
বর্তমান পৃথিবীতে ঘোড়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে। এর কদরও কমেছে মানুষের কাছে। কয়েক শতাব্দী আগেও ঘোড়া ছিল মানুষের যুদ্ধক্ষেত্র ও ভ্রমণের অন্যতম সঙ্গী। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা ঘোড়ায় চড়েছেন। ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ বা জিহাদ করেছেন। সেসময় যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তিশালী ও ক্ষীপ্রতাসম্পন্ন ঘোড়া যুদ্ধের মোড় পর্যন্ত ঘুরিয়ে দিত। সেসময় রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন সাহাবিদের। কারণ এটি জিহাদের কাজে ব্যবহার করা হতো। হাদিসে আছে, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, ২/৫৩১; সুনানে নাসায়ি, ৮/২০৬)
তবে পরে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। হাদিসে আছে, জাবের (রা.) বলেন, ‘খায়বারের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন, ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৫২০)
বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুল কাবির বললেন, ‘আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানুষের জন্য হালাল ও হারাম খাদ্যের তালিকা সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হালাল করেছেন তিনি। অনেকে ঘোড়ার গোশত খেতে পছন্দ করেন না; এটা তার ব্যাপার। কারও পছন্দের ওপর শরিয়ত মাসয়ালা দেয় না। ফিকহার কিতাবে ঘোড়ার গোশত খাওয়া হালাল বলা হয়েছে। তবে এটা কোন পর্যায়ের হালাল, তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। কেউ বলেছেন, ঘোড়ার মাংস খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল। কেউ বলেছেন, খাওয়া যাবে, তবে অপছন্দনীয়।’
বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুল কাবির। ছবি: সংগৃহীত
সাহাবিরা নবীজি (সা.)-এর সময় ঘোড়া জবাই করে খেয়েছেন। আসমা (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে ঘোড়া জবাই করেছি ও গোশত খেয়েছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৫১৯)
ঘোড়ার গোশত হালাল। খাওয়া জায়েজ আছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ঘোড়ার গোশত খাওয়া মাকরুহ বলেছেন। তিনি কারণ হিসেবে দেখেছেন, গণহারে ঘোড়ার গোশত খেলে জিহাদের সময় এর সংকট দেখা যাবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫-২৯০)
‘ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল। এটাকে হারাম বলার কোনো সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসময়ে ঘোড়ার মাংস খেতে নিষেধ করেছেন, তখন সেটি যুদ্ধ বা জিহাদে ব্যবহার করা হতো। সেসময় গণহারে এর মাংস খেলে ঘোড়া পাওয়া মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াত।’ বললেন খতিব মুহাম্মাদ সাইফুল কাবির।
যেসব প্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ বা হারাম
প্রাণী দুই ধরনের—স্থলজ প্রাণী ও জলজ প্রাণী। জলজ প্রাণীর মধ্যে মাছ ছাড়া সব প্রাণী খাওয়া হারাম।
স্থলজ প্রাণী তিন প্রকার। যথা—এক. ওই সব প্রাণী, যার কোনো রক্ত নেই, যেমন- মশা-মাছি, মাকড়সা, পিঁপড়া, টিড্ডি ইত্যাদি। দুই. প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট প্রাণী নয়। যেমন- সাপ, ইঁদুর ইত্যাদি। উভয় প্রকার প্রাণীর মধ্যে টিড্ডি ছাড়া বাকি সব ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট হওয়ায় সেগুলো খাওয়া হারাম। তিন. ওই সব প্রাণী, যা প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট হয়, যেমন- পাখি ও অন্যান্য চতুষ্পদ জন্তু। সেগুলো আবার দুই প্রকার : প্রথমত, পাখি। পাখির মধ্যে যেসব পাখি থাবা ও নখরবিশিষ্ট হয়। যেমন—চিল, শকুন, বাজ, ঈগল ইত্যাদি খাওয়া মাকরুহে তাহরিমি মানে খাওয়া নিষেধ।
প্রথমত, যেসব পাখি ঠোঁটের সাহায্যে খায়, সেগুলো খাওয়া হালাল। এর মধ্য থেকে যেগুলো নাপাকি খায়, সেগুলো মাকরুহ। তবে বেশিরভাগ খাবার যদি হালাল খায়, তবে হালাল।
দ্বিতীয়ত, পশু। হিংস্র পশু, যা থাবা মেরে ও আক্রমণ করে খায়, সেসব পশু খাওয়া হারাম। যেমন- সিংহ, বাঘ, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, হাতি ও বানর ইত্যাদি। অহিংস্র পশুর মধ্যে যেগুলোর পুরো শরীর পাক, সেগুলো খাওয়া হালাল। যেমন- গৃহপালিত গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা। তেমনি বন্যপশুর মধ্যে বন্য গরু, হরিণ, খরগোশ, বন্য গাধা। আর যেগুলোর পূর্ণ দেহ নাপাক, সেগুলো হারাম। যেমন- শূকর।
সব ধরনের ঘোড়া ও গৃহপালিত গাধা খাওয়া মাকরুহ। হালাল প্রাণীর মধ্যে যেসব প্রাণী সব সময় নাপাক খায়, সেগুলো খাওয়াও মাকরুহ। খাবারের অভাব মেটাতে এবং জীবন বাঁচাতে চিকিৎসার প্রয়োজনে হারাম প্রাণীও খাওয়া ও ব্যবহার করা যাবে।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক