ই-পেপার মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫
মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫

স্বস্তি-অস্বস্তির রোজার বাজার
প্রকাশ: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ৯:২৪ এএম  (ভিজিট : ১৫২)

প্রথম রোজার দিন ভোগ্যপণ্যের বাজারে যে রকম অস্থিরতা ছিল, রোজার এক সপ্তাহ পর সে অস্থিরতা অনেকটাই কেটেছে। অধিকাংশ পণ্যেই স্বস্তি নেমে এসেছে। তবে বাজারে উচ্চ মূল্যের কারণে এখনও কিছু পণ্যে ক্রেতার অস্বস্তি রয়েছে। যেমন বাজারে পেঁয়াজ, আলু ও টমেটোসহ অধিকাংশ সবজি জাতীয় পণ্যের দাম একেবারে ক্রেতার নাগালে রয়েছে। রোজার আগের দিন ও প্রথম রোজার দিন বেগুনের কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় উঠেছিল। পণ্যটির দাম কমে ১০০ টাকার নিচে এলেও বেগুনে এখনও অস্বস্তি রয়েছে ভোক্তার। একই অবস্থা লেবুর ক্ষেত্রেও। আর বাজারে সয়াবিন তেল নিয়ে এখনও বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ভোক্তাকে।

গত বছরের রোজার সঙ্গে তুলনা করলে এই রোজায় অধিকাংশ পণ্যের দাম বেশ কম রয়েছে এখন। তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন থেকে আলু, কাঁচামরিচের মতো সব ধরনের পণ্যের দামই গত বছরের চেয়ে খানিকটা কম। বাজার বিশ্লেষক ও ভোক্তারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার অনেক পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলো যদি ঠিকমতো বাজার মনিটরিং করতে পারত তা হলে এবার বেগুন, লেবু ও ভোজ্য তেলের মতো কয়েকটি পণ্য ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে যেভাবে দাম বাড়িয়েছে, সেটি করতে পারত না।

এ মন্তব্য করে বাজার বিশ্লেষক ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এসএম নাজের হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, গত বছরের রোজার বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের রোজার বাজার কিছুটা স্বস্তিদায়ক ক্রেতার জন্য। তবে এবার ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা যেভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে, সেটি মেনে নেওয়ার মতো না। দেশে কিন্তু প্রচুর ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়েছে কিন্তু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে ঠিকমতো সরবরাহ না করে। ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা আগের সরকারের আমলে যেভাবে দেশের মানুষকে জিম্মি করে দাম বাড়িয়েছেÑএবারও একই কাজ করেছে। সরকারও এই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, এ জন্য তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র রমজান শুরুর দুদিন আগে বাজারে বেড়েছিল বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম। এক সপ্তাহ বাদে এখন সেসব পণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে। সেসব পণ্য ছাড়াও এবার রোজায় অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল শুরু থেকেই। সবমিলিয়ে বাজারে তেমন বড় কোনো অসংগতি নেই।

গতকাল রাজধানীর আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লেবু-শসা বা বেগুনের মতো বাড়তি চাহিদার পণ্যগুলোর দামও কমছে। রোজার শুরুতে বেগুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকায় নেমেছে। তবে বেগুন এখনও ক্রেতার নাগালের মধ্যে আসেনি। গত বছর উত্তাপ ছড়ানো পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। খুচরা পর্যায়ে দেশি ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। যেখানে গত বছর এ সময় বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হয়েছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। একইভাবে আলুর দাম অর্ধেক কমে এখন ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

দুই-তিনটি ছাড়া অন্য সব ধরনের সবজির দাম ক্রেতাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে আছে। এ ছাড়া বাজারে ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০, করলা ১২০, ক্ষীরা ৫০, শসা ৪০, পটোল ১২০ ও পেঁপে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি প্রতি পিস ৪০, বাঁধাকপি ৩০, গাজর প্রতি কেজি ৩০, কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০, ঢ্যাঁড়শ ১০০, শিম ৩০ থেকে ৪০, মিষ্টি কুমড়া ৩০ ও টমেটো ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। জালি কুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০, আলু প্রতি কেজি ৩০ ও লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০, লেবু প্রতি হালি ৮০ থেকে ১০০ ও ধনেপাতা প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভোজ্য তেলের বাজারে পুরোপুরি সংকট না কাটলেও আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের বাজার। দোকানে এখন কম-বেশি বিভিন্ন কোম্পানির সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখনও বেশিরভাগ জায়গায় দৃশ্যমান হয়নি সয়াবিনের ৫ লিটারের বোতল।

বিভিন্ন মুদি দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপারশপ ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ জায়গায় ৫০০ মিলিগ্রাম ও ১ এবং ২ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল কম-বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ব্ল্যাকআউটের মতো যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল সেটি এখন তেমন নেই। প্রায় দোকানেই ক্রেতারা সয়াবিন তেলের বোতল চাইলে পাচ্ছেন। তবে এখনও অদৃশ্য ৫ লিটারের বোতল।

দোকানিরা জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। পরিবেশকরা চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ আগের তুলনায় বাড়িয়েছেন। ফলে তেলের বোতল আগের তুলনায় মার্কেটে বেড়েছে। তবে এখনও ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়মিত পরিবেশকদের চাহিদা জানানোর পরও তারা কালেভদ্রে সরবরাহ করছেন। কয়েক দিন পরপর ২ থেকে ৫টি করে বোতল দিচ্ছেন। সেগুলো আবার ক্রেতারা সঙ্গে সঙ্গেই কিনে নিয়ে যান।

ক্রেতারা বলছেন, শুধু রোজা উপলক্ষে অসাধু ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়াতে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। যা ভোক্তাদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ ও ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। এ সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বাজার বিশ্লেষকরা সিন্ডিকেটের কারসাজি, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করেন।

বাজারগুলোতে আদা ১৪০ থেকে ১৮০, রসুন দেশি ১২০ এবং ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০, দেশি মসুর ডাল ১৪০, মুগ ডাল ১৮০, ছোলা ১১০, খেসারির ডাল ১৩০, মিনিকেট চাল ৮২ থেকে ৯০ ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৪০ টাকা কমে সোনালি কক মুরগি ২৭০ টাকায় এবং সোনালি হাইব্রিড ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাল লেয়ার মুরগি ৩০০, সাদা লেয়ার ২৯০, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৯০ ও দেশি মুরগি ৫৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

স্থিতিশীল রয়েছে মাছের বাজার : চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১৭০০ ও এক কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ২২০, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০, মলা ৫০০, বাতাসি টেংরা ১৩০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, কাচকি মাছ ৫০০, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০, রূপচাঁদা ১২০০, বড় বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০, দেশি কই ১২০০, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, বেলে মাছ ৮০০, কোরাল মাছ ৭০০, কাজলি মাছ ৮০০ ও কাকিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭২০ থেকে ৭৮০, গরুর কলিজা ৭৮০, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ ও খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০, হাঁসের ডিম ২২০ ও দেশি মুরগির ডিম ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close