ই-পেপার শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫

অসিয়তের গুরুত্ব ও ১০ হারাম কাজ
প্রকাশ: বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫, ৫:৫০ পিএম  (ভিজিট : ৮৭৬)

আজ পঞ্চম তারাবি। পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদার ৮৩ থেকে সুরা আরাফের ১১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। সপ্তম পারা এবং অষ্টম পারার প্রথমার্ধ—মোট দেড় পারা। তারাবির এ অংশে হালাল খাবারের গুরুত্ব, সত্যানুরাগীদের প্রশংসা, মদ ও জুয়া শয়তানের কাজ, অহেতুক প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ, শপথ ভাঙার কাফফারা, ভ্রমণ, অসিয়ত, পৃথিবী সৃষ্টি ও ইসা (আ.)-এর অলৌকিক ঘটনা, কোরআন নাজিলের প্রয়োজনীয়তা, কাফেরদের শাস্তি, আল্লাহর পরিচয়, মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস,  দুনিয়া-আখেরাতের জীবন, আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস ও ইমানের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। 

হালাল খাবারের গুরুত্ব
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট বস্তু খাও এবং যে আল্লাহর প্রতি তোমরা ইমান রাখো, তাঁকে ভয় করে চলো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮৮)। হালাল খাবার হারাম মনে করলে ইমান থাকে না। যদি কেউ হালাল খাবার বর্জনের শপথ করে, তার জন্য শপথ ভেঙে সে খাবার খাওয়া ওয়াজিব। শপথ ভাঙার কাফফারা দিতে হবে। হালাল খাবার গ্রহণ ও হারাম থেকে বেঁচে থাকা ইমানি দায়িত্ব। হালাল উপার্জনের আহার মানুষকে পবিত্র করে। স্বভাব-চরিত্র সুন্দর করে। সৎসাহসী করে। ইবাদত কবুলের পূর্বশর্তও হালাল খাবার গ্রহণ। হারাম খাবার খেয়ে ইবাদত করলে কবুল হয় না। আল্লাহকে ডাকলে তিনি শোনেন না। 

কসমের বিধান
কসম মুখের কাজ; শুধু মনের কাজ নয়। তাই কেউ কোনো কিছুর ইচ্ছা করে মুখে উচ্চারণ করার আগ পর্যন্ত কসম সংঘটিত হয় না। কসমকারী অতীত বা বর্তমানের কোনো একটি বিষয়ে নিজের ধারণা অনুযায়ী সত্য মেনে কসম করা অথচ বিষয়টি বাস্তবে তার ধারণামাফিক নয়; এ জাতীয় কসমের শাস্তি নেই, তবে গুনাহ আছে। যে কসম ভবিষ্যৎ-সম্পর্কিত এবং তা পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি, ওই কসম করলে কাফফারা দিতে হবে, অন্যথায় গুনাহ হবে। কসমের কাফফারা হলো, ১০ মিসকিনকে দু-বেলা তৃপ্তিসহকারে খাবার খাওয়ানো অথবা তাদের এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে কাফফারা আদায়ে সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিনটি রোজা রাখা। (কিতাবুল আসল, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২৩৮ ও ১৯৬; আলমাবসুত, সারখসি : খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ১৫৭)। কসম একমাত্র আল্লাহ তাআলার নামেই করা যায়। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে কসম করা নাজায়েজ।

সচেতন মুমিনের বৈশিষ্ট্য অসিয়ত করা
অসিয়ত হলো জীবিত থাকা অবস্থায় উত্তরসূরিদের প্রতি নির্দেশনা। অসিয়ত করা সচেতন মুমিনের গুণ। অসিয়তের জন বলপ্রয়োগ করা যাবে না। অসিয়ত হতে হবে ব্যক্তির পার্থিব উপার্জন থেকে। ওয়ারিশদের ঠকানো কিংবা তাঁদের বঞ্চিত করার জন্য অসিয়ত হারাম। 

সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা যাবে না। মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধ, দাফন-কাফন, জানাজার নামাজ পড়ানো, সম্পত্তির বাঁটোয়ারা, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ ও জনকল্যাণমূলক যেকোনো কাজের বিষয়ে অসিয়ত করা যাবে। অসিয়ত করার সময় দুজন সাক্ষী রাখা জরুরি। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, যখন তোমাদের কারও কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন অসিয়তকালে তোমাদের মধ্য থেকে দুজন (ন্যায়পরায়ণ) ব্যক্তি সাক্ষী হবে।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১০৬)। নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজসহ আল্লাহ এবং বান্দার যেসব হক অনাদায় থেকে যায়, সে সম্পর্কে অসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব। (দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৫/৩১৫)


ইসা (আ.)-এর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ
আল্লাহ তাআলা ইসা (আ.)-কে দেওয়া অনুগ্রহের কথা আলোচনা করেছেন এ সুরার ১১০ থেকে ১১৮ আয়াতে। যেমন- পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁকে সাহায্য করা, শিশুকালে কথা বলতে পারা, কিতাব প্রদান, প্রগাঢ় জ্ঞান, তাওরাত ও ইনজিলের শিক্ষাদান, কাদামাটি দিয়ে প্রতিকৃতি বানিয়ে তাতে আল্লাহর আদেশে ফুঁ দিলে তা পাখি হয়ে যাওয়া এবং আল্লাহর আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করে দেওয়া, মৃতদের জীবিত করে ফেলা ইত্যাদি।

সুরা আনআমের নামকরণ
মক্কায় অবতীর্ণ সুরা আনয়াম কোরআনের ষষ্ঠ সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ১৬৫। আনআম অর্থ জীবজন্তু। এ সুরায় জীবজন্তু-সম্পর্কিত আলোচনা থাকায় এর নাম হয়েছে আনআম। 

ভ্রমণে উৎসাহিত করেছেন আল্লাহ
ভ্রমণে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় মেলে। সৃষ্টিজীবের বৈচিত্র্য আর পৃথিবীর আশ্চর্য সুনিপুণ সৌন্দর্য দেখে বেলাশেষের সূর্য ডোবার মতো মাথা নত হয়ে যায় প্রভুর কাছে। পৃথিবীজুড়ে আছে নানা রঙের নানা গঠনের মানুষ, বিচিত্র ভাষা এবং কত রকম দেশ আর তার বহুধর্মী সৌন্দর্য। কত বৈচিত্র্য, কত সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে বিশ্বের অলি-গলি আর পাড়া-মহল্লায়, তা দেখে বিমোহিত হয় না এমন মানুষ মেলা ভার। দুনিয়ায় আল্লাহর এই সৃষ্টি, সৌন্দর্যের বিপুল আয়োজন, ভাঙা-গড়ার খেলা; এসব থেকে জীবনের জন্য শিক্ষা নিতে হবে। আল্লাহ কোরআনে ১৩ বারের বেশি ভ্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘বলে দিন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো। অতঃপর দেখ, মিথ্যা আরোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে?’ (সুরা আনয়াম, আয়াত : ১১)

১০ হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ
সুরা আনআমের ১৫১ থেকে ১৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মানুষকে ১০টি কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ করেছেন। যথা—

১. আল্লাহর সঙ্গে শিরক 
২. মা-বাবার সঙ্গে অসদ্ব্যবহার
৩. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা 
৪. অশ্লীল কাজ
৫. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা
৬. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা 
৭. ওজনে কম দেওয়া
৮. সাক্ষ্য ও বিচারকাজে অন্যায়/অবিচার করা
৯. আল্লাহর সঙ্গে কৃত ইমানের ওয়াদা পূর্ণ না করা 
১০. আল্লাহর দেখানো পথ ছেড়ে ভিন্ন পথ বেছে নেওয়া


জীবন-মরণ আল্লাহর জন্য
আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবরাহিম (আ.)-কে জীবনের উদ্দেশ্য শিক্ষা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘বলো, আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ (সবকিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)।’ (সুরা আনয়াম, আয়াত : ১৬২)
মুসলমানদের মনে রাখতে হবে, ‘আমি আল্লাহর জন্য। আমার সবকিছু আল্লাহর জন্য নিবেদিত। আমার হাঁটা-চলা, খাবার গ্রহণ, নির্জনতা, সংসারÑসবকিছু আল্লাহর জন্য। প্রতিটি কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, এই কাজ আল্লাহর জন্য কিনা।’

মানব সৃষ্টির কথা সুরা আরাফে
২০৬ আয়াত বিশিষ্ট সুরা আরাফ মক্কায় অবতীর্ণ। এটি কোরআনের সপ্তম সুরা। আজকের তারাবিতে সুরা আরাফের ১১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। কোরআন নাজিলের উদ্দেশ্য, পূর্ববর্তী যুগে আল্লাহর কালাম যারা অস্বীকার করেছে তাদের পরিণতি, বর্তমানের অস্বীকারকারীদের সেই শাস্তি প্রদান, নবি-রাসুল প্রেরণ এবং মানব সৃষ্টির ইতিহাসের বিবরণ রয়েছে এই অংশে।

লেখক: আলেম ও লেখক


আরও সংবাদ   বিষয়:  তারাবি   আজকের তারাবি   তারাবির সারাংশ   প্রতিদিনের তারাবির সারাংশ   রোজা   রমজান  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close