ই-পেপার মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫
মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫

সঞ্চয়পত্র কিনছে কম ভাঙছে বেশি
প্রকাশ: শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫, ২:১৪ পিএম  (ভিজিট : ১৮০)

একদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে না আয়। এর ফলে প্রতি মাসেই ধারকর্যনির্ভর হয়ে পড়ছেন দেশের সাধারণ মানুষের জীবন। এই অবস্থার মধ্যে সাধারণ মানুষ নিজের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। আর এ কারণে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর হার বেড়েছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সাধারণত অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন দেশের সাধারণ মানুষ, কিন্তু সুদ বেশি হওয়ার পরও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ। অপরদিকে সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলার প্রবণতা বেড়েছে। গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র কেনার হার ২৭ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৩০ হাজার ১০৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিক্রি হয়েছিল ৪১ হাজার ২৯০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। তার মানে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭ শতাংশ।


সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সেই হারে আয় বাড়ছে না। সে জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেক ব্যাংক গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না। এই আস্থাহীনতার কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙছেন অনেক গ্রাহক। অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক হিসাব জব্দ ও স্থগিতের মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেকেই সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভেঙে ফেলার পরিমাণ বেশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩২ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙেন মানুষ। তার মধ্যে অক্টোবরে ৯ হাজার ৮৩ কোটি, নভেম্বরে ৮ হাজার ১৫০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ৮ হাজার ৪৬১ কোটি, অর্থাৎ তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন গ্রাহকরা। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রি ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমে গেছে। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।


এদিকে বিক্রি কমে যাওয়ার অর্থ হলো, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া কমছে। এতে সরকারকে সুদও কম গুনতে হবে। তবে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধের জন্য সরকারকে এখনও বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে।

শুধু তা-ই নয়, সঞ্চয়কারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গত জানুয়ারিতে বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বেড়ে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৭৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকার। তার বিপরীতে গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন ৯৯ হাজার ৯৭২ কোটি টাকার। অর্থাৎ, নিট বিক্রি ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা কমেছে। তার মানে, সরকার গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এক টাকাও পায়নি। নিট বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নেওয়া ঋণের পুঞ্জীভূত পরিমাণ ২০২৪ সালের জুন শেষে ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকায়।


আরও সংবাদ   বিষয়:  সঞ্চয়পত্র   বাংলাদেশ ব্যাংক  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close