
ইসলামে বিবাহবহির্ভূত যেকোনো যৌন সম্পর্কই অপরাধ ও হারাম। ব্যভিচারী ও ধর্ষক উভয়ের জন্য কঠোর শাস্তির বিধানও রয়েছে। কোরআন ও হাদিসে ব্যভিচারের কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ৩২)
ব্যভিচারের সমগোত্রীয় অথচ তার চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ হলো ধর্ষণ। ইসলামে ব্যভিচারের পাশাপাশি ধর্ষণও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এক পক্ষ থেকে ব্যভিচার সংঘটিত হয়। আর অন্য পক্ষ হয় নির্যাতিত। নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। শুধু ধর্ষকের শাস্তি হবে। হাদিসে আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে এক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি; তবে ধর্ষককে হদের শাস্তি দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৯৮)
ধর্ষকের শাস্তি
ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারী নারী ব্যভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে ১০০ করে বেত্রাঘাত কোরো। আল্লাহর বিধান কার্যকরে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সুরা নুর, আয়াত: ২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশ বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড)।’ (সহিহ মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ধর্ষককে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আলকামা ইবনে ওয়াইল (রহ.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘একবার এক ব্যক্তি এক নারীর ওপর জোরপূর্বক অত্যাচার করেছিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ধর্ষককে হত্যা করতে হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৪৫৪)
শাস্তি প্রয়োগের জন্য চার সাক্ষী
ধর্ষণের প্রমাণ হিসেবে চারজন সাক্ষীর উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে ইসলামে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা সতীসাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ দেয়, অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত না করে, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কোরো। আর তাদের সাক্ষ্য কখনো গ্রহণ কোরো না, এরাই সত্যত্যাগী।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৪)। তবে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ডিএনএ টেস্টও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
ব্যভিচার করলে কি ঈমান চলে যায়?
ব্যভিচারী ও ধর্ষকের ঈমান থাকে না। ওই অবস্থায় তার থেকে ঈমান চলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। যখন কেউ মদপান করে, তখন সে মুমিন থাকে না। কেউ চুরি করার সময় মুমিন থাকে না এবং কোনো ছিনতাইকারী এমনভাবে ছিনতাই করে যে, মানুষ তার দিকে অসহায় তাকিয়ে থাকে; তখন সে (ছিনতাইকারী) মুমিন থাকে না।’(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭৭২)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ব্যভিচারীর ঈমান তার থেকে বের হয়ে যা। তার মাথার ওপর ছায়ার মতো হয়ে থাকে। যখন সে এ কাজ থেকে বিরত হয়, তখন ঈমান তার কাছে ফিরে আসে।’ (সুনানে আবু দাউদের সূত্রে মেশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৬০)। এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, ‘তার ঈমান পূর্ণ থাকে না। তার জন্য ঈমানের আলো থাকে না। (সহিহ বুখারির সূত্রে মেশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৫৪)