
ডিজিটাল যুগে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হোয়াটসঅ্যাপ। একসময় এটি শুধু ব্যক্তিগত ম্যাসেজিং অ্যাপ হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে এটি ব্যবসা, ব্র্যান্ডের প্রচার-প্রচারণা এবং বৃহত্তর শ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য একের পর এক নতুন নতুন ফিচার নিয়ে আসছে মেটা। এরই ধারাবাহিকতায় হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল নামক নতুন ফিচারটি এই যোগাযোগের ধারাকে আরও সহজ এবং কার্যকরী করে তুলেছে। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এই চ্যানেল থেকে প্রচারণার পাশাপাশি আয়ও করা যায়।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল কী
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল মূলত একটি একমুখী যোগাযোগমাধ্যম, যার মাধ্যমে আপনি অডিয়েন্স বা গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন। এটি বিশেষত ব্যবসা, মার্কেটিং এবং সংবাদ প্রচারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি টেক্সট, ছবি, ভিডিও, পিডিএফ, অডিও বা লিংক শেয়ার করতে পারেন, যা আপনার বার্তা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পৌঁছে দেয়।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে কতজন লোক আপনার কনটেন্ট দেখেছে, কতবার শেয়ার হয়েছে, কী ধরনের কনটেন্ট বেশি জনপ্রিয় ইত্যাদি সম্পর্কে ডেটা দেখা যায়। এই অ্যানালিটিক্স কনটেন্ট কৌশল নির্ধারণ এবং অডিয়েন্সের পছন্দ বুঝতে সাহায্য করবে। ফলোয়াররা যখন আপনার চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করবে, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট পাবেন। এই নোটিফিকেশনের মাধ্যমে নতুন তথ্য, অফার বা সংবাদ দ্রুত পৌঁছানো যায়।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল নিরাপত্তার জন্য এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে। এর মানে হলো, কনটেন্ট সুরক্ষিত থাকবে এবং কোনো তৃতীয় পক্ষ তা দেখতে পারবে না।
আয়ের সুযোগ
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে আয় করার কয়েকটি উপায় রয়েছে। তা হলো—
পণ্য বা সেবা প্রচার: চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি আপনার পণ্য বা সেবা প্রচার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, নতুন কোনো প্রোডাক্ট বাজারে এলে সেই সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করতে পারেন। নিয়মিত অফার এবং ডিসকাউন্ট জানিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারবেন। এভাবে পণ্য বা সেবা সরাসরি চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারদের কাছে পৌঁছাবে, যা বিক্রির পরিমাণ বাড়াবে। এ ছাড়া নিজের তৈরি ছবি, ক্র্যাফট, ডিজিটাল পণ্যও এর মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন।
ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ: হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল চালানোর মাধ্যমে আপনি অন্য ব্র্যান্ড বা কোম্পানির কাছ থেকে স্পনসরশিপ বা পেইড প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। বিশেষ করে যদি আপনার চ্যানেলের বড় অডিয়েন্স থাকে, তাহলে এটি আরও কার্যকর হতে পারে।
পেইড সাবস্ক্রিপশন বা প্রিমিয়াম কনটেন্ট: আপনি যদি বিশেষ কনটেন্ট বা এক্সক্লুসিভ অফার প্রদান করেন, তাহলে এর জন্য পেইড সাবস্ক্রিপশন চালু করতে পারেন। গ্রাহকেরা এই সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে বিশেষ কনটেন্ট বা এক্সক্লুসিভ অফার পাবে, যা আপনার আয় বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: যদি আপনি অন্য কোনো পণ্য বা সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে প্রোমোশন করে কমিশন অর্জন করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নামে পরিচিত।
কোর্স বা ওয়েবিনার সেলিং: চ্যানেলের ক্রিয়েটররা যেকোনো শিক্ষণীয় বিষয়ে অনলাইন ওয়ার্কশপ ও ক্লাস বা প্রশিক্ষণ হোস্ট করতে পারে। এর বিনিয়মে ফি চাইতে পারেন।
যেভাবে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল খুলবেন
১. হোয়াটসঅ্যাপ চালু করুন।
২. এবার নিচের দিকে থাকা ‘আপডেটস’ ট্যাবে যান।
৩. এখন ওপরের দিকে থাকা ‘তিন ডট’ আইকন ট্যাপ করুন। মেনু থেকে ‘ক্রিয়েট চ্যানেল’ অপশনে ট্যাপ করুন।
৪. এরপর ‘কনটিনিউ’ অপশনে ট্যাপ করুন।’
৫. এখন চ্যানেল নেম এর জায়গায় পছন্দ মতো চ্যানেলের নাম দিন।
৬. এখন ‘ডিসক্রাইব ইউওর চ্যানেল’-এর জায়গায় চ্যানেলটি কী বিষয়ে তা টাইপ করুন।
৭. এবার চ্যানেলের জন্য পছন্দমতো আইকোন যুক্ত করতে ওপরের দিকে থাকা ‘ক্যামেরা’ আইকোন নির্বাচন করুন। এর ফলে নিচের দিকে একটি মেনু চালু হবে। মেনুতে ক্যামেরা, গ্যালারি, ইমোজি অ্যান্ড স্টিকার এবং সার্চ ওয়েবের মতো অপশন থাকবে। এখন অপশন থেকে পছন্দমতো আইকোন নির্বাচন করুন। এখন ‘ডান’ অপশন নির্বাচন করুন।
৮. এবার নিচের দিকে থাকা ‘ক্রিয়েট চ্যানেল’ অপশনে ট্যাপ করুন। এর মাধ্যমে আপনার চ্যানেলটি তৈরি হবে।
চ্যানেলটি শেয়ার করুন
চ্যানেলটি তৈরি হলে এরপর অডিয়েন্স বা গ্রাহকদের কাছে চ্যানেলটি শেয়ার করতে হবে। এ জন্য নিচের ধাপগুলো তৈরি করুন।
১. হোয়াটসঅ্যাপে আপডেট পেজে যান।
২. এখানে নিজের চ্যানেলটি দেখতে পারবেন। এখন চ্যানেলের নামেরও ট্যাপ করুন।
৩. এবার ওপরের দিকে থাকা লিংক আইকোনে (তিন ডট মেনু পাশে) ট্যাপ করুন। ফলে একটি পেজ চালু হবে।
৪. পেজে একটি লিংক দেখা যাবে। লিংকটির ওপর ট্যাপ করে তা কপি করুন।
এখন এই লিংকটি হোয়াটসঅ্যাপে অন্য কন্টাক্টদের সঙ্গে শেয়ার করুন বা ইউটিউব চ্যানেলের বায়োতে বা যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারবেন।