ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫
বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫

দাম্পত্য কলহের সমাধান ও হারাম খাদ্যের তালিকা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫, ৫:২৮ পিএম আপডেট: ০৭.০৩.২০২৫ ৭:০২ পিএম  (ভিজিট : ২৮৭৪)

চতুর্থ দিনের খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার ৮৮ থেকে সুরা মায়িদার ৮২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। পঞ্চম পারার দ্বিতীয়ার্ধ এবং পুরো ষষ্ঠ পারা—মোট দেড় পারা। আজকের তারাবিতে বন্ধু নির্বাচনে নীতিমালা, মুনাফিকদের কূটচাল, মানুষ হত্যা, জিহাদ, মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক, মানুষের অধঃপতনের কারণ, ইসা (আ.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র, কুফর ও শিরক, চুরির শাস্তি, ইহুদিরা যে কারণে অভিশপ্ত, হিজরত,  হাবিল-কাবিলের কাহিনি ও সমাজসংস্কারের নানা দিকসহ নানা বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। 

হত্যার শাস্তি
সুরা নিসার ৯২ ও ৯৩ নম্বর আয়াতে হত্যাকাণ্ডের শাস্তি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। হত্যা তিন প্রকার—

১. ইচ্ছাকৃত হত্যা। 
২. ইচ্ছাকৃত হত্যার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এমন অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা, যা দিয়ে সাধারণত হত্যা করা হয় না। 
৩. ভুলবশত হত্যা। 

কেউ কাউকে ভুলবশত হত্যা করলে একটি দাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় দেবে। প্রথম ও দ্বিতীয় প্রকারের শাস্তি হলো, হত্যাকারী ১০০ উট নিহতের উত্তরাধিকারীদের দেবে। মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকারী জাহান্নামি হবে।

যুদ্ধের ময়দানেও নামাজে ছাড় নেই
ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা আবশ্যক। বড় কোনো সমস্যা ছাড়া জামাত ছাড়া নিষেধ। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (হে নবি) আপনি যখন তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন ও তাদের নামাজ পড়ান, তখন (শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার সময় তার নিয়ম এই যে) মুসলিমদের একটি দল আপনার সঙ্গে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র সঙ্গে রাখবে। অতঃপর তারা যখন সিজদা করে নেবে, তখন তারা তোমাদের পেছনে চলে যাবে এবং অন্য দল, যারা এখনো নামাজ পড়েনি, সামনে এসে যাবে এবং তারা আপনার সঙ্গে নামাজ পড়বে। তারাও নিজেদের আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র সঙ্গে রাখবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১০২)

চিন্তা করুন, যুদ্ধের ভয়ালতম ঘনঘটায় আল্লাহ নামাজে ছাড় দেননি। অনিশ্চিত মুহূর্তেও আল্লাহ বলেননি, নামাজ ছেড়ে দাও। নামাজ তো দূরের কথা; জামাত পর্যন্ত ছাড়তে বলেননি। তাহলে কি নামাজ ছাড়ার কথা চিন্তা করা যায়!

আল্লাহ বলে দিলেন প্রকৃত চোর কে!
কিছুদিন হলো নবিজি (সা.) হিজরত করে মদিনায় এসেছেন। সেসময় হজরত রেফাআহ (রা.) কিছু গমের আটা কিনে বস্তায় রেখে দিয়েছিলেন। বস্তার মধ্যে অস্ত্রশস্ত্রও রেখেছিলেন। আনসার গোত্রের বনি উবাইরাকের এক মুসলিম সেই বস্তা থেকে একটি বর্ম চুরি করে। তার নাম ছিল তমা ইবনে উবাইরাক। তমা বর্মের সঙ্গে লেগে থাকা আটা ছড়াতে ছড়াতে নিজ ঘর পর্যন্ত গেল। এরপর সেটি জায়েদ ইবনে সামিন নামক এক ইহুদির কাছে লুকিয়ে রাখল। তমার কাছে বর্মের অনুসন্ধান চাইলে সে বর্ম নেয়নি মর্মে আল্লাহর নামে শপথ করল। রেফাআহ বলল, আমি তার ঘরে আটার চিহ্ন দেখেছি। কিন্তু তমা ইবনে উবাইরাক শপথ করায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। সবাই মিলে আটার চিহ্নের পথ ধরে ওই ইহুদির ঘর পর্যন্ত পৌঁছাল। বর্মটি পেল সেখানে। ইহুদি বলল, তমা ইবনে উবাইরাক আমাকে এটি দিয়েছে। কাতাদাহ (রা.) নবিজির (সা.) কাছে এসে এটি যে বনি উবাইরাক ঘটিয়েছে, ব্যাপারটি জানালেন। তমা ইবনে উবাইরাকের এলাকাবাসী বনু জুফারের লোকেরা রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে কাতাদাহ ও রেফাআহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বললেন, চোরাই মাল ইহুদির ঘরে পাওয়া গেছে। আটার নিদর্শন ও ঘরে বর্ম পাওয়ার কারণে নবিজি (সা.) ইহুদিকে শাস্তি দেওয়ার মনস্থ করেন। তখন সুরা নিসার ১০৫ আয়াত নাজিল হয়, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি সত্য কিতাব; যেন আল্লাহ আপনাকে যা হৃদয়ঙ্গম করিয়েছেন তার মাধ্যমে মানুষের ভেতর ন্যায়বিচার করেন। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষে বিতর্ককারী হবেন না।’

দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা
১২৭ থেকে ১৩০ নম্বর আয়াতে মানুষের দাম্পত্য জীবনের নানা জটিল বিষয়ের সমাধান দেওয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রীতি ও ভালোবাসার। কখনো কোনো সম্পর্কে নানা জটিলতা তৈরি হয়। সংসার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। কোনোভাবেই যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধন আর ভালো না হয়, এ অবস্থায় স্ত্রী সমঝোতা ও বোঝাপড়ায় আপস করতে না পারলে বিচ্ছেদ করার অধিকার তার রয়েছে। প্রয়োজন হলে উভয় পক্ষ পারিবারিকভাবেও তা মীমাংসা করে নিতে পারবে। ইসলাম স্ত্রীকে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে বাধ্য করে না; বরং ইসলাম মনে করে, স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে সংসার টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। কোরআনে আছে, ‘যদি কোনো নারী তার স্বামী থেকে রূঢ়তা কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা পরস্পর আপস করে নিলে তাদের কোনো গুনাহ নেই, বস্তুত আপস করাই উত্তম।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১২৮)

হালাল-হারামের সুরা—সুরা মায়িদা
১২০ আয়াত বিশিষ্ট সুরা মায়িদা মদিনায় অবতীর্ণ। এটি কোরআনের পঞ্চম সুরা। মায়িদা অর্থ দস্তরখান। এ সুরায় দস্তরখান-সম্পর্কিত একটি ঘটনা থাকায় এ নাম রাখা হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘অবতীর্ণের হিসেবে সুরা মায়িদা শেষ সুরা। এ সুরায় হালাল-হারামের অনেক বিধিবিধান নাজিল হয়েছে এবং তিনটি কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৫৪৭)। এ সুরার ৩ নম্বর আয়াতটি বিদায় হজের প্রাক্কালে নাজিল হয়েছিল। এ আয়াতের মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবনবিধান হিসেবে মানুষের জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। 

যেসব খাদ্য হারাম
মানুষ যা কিছু খেতে পারবে না, এ সুরার ৩ নম্বর আয়াতে তার একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। যথাÑ
 ১. মৃত প্রাণী।
 ২. (প্রবাহিত) রক্ত।
 ৩. শূকরের মাংস।
৪. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে বলি দেওয়া পশু।
৫. যে প্রাণী গলা টিপে বা শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
৬. আঘাতে নিহত প্রাণী।
৭. উঁচু জায়গা থেকে পড়ে মৃত।
৮. সংঘর্ষে মৃত।
৯. যে পশুকে হিংস্র জন্তু খেয়েছে। তবে এসব প্রাণী জীবিত জবাই করতে পারলে খাওয়া যাবে। 
১০. মূর্তিপূজার বেদির ওপর বলি দেওয়া প্রাণী।
১১. জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করা খাদ্য। 

মানুষ হত্যা ভয়াবহ অপরাধ
মানুষ হত্যা হারাম। মানুষের ওপর চড়াও হওয়া নিষেধ। মানুষকে গালি দেওয়াও পাপ। আল্লাহ বলেন, ‘এ কারণেই বনি ইসরাইলদের এই বিধান দিলাম যে, নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কারণ ছাড়া যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল। যদি কেউ একটি প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩২)

কোরআনের এ আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বাস্তবতার প্রতি ইঙ্গিত করেছে। তা হলো, মানুষের সমাজ হলো পরিপূর্ণ একটি দেহের মতো। সমাজের প্রতিটি মানুষ হলো সেই দেহের একেকটি অঙ্গ। এই সমাজের একটি অঙ্গের কোনো রকমের ক্ষতি হয় তার প্রভাব অপর অঙ্গের ওপর সুস্পষ্ট হয়ে যায়। 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক


আরও সংবাদ   বিষয়:  তারাবি   আজকের তারাবি   তারাবির সারাংশ   প্রতিদিনের তারাবির সারাংশ   রোজা   রমজান   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close