রদের দাবি জোরালো হবে না। কারণ তারা জনসমর্থন পাবে না।
নাম প্রকাশে আরেকজন নেতা সময়ের আলোকে বলেন, ছাত্রদের কথা শুনলে সরকার নিজের বিপদ ডেকে আনবে। মাঠে সরকারকে আমরা এখনও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। যখন আমাদের শীর্ষনেতা সরকারকে নিয়ে নেতিবাচক বলা শুরু করবেন; আমরাও তখন সরকারকে সহযোগিতা করব না। শুধু ছাত্রদের ওপর ভর করে সরকার চলতে পারবে না। তাদেরকে নির্বাচন দিতেই হবে।
এনসিপি নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার চিন্তা করছে। ঈদের পরেই মহানগর ও জেলা সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে নামার কথা জানিয়েছে দলটির নেতারা। নাগরিক পার্টি এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এসব বিষয়ে নজরদারি করছে বিএনপি নেতারা।
বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা জানান, এনসিপির নেতারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। তারা সেগুলো ফলাও করে সামনে আনছেন। এ ছাড়া তারা সরকারিভাবে কী কী সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে এগুলোর তৈরি করছে ছাত্রদল। সামাজিক মাধ্যমে ছাত্রদলকে টার্গেট করে বক্তব্য-বিবৃতি দিলে তারাও ছেড়ে কথা বলবেন না। তবে পরিস্থিতি এখনও অনুকূলে নয় বলে মাঠে মুখোমুখি অবস্থানে যাবে না ছাত্রদল।
দুদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ ডিসি অফিসে, এসপি অফিসে গিয়ে ছাত্ররা বসে থাকে। তারা যদি ডিসিকে নির্দেশ করে, এসপিকে নির্দেশ করে, ডিসি-এসপির ঘরে গিয়ে বসে থাকে, তা হলে আইন প্রয়োগ হবে কী করে? ছাত্রদের কাজ তো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তদারকি করা নয়।
নির্বাচনকে পিছিয়ে নিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নানা ধরনের গোলমাল করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, যারা আয়নাঘরে দীর্ঘদিন থেকে, জেলে থেকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছে। তারা যেন গোলমাল শুরু করে নির্বাচনকে বিলম্বিত না করে।
‘এনসিপি’ গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার একটা পরিকল্পনা এই সরকারের কাছে পেশ করেছে জানিয়ে ফারুক বলেন, সরকারকে বলব, আমি গণপরিষদ বুঝি না, আমি বুঝি একটাই- বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাক্সক্ষা, একটি নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সময়ের আলোকে বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যে কেউ যেকোনো দাবি করতে পারে। কিন্তু জনগণ কতটা যৌক্তিক মনে করে সেটিই মুখ্য বিষয়। আমরা সরকারকে বলব জনগণ কি চায় বোঝার চেষ্টা করুন। যতক্ষণ না পর্যন্ত দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ততক্ষণ অহেতুক বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। মানুষ ভরসা রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, ছাত্রদের কর্মকাণ্ড আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের কিছু দাবি ও পদক্ষেপ নিয়ে সতর্ক আছি। তাদের বলব জনগণের কাছে যেতে। রাজনীতি করতে হলে জনগণের ভাষা বুঝতে হবে। তাদের ভাষায় কথা বলতে হবে। জনগণ দুর্বোধ্য ভাষা পছন্দ করেন না।