
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ এবং সেসময় দেশের পরিস্থিতি কেমন ছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বিশাল এবং অভূতপূর্ব। বিগত সরকার দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলেছে। বাংলাদেশ এখন আরেকটি গাজা। বিগত সরকার এই দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান, নীতি, জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ধ্বংস করে ফেলেছে।
সোমবার (১০ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, শেখ হাসিনার পতন এবং তার স্বৈরাচারী কাঠামো ধসে পড়ার পর ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব নেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি। পুলিশের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা সরকার পতনের পর থেকে এখনও কাজে যোগ দেননি।
পুলিশের যথাযথ সক্রিয়তার অভাবে বাংলাদেশের সর্বত্র সব সবধরনের অপরাধ বাড়ছে, গোষ্ঠীবদ্ধ অপরাধও (গ্যাং ক্রাইম) বাড়ছে ব্যাপক হারে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুরোধেই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন। তিনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন পুরো বাংলাদেশ ছিল রক্তে রঞ্জিত।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে গেছেন। এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত একটি দেশ, আরেকটি গাজার মতো। তবে গাজার মতো সেখানে ভবন ধ্বংস করা হয়নি বরং পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধসে পড়েছিল।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা ব্যাপক নৃশংসতা ঘটান। তবে বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতার প্রতিশোধের ভয়ে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন।
শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হাসিনার শাসনামলে কোনো সরকার ছিল না, ছিল দস্যুদের একটি পরিবার। সরকারপ্রধানের যে কোনো আদেশই তখন সম্পন্ন করা হতো। বিষয়টা এরকম যে, কেউ সমস্যা তৈরি করছে? আমরা তাদের উধাও করে দেব।
ভারতে হাসিনার আশ্রয় নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভারত তাকে আশ্রয় দিলে তা সহ্য করা হবে, কিন্তু ‘তিনি আমাদের করা সবকিছু বাতিল করার চেষ্টা করতে ভারতকে তার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া, বিপজ্জনক। এটি দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলে’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে হাসিনার শাসনামল ছিল স্বৈরাচার, সহিংসতা এবং দুর্নীতির অভিযোগে ভরপুর। জুলাই ও আগস্ট মাসে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর সমাপ্তি ঘটে। জাতিসংঘের মতে, ওই সময় বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।